প্রোটিয়াদের বার্তা

জ্যাক ক্যালিস
জ্যাক ক্যালিস

সিডনিতে দুর্দান্ত এক দক্ষিণ আফ্রিকা দলকেই দেখলাম কাল। গত ১০ বা তারও বেশি সময়ের মধ্যে এটাই কোনো প্রোটিয়া দলের সেরা পারফরম্যান্স। এমনটা বলার প্রথম কারণ এই ম্যাচের গুরুত্ব ছিল অনেক। এ ধরনের ম্যাচে অতীতে আমাদের সমস্যায়ও পড়তে হয়েছে। এবার ওরা সেটা কাটিয়ে উঠে একটা দল হয়ে খেলল। দ্বিতীয়ত বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ের গুণগত মান। বিধ্বংসী বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং নাড়িয়ে দেওয়ার মতো দল দক্ষিণ আফ্রিকায় অনেকই এসেছে। কিন্তু এত ধারাবাহিক থাকতে পেরেছে খুব কম দলই।
ডেল স্টেইনের অবচেতনে এটা হয়তো কাজ করে যে তার সেবাটা দলের কতটা প্রয়োজন। প্রতিটি ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলে ও। মাঝে মাঝে ছাড়িয়ে যায় নিজেকেও, যেমনটা কাল গেল। মরনে মরকেল সম্ভবত তার সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই দেখাচ্ছে এখন। কয়েকটা নো-বল করা ছাড়া তাকে বাজে বল করতে দেখিনি। তার বলে রান করাটা ছিল রীতিমতো অসম্ভব। প্রথম ৬ রান করতে কুমার সাঙ্গাকারাকে ৪০ বল খেলতে দেখে ভীষণই বিস্মিত আমি। অ্যাবট প্রমাণ করেছে ও একজন রিজার্ভ খেলোয়াড়ের চেয়েও বেশি কিছু। ইমরান তাহির তো নিজের দ্বিতীয় ম্যাচসেরার পুরস্কারটাই তুলে নিল। জেপি ডুমিনির কথাই-বা কী বলবেন? বছর কয়েক আগে বলেছিলাম বোলিং নিয়ে আরও কাজ করতে। দেখুন, এখন ওর বিশ্বকাপেও হ্যাটট্রিক আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত ক্রিকেটের পাশে শ্রীলঙ্কা কিনা খেলল ভয়তরাসে ক্রিকেট! আমি ব্যাপারটা ধরতে পারছি, কারণ এ রকম ক্রিকেট আগে আমরাও খেলেছি। এর আগে আমরা যেটা করেছিলাম, ওদের খেলোয়াড়েরাও সম্ভবত চাপ নিয়ে নিয়েছিল। তাই স্বাভাবিক খেলা বাদ দিয়ে ওরা ভিন্ন®কিছু করতে গেল এবং খেই হারিয়ে ফেলল।
আমার বিশেষভাবে খারাপ লাগছে মাহেলা ও সাঙ্গার জন্য। তাদের মতো ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার কিনা এভাবে শেষ হলো! তবে কারও পক্ষেই সম্ভব নয় ক্যারিয়ার শেষের চিত্রনাট্যটি আগে লিখে রাখা। রূপকথার গল্প তো আর এমনি এমনি হয় না। অবশ্য এই ম্যাচটির কারণেই তাদের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে দাগ পড়বে না। আমি যেসব চমৎকার মানুষের সঙ্গে একই মাঠে খেলেছি, তাদের মধ্যে ওরাও আছে।
কাল কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে দ্রুতই দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ছন্দটা বেঁধে ফেলেছে। অন্য দলগুলোকে অনেক বড় একটা বার্তাই দিল প্রোটিয়ারা। রান তাড়ায় কুইন্টন ডি ককের কথাটা আলাদা করেই বলতে হয়।
আজকের বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়েও একটু বলি। আমার মনে হয় না ভারতের বিপক্ষে অঘটন ঘটাতে পারবে বাংলাদেশ। সেটার জন্য টাইগারদের যতটা না নিখুঁত ক্রিকেট খেলতে হবে, মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে তার চেয়েও বেশি বিবর্ণ দেখাতে হবে। তার পরও ভাগ্য বলে একটা কথা আছেই। এ রকম বড় ম্যাচে ভালো একটা উইকেটে ভারতই হতে পারে একমাত্র বিজয়ী দল।
তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে আত্মতুষ্টি অথবা অতি আত্মবিশ্বাস। আমার মনে হয় না সে রকম কিছু হবে। তবে অসাধারণ একটা বিশ্বকাপ কাটানোর জন্য আমি বাংলাদেশ দলেরও প্রশংসা করি। ভারতকে হারাতে পারলে সেটা তাদের নিয়ে যাবে আরও অনেক দূরে। (হক-আই)