'প্লে বয়' ওয়ার্ন এবং অনেকে...

>ক্রিকেটাররা আগে নায়িকাদের প্রেমে পড়েন, না কি নায়িকারা আগে ক্রিকেটারদের, এটা নিয়ে গবেষনা হতে পারে। গবেষনার ফল যা-ই হোক, এই দুইয়ের মধ্যে যে একটা অমোঘ আকর্ষণ কাজ করে, তাতে সন্দেহ নেই। যুগ যুগ ধরে ক্রিকেটার আর নায়িকাদের সফল-ব্যর্থ অজস্র প্রেম এর সাক্ষী। ২২ গজের সঙ্গে রুপালি পর্দার এই প্রেমের গল্প নিয়ে ধারাবাহিকের চতুর্থ ও শেষ পর্ব-
হার্লি ও ওয়ার্ন, কারও হৃদয়ই ফাঁকা থাকেনি। ফাইল ছবি
হার্লি ও ওয়ার্ন, কারও হৃদয়ই ফাঁকা থাকেনি। ফাইল ছবি

'প্লে-বয়' ওয়ার্ন এবং অনেকে...

উইকেট আর নারী কোনোটারই কমতি ছিল না শেন ওয়ার্নের জীবনে। তবু চঞ্চল মন তাঁর মানে না বাধা! তাই স্ত্রী সিমোন কালাহানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই একাধিক পরকীয়ায় জড়িয়েছেন ওয়ার্ন। কখনো ব্রিটিশ নার্স, কখনো অন্তর্বাস মডেল, কখনো বা প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমার নায়িকার প্রেমে পড়েছেন। কারও কারও সঙ্গে তাঁর ছবিও ছাপা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। কাহাতক আর সহ্য করা যায়, তিন সন্তান রেখেই সিমোন এক সময় ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ওয়ার্নকে।

ওয়ার্নের হৃদয় অবশ্য ফাঁকা থাকেনি। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল পত্রিকায় ব্রিটিশ অভিনেত্রী লিজ হার্লি আর শেন ওয়ার্নের চুম্বনরত ছবি।


এটা ২০১০ সালের ঘটনা। হার্লিকে তখনো ভারতীয় ব্যবসায়ী অরুন নায়ারের স্ত্রী হিসেবে জানেন অনেকে। ২০০৭ সালে ঘটা করে বিয়ে করেছিলেন দুজন, যোধপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি 'হ্যালো' সাময়ীকির কাছে ২০ লাখ পাউন্ডে বিক্রিও করেছিলেন লিজ-নায়ার দম্পতি।


তবে শেন ওয়ার্নের সঙ্গে ওই চুমুর ছবি প্রকাশ হওয়ার পর লিজ হার্লি জানিয়ে দেন অরুন নায়ারের সঙ্গে কিছুদিন আগে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তাঁর। এর কিছুদিন পরেই হার্লির অনামিকায় নীলকান্তমনির আংটি পরিয়ে বাগদান সারেন শেন ওয়ার্ন।


কিন্তু ওয়ার্ন কখনোই এক নারীতে মজে থাকার মানুষ নন। লিজের সঙ্গে প্রেম চলাকালেই ওয়ার্ন নাকি অ্যাডেলে নামে এক অস্ট্রেলিয়ান সুন্দরীকে নিয়মিত উত্তেজক খুদেবার্তা পাঠাতেন! ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড 'নিউজ অফ দ্য ওয়ার্লড'কে এ তথ্য ফাঁস করে দেন অ্যাডেলের স্বামী। প্রমাণ হিসেবে কিছু বার্তাও ছাপায় পত্রিকাটি।


ওয়ার্ন গাছেরও খাচ্ছেন, তলারও কুড়াচ্ছেন-এটা বুঝতে পেরে রেগে আগুন লিজ হার্লি। ফেরত দিয়ে দেন সেই নীলকান্তমনির আংটি। ২০১৩ সালে বিচ্ছেদে গড়ায় সম্পর্ক। অথচ এর কয়েকদিন আগেই শোনা যাচ্ছিল বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুজন!

হার্লি ও ওয়ার্ন, কারও হৃদয়ই ফাঁকা থাকেনি। ব্রিটিশ দৈনিক মিরর মাঝে একবার দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে প্রেম চলছে হার্লির। ২০১৮ সালে দুজনের একটি পুরোনো অন্তরঙ্গ ছবিও ছেপেছে পত্রিকাটি।


আর ওয়ার্ন পরে সম্পর্কে জড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান গ্ল্যামার মডেল এমিলি সিয়ার্সের সঙ্গে। ইনস্টাগ্রামে সিয়ার্সের সঙ্গে ডেটিংয়ের ছবিও দিয়েছেন বছর দুয়েক আগে। তবে সেই প্রেম এখনো টিকে আছে, নাকি শেন ওয়ার্ন নামের ভ্রমর কোনো নতুন ফুলে গিয়ে বসেছেন, জানা যায়নি।

দিপীকা কার? ধোনির না যুবির? ফাইল ছবি
দিপীকা কার? ধোনির না যুবির? ফাইল ছবি

'এক ফুল দো মালি'
অন্দরমহলের খবর খুব একটা আসেনি সংবাদমাধ্যমে। তবে যেটুকু এসেছিল তাতেই অনুমান করা গেছে, এক নারীকে নিয়ে এক সময় দুই ক্রিকেটারের মধ্যে ভালোই ঝড় বয়ে গেছে ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে। সেই নারী আর কেউ নন, 'বাজিরাও মাস্তানি'র মাস্তানি খ্যাত দিপীকা পাড়োকোন।


এক সময় যেখানেই ভারতীয় দলের ম্যাচ, সেখানেই ভিআইপি বক্সে দেখা যেত 'ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি'র নায়িকা দিপীকাকে। আইপিএলের ম্যাচ পরবর্তী পার্টিতেও থাকতো তাঁর সরব উপস্থিতি। কখনো মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে নাচছেন, কখনো হাসিতে ঘায়েল করছেন যুবরাজ সিংকে। একবার তো ভারতীয় ট্যাবলয়েডে খবর বের হলো, ভারতীয় দলের টিম হোটেলে নাকি পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে দেখা গেছে দিপীকাকে!


কার রুমে গিয়েছিলেন? ধোনি না যুবি? সেটা আজ অবদি জানা যায়নি। তবে এ নিয়ে ধোনি-যুবরাজের মধ্যে যে একটা রেষারেষি চলছিল, সেটা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়।


দিপীকা পরে রনবীর কাপুরের সঙ্গে অনেকদিন মন দেওয়া-নেওয়া করে ঘর বেধেছেন রনভীর সিংয়ের সঙ্গে।


ওদিকে ধোনি অধিনায়ক থাকার সময়েই দল থেকে বাদ পড়েন যুবরাজ। নিজের ছেলের ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়ার জন্য যুবরাজের বাবা কয়েকদিন পরে পরেই সংবাদমাধ্যমে তুলোধুনো করেন ধোনিকে।
ধোনি বা যুবরাজ কারও জীবনই অবশ্য থেমে থাকেনি। দিপীকার আগে যুবি প্রেম করেছেন আরেক বলিউড অভিনেত্রী কিম শর্মার সঙ্গে। পরে বিয়ে করেছেন মডেল অভিনেত্রী হ্যাজল কিচকে। আর ধোনিও সংসারে মন দিয়েছেন ছোটবেলার সহপাঠী সাক্ষী সিং রাওয়াতকে বিয়ে করে।

আনুশকা শর্মার সঙ্গে বিরাট কোহলি। ফাইল ছবি
আনুশকা শর্মার সঙ্গে বিরাট কোহলি। ফাইল ছবি

বিরাট-আনুশকার 'ওয়াদা'
ঢাকায় ২০১৬ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পরদিন বিরাট কোহলির একটা ভিডিও ভাইরাল হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভারতীয় হাই কমিশনের এক অনুষ্ঠানে কোহলি গাইছেন 'যো ওয়াদা কিয়া বো নিভানা পারে গা।'


ম্যাচটা ৫ উইকেটে জিতেছিল ভারত। তাহলে কোহলির গলায় কেন এমন বিরহের সুর! অনেকে বলেছিলেন, আসলে প্রেমিকা আনুশকা শর্মার সঙ্গে বিচ্ছেদ চলছিল তাঁর। 'তাজমহল' সিনেমার ওই গান বেরিয়ে এসেছে হৃদয়ের সেই রক্তক্ষরণ থেকে।


বিচ্ছেদ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কে জানে 'ওয়াদা নিভানো'র ডাক শুনেই কি না আনুশকা ফিরেছেন কোহলির জীবনে।


কোহলিই পরে বলেছেন ২০১৩ সালে একটা বিজ্ঞাপণের শুটিংয়ের দুজনের পরিচয়। প্রথম দেখাতেই নাকি কোহলি নিজের 'নার্ভাসনেস' দূর করতে একটা রসিকতা করেন। সেই রসিকতায় হেসে আনুশকা বলেছিলেন, 'তোমাকে টেলিভিশনে দেখে যতটা লম্বা মনে হয় আসলে তো ততটা নও।'


কোহলির উচ্চতা অবশ্য দুজনের প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কখনোই। মাঝে ওই একবার বিচ্ছেদের পর দুজন বিয়ে করেছেন ২০১৭ সালে। এখন পর্যন্ত দুজনের সুখের সংসার।

গীতা বসরার সঙ্গে হরভজন সিং। ফাইল ছবি
গীতা বসরার সঙ্গে হরভজন সিং। ফাইল ছবি

আরও যত প্রেম
ক্রিকেট আর রুপালি পর্দার প্রেমের গল্পের আসলে শেষ নেই। এই যেমন সন্দীপ পাতিল-দেবশ্রী রায়ের গল্পটাই বলা হলো না!


১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের এই ব্যাটসম্যান অভিনয় করেছিলেন 'কাভি আজনবি থে' নামে বলিউডের এক সিনেমায়। অভিনয় করতে গিয়েই ওই ছবির অন্যতম নায়িকা কলকাতার দেবশ্রী রায়ের প্রেমে পড়েন বিবাহিত সন্দীপ। সেই প্রেম অবশ্য ভেগে যায় সিনেমা মুক্তির পরই। তবে এখনো নাকি কলকাতার সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা হলে সন্দীপ জিজ্ঞেস করেন, 'দেবশ্রী কেমন আছে?'


ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে সুস্মিতা সেনের প্রেম এক সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মুখরোচক খবর ছিল। রিয়ালেটি শো করতে গিয়ে দুজনের আলাপ ২০০৮ সালে। তবে প্রেমটা ঠিক কবে থেকে শুরু জানা যায়নি। আকরামের প্রথম স্ত্রী হুমা মারা যান ২০০৯ সালে। এর কিছুদিন পরেও দুজনকে একসঙ্গে দেখা গেছে ভারতের বিভিন্ন নৈশ ক্লাবে। সুস্মিতা পরে স্বীকার করেছেন, তারা প্রায় ছয় মাস চুটিয়ে প্রেম করেছিলেন। কেন সেই প্রেম ভেঙ্গে গিয়েছিল, এটা কেউ বলেননি যদিও।


আরেক পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার হৃদয় দিয়েছিলেন বলিউড সুন্দরী সোনালি বেন্দ্রেকে। যদিও সোনালির কথা শুনে মনে হবে, প্রেমটা একতরফা শোয়েবের দিক থেকেই ছিল। এখনো শোয়েব নিজের প্রিয় নায়িকা হিসেবে সোনালির নামটাই বলেন।

পরিণতি না পাওয়া এসব প্রেমের ভিড়ে ব্যতিক্রম ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং ও বলিউড অভিনেত্রী গীতা বসরার প্রণয়। দুজন বিয়ে করেন ২০১৫ সালে। পরের বছরই এক কন্যা সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন এই জুটি। ভাজ্জির সুখের সংসারও টিকে আছে এখনো।