বাংলাদেশ যেখানে ৪০, অস্ট্রেলিয়ার সেখানে ১০০

ঘরের মাঠে শতকরা ৬০ ভাগের বেশি টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ দলফাইল ছবি: প্রথম আলো

কীভাবে প্রত্যাবর্তন করতে হয়, সেটা দেখিয়ে দিল ভারত। অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও পেসার মোহাম্মদ শামিকে ছাড়াই নেমেছিল দলটি।

মেলবোর্নে সে দলই অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল, যে জয়ে এক শ বছরের পুরোনো এক স্মৃতি ফিরে এসেছে।

১৯০২ অ্যাশেজে সফররত অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। সে দলই সেবার দেশে ফিরেছে অ্যাশেজ জিতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জেতা সেই অস্ট্রেলিয়ার মতোই ভারত এখন স্বপ্ন দেখছে সিরিজ জয়ের।

ওদিকে অস্ট্রেলিয়া করল এক হতাশার রেকর্ড। মেলবোর্নের এ হার যে ঘরের মাঠে দেশটির শততম হার। আর ঘরের মাঠে টেস্ট হারার প্রসঙ্গ মানেই যে বাংলাদেশ। ম্যাচপ্রতি হারের দিক থেকে যে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনায় যেতে পারে না অন্য কোনো দল।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ড ইংল্যান্ডের (৫২৭)। ঘরের মাঠে টেস্টে হারের সেঞ্চুরিটাও তারাই আগে করেছে। রেকর্ড ১২৩টি হার তাদের। এরপরই আছে অস্ট্রেলিয়া।

মেলবোর্ন টেস্টে ভারতের কাছে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া
ছবি: এএফপি

দেশের মাটিতে ৪২৮টি টেস্ট খেলা অস্ট্রেলিয়া হারের তিন অঙ্কের দেখা পেল আজ। হারের শতকরা হিসাবে অবশ্য চুল পরিমাণ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়াই। ইংলিশরা যেখানে ২৩.৩৪ শতাংশ টেস্টে হারে, সেখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্যে ২৩.৩৬ শতাংশ টেস্টে হারের দেখা মেলে।

ক্রিকেটে ‘ঘরের মাঠে বাঘ, বাইরে বিড়াল’—লাইনটা সব সময় ভারতের কপালেই জুটেছে। অথচ ঘরের মাঠে জয়ের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ারই বরং জুড়ি নেই। ঘরের মাঠে প্রায় ৬০ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে দলটি। অন্য কোনো দলের ৫০ ভাগ ম্যাচেও জেতার রেকর্ড নেই।

তবে ঘরের মাঠে হার এড়ানো যদি ‘বাঘ’ তকমা পাওয়ার মাপকাঠি হয়, সে ক্ষেত্রে দলটি পিছিয়েই থাকবে এবং বিস্ময়করভাবে এ ক্ষেত্রেও শীর্ষে নেই ভারত।

এক দশক পর দেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে পারা পাকিস্তানই এদিক থেকে এগিয়ে। ঘরের মাঠে মাত্র ১৪.২৯ শতাংশ টেস্টে হারে দলটি! আর ভারত ঘরের মাঠে ১৮.৮৪ শতাংশ টেস্টে হারে।

ঘরের মাঠে ২৭২ ম্যাচে মাত্র ৫২ বার প্রতিপক্ষকে জিততে দিয়েছে দলটি। আর দেশের মাটিতে খেলা ১৫৪ টেস্টে মাত্র ২২টিতে হেরেছে পাকিস্তান। বিশ্বের অন্য কোনো দেশ ঘরের মাঠে এত কম ম্যাচে হারেনি।

পাকিস্তান ঘরের মাঠে বরাবরই বেশ সফল দল
ফাইল ছবি: এএফপি

এ হিসাব থেকে অবশ্য আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে বাদ দিতে হচ্ছে। আফগানিস্তান এখনো ঘরের মাঠে কোনো টেস্ট খেলেনি। আর আয়ারল্যান্ড ঘরের মাঠে নিজেদের অভিষেক ম্যাচে হেরেছে পাকিস্তানের কাছে।

মাত্র এক ম্যাচ খেলেছে বলেই হারের শতভাগ রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও আইরিশদের এ হিসাব থেকে মুক্তি দিতেই হচ্ছে।

সে কারণেই ঘরের মাঠেই ‘বাঘের মাসি’ বনার রেকর্ডটা আপাতত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। এটা সত্যি যে গত কয়েক বছরে দেশের মাটিতে বাংলাদেশ টেস্টে ভালো করছে।

২০১২ সালের পর মাত্র একবারই (২০১৮ সাল) বছরে একাধিক টেস্ট হেরেছে দল। তবু ঘরের মাঠে বাংলাদেশের অতীত পারফরম্যান্স আড়ালে ঠেলা যাচ্ছে না।

স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশ দল ৬৩টি ম্যাচ খেলেছে। এর ৪০টিতেই হারতে হয়েছে দলকে। ঘরের মাঠে এক বছরে সর্বোচ্চ চার হারের রেকর্ড আছে, সেটাও পাঁচবার করেছে দল।

ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের চেয়ে ভালো
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ঘরের মাঠে শতকরা ৬৩.৪৯ শতাংশ ম্যাচে হারে বাংলাদেশ জাতীয় দল। বাংলাদেশের ধারেকাছে আছে ক্রিকেটের অকৃত্রিম বন্ধু জিম্বাবুয়ে। গত দেড় দশকে অনেক পিছিয়ে যাওয়ার দলটির ঘরের মাঠের রেকর্ড তবু বাংলাদেশের চেয়ে ভালো।

২৮ বছরে জিম্বাবুয়ে স্বাগতিক হিসেবে ৬০ ম্যাচ খেলেছে, হেরেছে ৩৩টিতে, অর্থাৎ দলটি ৫৫ শতাংশ ম্যাচে হারে।

এদিক থেকে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের পরই আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। স্বাগতিক হিসেবে ৩১.২৫ শতাংশ ম্যাচে হারে তারা। নিউজিল্যান্ডেরও স্বাগতিক হিসেবে পারফরম্যান্স বিস্ময় জাগাতে পারে।

সাধারণত ঘরের মাঠে দাপুটে চেহারায় দেখা দেওয়া দলটি ২৯.২২ শতাংশ ম্যাচেই হারে! শ্রীলঙ্কাও ঘরের মাঠে ২৭.৬৬ শতাংশ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জয় দেখে। সে তুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখনো ঘরের মাঠে অন্যদের চেয়ে ভালো করছে। ২৬ শতাংশ ম্যাচে এ পর্যন্ত হেরেছে উইন্ডিজ।

ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজও বেশ শক্তিশালী দল
ফাইল ছবি: এএফপি

ঘরের মাঠে হার:

ইংল্যান্ড ১২৩
অস্ট্রেলিয়া ১০০
দক্ষিণ আফ্রিকা ৭৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬৫
নিউজিল্যান্ড ৬৪
ভারত ৫২
বাংলাদেশ ৪০
শ্রীলঙ্কা ৩৯
জিম্বাবুয়ে ৩৩
পাকিস্তান ২২