প্রত্যেক খেলোয়াড় দেশে ফেরার আগে শেষ হবে না বিসিসিআইয়ের আইপিএল
আইপিএলের উৎসবে হঠাৎই দুশ্চিন্তার রেখা। ভারতজুড়ে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ। মারা যাচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার। এমন পরিস্থিতিতে আইপিএল আয়োজন করা নিয়ে সমালোচনার তিরও ছুটে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) দিকে। অন্যদিকে আইপিএলে খেলা বিদেশি খেলোয়াড়েরা আছেন দুশ্চিন্তায়। আইপিএল শেষ করে তাঁরা যাঁর যাঁর দেশে ফিরবেন কী করে?
এমনিতে আইপিএলের খেলোয়াড়েরা জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যেই থাকছেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ক্রিস লিন বলেছেন, আইপিএলের সব খেলোয়াড়ের করোনা পরীক্ষা আগের চেয়ে বেশিবার করা হচ্ছে। এত সুরক্ষার মধ্যে থাকার পরও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু টাই এরই মধ্যে দেশে ফিরে গেছেন। অ্যাডাম জাম্পা আর কেন রিচার্ডসনও বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আরও অনেক দেশের মতো বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাই তাঁরা দেশে ফিরতে পারছেন না।
জাম্পা ও রিচার্ডসন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে অনুরোধ করেছেন, দেশে ফিরতে তাঁদের জন্য ভাড়া করা বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করতে। ভারতের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আইপিএলের বিদেশি ক্রিকেটারদের অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। আইপিএল না খেলে দেশে ফিরতে চাইলে বা আইপিএল শেষ করে দেশে ফিরতে চাইলে কীভাবে যাবেন তাঁরা—ক্রিকেটারদের দুশ্চিন্তা এটা নিয়েই।
অবস্থা যখন এমন, আইপিএলের বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচদের দুশ্চিন্তা কমাতে বিসিসিআই ও আইপিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেমাং আমিন একটি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, খেলোয়াড় ও কোচদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। খেলা শেষ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু সব খেলোয়াড় ও কোচ আর কর্মকর্তারা নিরাপদে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত আইপিএল ‘শেষ’ হবে না বলে ভরসা জুগিয়েছেন হেমাং আমিন।
আইপিএলের বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়, কোচ আর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে চিঠিতে হেমাং আমিন লিখেছেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি আপনাদের অনেকেই টুর্নামেন্ট শেষে কীভাবে দেশে ফিরবেন, তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন। এমন দুশ্চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। কোনো সমস্যা ছাড়া যেন আপনারা যাঁর যাঁর গন্তব্যে ফিরতে পারেন, এটা বিসিসিআই নিশ্চিত করবে।’
পুরো বিষয়টি নিয়ে বিসিসিআই ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন হেমাং আমিন, ‘বিসিসিআই পুরো পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। টুর্নামেন্ট শেষে আপনাদের কীভাবে নিরাপদে বাড়ি পাঠানো যায়, সেটা নিয়ে বিসিসিআই সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সেদিক বিবেচনা করে আমি আপনাদের বলতে চাই, খেলা শেষ হয়ে গেলেই বিসিসিআইয়ের জন্য টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাবে না। বিসিসিআইয়ের কাছে টুর্নামেন্ট শেষ হবে তখনই, আপনারা সবাই যখন নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন।’
করোনাভাইরাস মহামারির গতি–প্রকৃতির ওপর খুব ভালোভাবে নজর রাখছে বিসিসিআই। পরিস্থিতি বিবেচনা করে জৈব সুরক্ষাবলয়কে আরও শক্তিশালী করার কথাও মাথায় রাখছে বিসিসিআই। হেমাং আমিন বলেছেন, ‘খেলোয়াড়দের আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তার বিষয়টি মাথায় রেখে জৈব সুরক্ষাবলয় আরও শক্তিশালী করা হবে। এরই মধ্যে আমরা করোনা পরীক্ষা আগের চেয়ে বেশিবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে প্রতি পাঁচ দিনে একবার পরীক্ষা করা হতো। এখন প্রতি দুই দিনে একবার করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।’
আইপিএলের সব খেলোয়াড়, কোচ আর কর্মকর্তাদের করোনা থেকে বাঁচাতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটা উল্লেখ করে একটি অনুরোধও জানিয়েছেন হেমাং আমিন, ‘টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে আমরা দলগুলোকে অনুমোদিত হোটেল থেকে খাবার আনার অনুমতি দিয়েছিলাম। এখন সেটা তুলে নেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে আপনারা পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন এবং আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।’