পোর্ট এলিজাবেথেও সেই মহারাজই ‘মাথাব্যথা’ বাংলাদেশের

কেশব মহারাজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নেন ৭ উইকেটএএফপি

পোর্ট এলিজাবেথে কী হবে?

ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে আন্দাজে বলা কঠিন। তবে নিকট অতীত দেখে তো বলার চেষ্টা করাই যায়। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডারবানে প্রথম টেস্টে ২৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ দিনে মাত্র ৫৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। চার দিন ভালো খেলে শেষ দিনে ব্যাটিং এমন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে, তা বোধ হয় কারও কল্পনায়ও ছিল না। ইতিহাস বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তার আগে মাত্র একবারই ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। সে ম্যাচ শেষে পরের টেস্টেও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।

মহারাজ আবারও বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারেন
ছবি: এএফপি

সর্বশেষ সফরেই তা দেখা গেছে। ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুমে জয়ের জন্য ৪২৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯০ রানে অলআউট হয় মুশফিকুর রহিমের দল। হারতে হয় ৩৩৩ রানের ব্যবধানে। এরপর দ্বিতীয় টেস্টে ব্লুমফন্টেইনে দক্ষিণ আফ্রিকার এক ইনিংস ব্যাট করাই জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে ওঠে। ৪ উইকেটে ৫৭৩ রানে স্বাগতিকেরা প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৪৭ করে ফলোঅনে পড়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৭২ রানে অলআউট হয়ে হারতে হয় ইনিংস ও ২৫৪ রানে। অর্থাৎ অতীতের এই ইতিহাস আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য মোটেও ভালো না।

কিন্তু সেই বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সে দলটা গতি ও বাউন্সে খাবি খেলেও এবারের পরিস্থিতি আলাদা। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল। আর ডারবানে প্রোটিয়াদের পেস বিভাগ নয়, স্পিনারদের সামনে ভুগেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৪ উইকেট নিয়েছেন প্রোটিয়া স্পিনাররা। কেশব মহারাজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নেন ৭ উইকেট। ভালো কথা, পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্কে এই মহারাজ আবারও বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারেন।

ডারবানে প্রোটিয়াদের পেস বিভাগ নয়, স্পিনারদের সামনে ভুগেছে বাংলাদেশ
এএফপি

প্রমাণ দিচ্ছে পরিসংখ্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এই মাঠে মহারাজের উইকেটসংখ্যাই সর্বোচ্চ। কাগিসো রাবাদা আইপিএল খেলতে ভারতে থাকায় মহারাজকেই এ মাঠে প্রোটিয়া বোলারদের নেতৃত্ব দিতে হবে। ৫ টেস্টে ২৫ উইকেট নেওয়া রাবাদা প্রোটিয়াদের বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে এ মাঠে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন। রাবাদা যেহেতু টেস্ট সিরিজে নেই, তাই এই মাঠে ৫ ম্যাচে ১৭ উইকেট নেওয়া মহারাজকে ঠেকানোর পথই বের করতে হবে বাংলাদেশকে।

সে জন্য অ্যালান ডোনাল্ডের সহায়তা নিতে পারে বাংলাদেশ। সাবেক-বর্তমান মিলিয়ে সেন্ট জর্জেস পার্কে ৭ টেস্টে সর্বোচ্চ ৪০ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের এই ফাস্ট বোলিং কোচ। সেখানকার উইকেটের চরিত্র তাঁর নখদর্পণে থাকার কথা। ডোনাল্ড আগেই বলেছেন সেন্ট জর্জেসের ২২ গজের চরিত্র নিয়ে, ‘এই মাঠে বোলারদের সৃষ্টিশীল হতে হবে। খেলা এগিয়ে চলার সঙ্গে উইকেটও ফ্ল্যাট (ব্যাটিং সহায়ক) হয়ে আসে। পেস বোলিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি, অবশ্যই বৈচিত্র্য থাকতে হবে। কয়েক বছর আগে এখানকার ফ্ল্যাট পিচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডেল স্টেইন দেখিয়েছে, বল রিভার্স সুইং করলে কীভাবে উইকেট নিতে হয়। বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন হতে যাচ্ছে।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ মাঠে সর্বশেষ টেস্টেই ইনিংসে ৫ উইকেট আছে মহারাজের
ছবি: এএফপি

সেন্ট জর্জেস পার্কের বাতাসকে ব্যবহার করতে পারেন বোলাররা। তবে বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় পেসারদের সুইং পাওয়া কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে ম্যাচ এগিয়ে চলার সঙ্গে দায়িত্বটা স্পিনারদেরই বেশি। তবে ভুললে চলবে না, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে রিভার্স সুইং পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসার ইবাদত হোসেন। ডোনাল্ডের কথা ফলে গেলে সুবিধাটা পাওয়ার কথা ইবাদতের।

ডোনাল্ড ডেল স্টেইনকে যে ম্যাচের উদাহরণ টেনেছেন সেটি ২০১৪ সালে। চতুর্থ ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের জিতিয়েছিলেন সাবেক এই পেসার। তবে এই মাঠে শেষ দুই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু হেরেছে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের কাছে। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের সে টেস্টে দুই দলের পেসাররা মিলে নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট। স্পিনাররা নেন ৭ উইকেট। পরের বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে হারে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলাদেশের দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৪ উইকেট নিয়েছেন প্রোটিয়া স্পিনাররা
এএফপি

সে ম্যাচে দুই দলের পেসাররা মিলে নেন ১৩ উইকেট। আর স্পিনাররা নেন ১৫ উইকেট। মহারাজ ও ইংল্যান্ডের স্পিনার ডম বেস ইনিংসে নিয়েছেন ৫টি করে উইকেট। এমনকি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ‘পার্ট টাইম’ স্পিনার জো রুটও হাত ঘুরিয়ে ৪ উইকেট নেন। সেন্ট জর্জেস পার্কে শেষ ম্যাচের এই পরিসংখ্যান আমলে নিলে আজ মেহেদী হাসান মিরাজের পাশাপাশি অন্তত আরও একজন স্পিনারকে দলে রাখতেই পারে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। যেহেতু ম্যাচ এগিয়ে চলার সঙ্গে উইকেটও ফ্ল্যাট হয়ে আসে, আর বৈচিত্র্যে ঘাটতি থাকায় বাংলাদেশের পেসারদের সেখানে সফল হওয়া স্পিনারদের তুলনায় কঠিন। ইবাদত রিভার্স সুইং পেয়ে গেলে অন্য কথা। কিন্তু সে নিশ্চয়তা দিচ্ছে কে!

গত এক দশকের হিসাব অবশ্য বলছে, এ মাঠে পেসাররা বেশি উইকেট পেয়েছেন—১৬৮টি। একই সময়ে স্পিনাররা নিয়েছেন ৬২ উইকেট। কিন্তু হিসাবটা তিন বছরে নামিয়ে আনলেই পরিবর্তনটা টের পাওয়া যায়। গত তিন বছরের মধ্যে এ মাঠে স্পিনাররা নিয়েছেন ১৫ উইকেট, পেসাররা ১৩ উইকেট। আর হ্যাঁ, এই ১৩ উইকেটের মধ্যে মহারাজের শাসনও ভুললে চলবে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ মাঠে সর্বশেষ টেস্টেই ইনিংসে ৫ উইকেট আছে মহারাজের।