বল বিকৃতির কথা টের পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা

কেপ টাউন টেস্ট ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে দিয়েছে ব্যানক্রফটের।ফাইল ছবি

সে ঘটনার ধাক্কা এখনো সামলাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট। ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে বল বিকৃত করেছিলেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোনোভাবেই পেরে উঠছিল না অস্ট্রেলিয়া। মাঠেও ক্রমাগত দর্শকদের খোঁচা নিতে হচ্ছিল, সেটা আর সহ্য করতে না পেরে বল বিকৃত করে প্রতিপক্ষকে হারানোর পরিকল্পনা করেন সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। সিরিশ কাগজ দিয়ে বল বিকৃত করার দায়িত্ব পান প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফট। আর অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এটা দেখেও না দেখার ভান করেছিলেন।

ঘটনা ধরা পড়ে যাওয়ায় শাস্তি মিলেছিল তিনজনের। নিষেধাজ্ঞার শাস্তি অনভিজ্ঞতা ও দায়িত্বভার হার বিবেচনা করে অন্য দুজনের চেয়ে কম জুটেছিল ব্যানক্রফটের। পূর্ণ এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে অবশ্য ওয়ার্নার ও স্মিথ জাতীয় দলে ফিরেছেন আগে, খেলেছেন বিশ্বকাপ। তবে বিশ্বকাপ-পরবর্তী অ্যাশেজে ফিরেছিলেন ব্যানক্রফটও। কিন্তু অ্যাশেজ দুই টেস্টে মাত্র ৪৪ রান করে বাদ পড়ার পর থেকেই অস্ট্রেলিয়া দলে আর দেখা যাচ্ছে না একসময়কার নিয়মিত মুখ ব্যানক্রফটকে।

বহুদিন পর আবার এ নিয়ে মুখ খুলেছে ব্যানক্রফট। বলেছেন, সে সময় এ নিয়ে দলের বোলাররা অনেক প্রতিক্রিয়া দেখালেও তাঁরা নাকি বল বিকৃতির কথা ঠিকই জানতেন।

ব্যানক্রফট লুকিয়ে ফেলতে চাইছেন সিরিশ কাগজ। কিন্তু ধরা পড়ে গেলেন ক্যামেরায়।
ফাইল ছবি

২০১৮ সালের মার্চের সেই টেস্ট অন্য কারণেও মনে রাখতে পারতেন ব্যানক্রফট। দুই ইনিংস মিলিয়ে দলের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। সে টেস্টে দলের একমাত্র পঞ্চাশ ছাড়ানো (৭৭) ইনিংসটি ছিল তাঁর। কিন্তু সিরিশ কাগজ কেলেঙ্কারিতে ক্যারিয়ারটাই প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সে সময় দলের তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে সহ-অধিনায়কের চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে বিপদে পড়া ক্রিকেটার বলেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্যানক্রফটকে। যদিও ২৮ বছর বয়সী দায় নিজের কাঁধেই নিয়েছেন। বলেছেন, অপরাধ তিনিই করেছেন, দায়ও তাঁর।

দায় নিলেও সতীর্থদের সবার আচরণ যে গ্রহণ করেছেন এমন নয়। বল বিকৃতির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। ওয়ার্নার প্রাথমিকভাবে দলের সবার সিদ্ধান্ত, বলে ঘটনাটি চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্স ও নাথান লায়ন সরাসরিই বলেছেন, এ ধরনের কোনো কিছুর সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। এমন ভয়ংকর অপরাধের কথা চিন্তাও করেননি বোলাররা। এখন ব্যানক্রফট বলছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভূমিকা না থাকলেও বল বিকৃতি যে হচ্ছে, সেটা ঠিকই জানতেন বোলাররা।

দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ব্যানক্রফট বলেছেন, ‘আমার যে অপরাধ, তার দায় আমাকে নিতে হবে। হ্যাঁ, আমি যা করেছি, তাতে বোলারদের লাভ হয়েছে এবং এ ব্যাপার যে তারা টের পেয়েছে, সেটা বোঝাই যায়। একটা জিনিস যদি এ থেকে শিখে থাকি আমি, সেটা হলো কোথায় থামতে হবে, সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়া। যদি আরও সচেতন হতাম, তাহলে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতাম।’ ‘বোলাররা কি আসলেই জানতেন বল বিকৃতির বিষয়ে?’ স্পষ্টভাবে আবার প্রশ্ন করা হয়েছিল ব্যানক্রফটের কাছে। উত্তরে ‘হ্যাঁ’ই বললেন এই ওপেনার, ‘ও...হ্যাঁ। দেখুন, আমার মনে হয় হ্যাঁ, জানত। আমার ধারণা, এটা তো বোঝাই যায় (বল বিকৃত করা হয়েছে, সেটা বোঝা)।’