প্রতি তিন বলে ছক্কা মারেন আসিফ

দুর্দান্ত ফর্মে আছেন আসিফ আলীছবি: টুইটার

আসিফ আলী ছক্কা মারতে জানেন। পাকিস্তানের সাংবাদিকেরা জানেন। পাকিস্তানের ক্রিকেটকে অনুসরণ যাঁরা করেন, তাঁরাও জানেন। তিন বছর আগে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও জেনেছে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মাত্র ৬১১ বল খেলেছেন। এর মধ্যে ৪৭ বার বলকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়িয়েছেন আসিফ আলী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৫ ইনিংসে ব্যাট করার পরও ৪–এর চেয়ে ছক্কা বেশি আসিফের!

গতকাল আসিফের সে ক্ষমতা বিশ্বজুড়ে সব ক্রিকেট দর্শকের জানা হয়ে গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২ বলে ২৪ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। করিম জানাতের বলে ৬ বলের মধ্যে ৪ ছক্কায় সব হিসাব মিটিয়ে দিয়েছেন আসিফ। এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য এমনিতেই অবিশ্বাস্য খেলছেন আসিফ। বিশ্বকাপে প্রতিটি ছক্কা মারতে ৩ বলও দরকার হচ্ছে না আসিফের।

বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান ১০ উইকেটে জিতেছিল। এ কারণে সে ম্যাচে আর নামা হয়নি আসিফের। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা জটিল করে তুলেছিলেন পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু আসিফ নেমেই ম্যাচটা পাকিস্তানের দখলে এনেছেন। সেদিন মাত্র ১২ বলে ২৭ রান করেছিলেন। ১৩৫ রানের লক্ষ্যে এমন একটি ইনিংস যথেষ্ট ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে। সেদিন ৩টি ছক্কার সঙ্গে একটি ৪ মেরেছিলেন আসিফ।

কাল তো সেটাও ছাপিয়ে গেলেন। এবার ৪ ছক্কা মারতে তাঁর লাগল মাত্র ৭ বল। অর্থাৎ বিশ্বকাপে মাত্র ১৯ বল খেলেই ৭ ছক্কা আসিফের। মানে একেকটি ছক্কা মারতে ৩ বলও লাগছে না তাঁর। ছক্কা মারার দক্ষতার তাঁর ধারেকাছে নেই কেউ। বিশ্বকাপে অন্তত তিনটি ছক্কা মেরেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইসও সাত ছক্কা মেরেছেন। কিন্তু তাঁর এই ৭ ছক্কা এসেছে ৪৯ বলে। আফগানিস্তানের রহমানউল্লাহ গুরবাজের প্রতি ছক্কার জন্য ৯ বলের কম লাগছে। ৪৪ বল খেলেই ৫ ছক্কা তাঁর।

আসিফ (বাঁয়ে) টানা দুই ম্যাচে দলকে জেতালেন
ছবি: টুইটার

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি আট ছক্কা নামিবিয়ার ডেভিড ভিসার। আর এই ছক্কা মারতে তাঁর দরকার হয়েছে ৭৫ বল। অর্থাৎ ছক্কাপ্রতি ৯ বলের একটু বেশি খেলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২০১৬ বিশ্বকাপ খেলা এই অলরাউন্ডার। ছক্কার মারার গতিতে শীর্ষ পাঁচের শেষের স্থানটি নিকোলাস পুরানের। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচে মাত্র ৩৮ বল খেলেছেন। আর তাতে মেরেছেন চারটি ছক্কা।

এদিক থেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অনেক পিছিয়ে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মাহমুদউল্লাহর। ৬ ম্যাচ খেলে ৬ ছক্কা মেরেছেন অধিনায়ক। ৬ ইনিংসে ১১৩টি বল খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। অর্থাৎ প্রতিটি ছক্কা মারতে প্রায় ১৯ বল দরকার এই ব্যাটসম্যানের। ছক্কা মারায় দ্বিতীয় দ্রুততম মুশফিকুর রহিম। তাঁর চার ছক্কা এসেছে ১২২ বলে। আর তিনে থাকা সাকিবের তিন ছক্কার প্রতিটির জন্য ৪০ বল করে খেলতে হয়েছে।

লিটন ১০৪ বলে মাত্র ১ ছক্কা মেরেছেন
ছবি: এএফপি

অবশ্য অন্তত তিনটি ছক্কা মারতেই হবে এমন কঠিন শর্ত উঠিয়ে নিলে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বেশ সহনীয় ঠেকবে। চোটের জন্য ছিটকে পড়া সাইফউদ্দিন ও বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম দুজনই বিশ্বকাপে দুটি ছক্কা মেরেছেন। আর দুজনই খেলেছেন মাত্র ৯ বল। অর্থাৎ ছক্কাপ্রতি মাত্র ৪.৫ বল খেলেছেন দুজন।

ওদিকে বিশ্বকাপে ১০৪ বল খেলে মাত্র একটি ছক্কা মেরেছেন লিটন দাস। কমপক্ষে ১০০ বল খেলেও লিটনের চেয়ে বাজে ছক্কা মারার রেকর্ড বিশ্বকাপে শুধু একজনেরই আছে। তিন ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়া নেদারল্যান্ডসের ম্যাক্সওয়েল ও’ডাউড ১০৬ বলে ছক্কা মেরেছেন শুধু একটি।