‘বলের বিকৃতি বোলাররা জানবেন না, সেটা কীভাবে হয়!’

অস্ট্রেলীয় বোলাররা বলের বিকৃতি হয়েছে এটা জানবেন না, সেটা কীভাবে হয়, প্রশ্ন অনেকের।ফাইল ছবি

কেপটাউনে ২০১৮ সালের টেস্টে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল কিছুদিন আগে। সেই বিতর্ক এখন ডালপালা গজিয়ে ক্রমে বাড়ছে। স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, ক্যামেরন ব্যানক্রফটরা এই টেম্পারিং-কাণ্ডের জন্য শাস্তি ভোগ করে ফিরেছেন ক্রিকেটে। কিন্তু কিছুদিন আগে ব্যানক্রফট মন্তব্য করেন, সেই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলের বোলার হিসেবে অবশ্যই টেম্পারিং বোঝার কথা। এরপরই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেপটাউন টেস্টের চার বোলার মিলে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বাইরের ক্রিকেটারেরাও নানা রকম মন্তব্য করছেন। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক সালমান বাটের যেমন বিশ্বাস, বল টেম্পারিংয়ের বিষয়টি জানতেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা।

বল টেম্পারিংয়ের বিষয়টি জানতেন না, এ মর্মে অস্ট্রেলিয়ার জনগণের প্রতি কাল একটি খোলা বিবৃতি দেন কেপটাউন টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলের চার বোলার—প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্ক ও নাথান লায়ন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমরা নিজেদের সততা নিয়ে গর্ব করি। এটা হতাশার যে কিছু সংবাদকর্মী ও সাবেকেরা ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্ট নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। নিউল্যান্ডসের (ভেন্যু) বড় পর্দায় না দেখার আগপর্যন্ত আমরা জানতাম না বলের আকৃতি পাল্টাতে বাইরের কোনো জিনিস (সিরিশ কাগজ) মাঠে ঢোকানো হয়েছে।’

ব্যানক্রফটের বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসেছেন সবাই।
ফাইল ছবি: এএফপি

শুধু বাট নন, ইংল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফও মনে করেন বোলাররা টেম্পারিংয়ের বিষয়টি জানতেন। ফিল্ডাররা বল পরিচর্যার পর বোলারদের হাতে তুলে দেন। তখন বলের আকৃতি টের পাওয়ার কথা বোলারদের, এমনটাই মনে করেন স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে শাস্তি ভোগ করা সালমান বাট। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বাট বলেন, ‘বল রিভার্স সুইং করছে, কিন্তু বোলাররা জানে না, এটা সত্যি নয়। বোলাররা যেন রিভার্স সুইং পায়, তা নিশ্চিতের দায়িত্ব দলের বাকি খেলোয়াড়দের। যে মুহূর্ত থেকে রিভার্স সুইং শুরু হয়, বোলারদের আচরণ পাল্টে যায়। তাই ফ্লিনটফ যা বলেছে, সেটাই সঠিক। যাদের জন্য বলটা প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেই বোলাররা জানে না কীভাবে?’

২০১০ সালে লর্ডসে স্পটফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সালমান বাট। সাজা খেটে ক্রিকেটে ফিরলেও পাকিস্তান জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি তিনি। সালমান বাটের দুঃখ, কেপটাউনে সেই বিতর্কিত ঘটনায় শুধু ব্যাটসম্যানেরাই—স্মিথ, ওয়ার্নার ও ব্যানক্রফট—সাজা পেয়েছেন। কিন্তু সিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষা বলটি দিয়ে যাঁরা বল করছিলেন, তাঁদের কিছুই হয়নি। এই ওপেনার ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘ব্যানক্রফট বলটা (টেম্পারিং) বানিয়ে দিচ্ছিল। অধিনায়ক স্মিথ তা জানতেন এবং ওয়ার্নারও জড়িত ছিলেন। শাস্তি পাওয়া এরা সবাই ব্যাটসম্যান, কিন্তু একজন বোলারকেও শাস্তি দেওয়া হয়নি। যিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর প্রশংসা করতেই হয়। বোঝাতে চাচ্ছি, বল রিভার্স সুইং করছিল। বল টেম্পারিংয়ের কারণে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বল করছিল, তাদের নিয়ে কেউ ভাবেনি।’

অস্ট্রেলিয়া দলের চার বোলার বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘শুধু বোলার বলে যাঁরা কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করছেন “আমরা অবশ্যই জানতাম”, তাঁদের প্রতি বলছি, ম্যাচ চলাকালে অভিজ্ঞ দুই আম্পায়ার নাইজেল লং ও রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ টিভিতে ফুটেজ দেখার পরও বল পাল্টাননি, কারণ বিকৃতির কোনো চিহ্ন ছিল না।’ কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ের কারণে নয় মাস নিষিদ্ধ হন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্মিথ ও ওয়ার্নার। শাস্তি ভোগের পর তাঁরা আবারও ফিরেছেন ক্রিকেটে।