বাংলাদেশ সফরে এলে ক্ষতির মুখে পড়বেন ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েলরা?

অস্ট্রেলিয়ার দুই তারকা ডেভিড ওয়ার্নার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।ছবি: টুইটার

অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশ আসছে অস্ট্রেলিয়া দল। সেই ২০১৭ সালে যে একটা সিরিজ খেলে গিয়েছিল, এরপর আগামী অক্টোবরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল তাদের। এখনো সূচি চূড়ান্ত হয়নি। আগামী অক্টোবরেই ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে, সেটি সামনে রেখে বাংলাদেশে তিনটি টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলার কথা ওয়ার্নার-স্মিথদের।

কিন্তু ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মিররের খবর সত্যি হলে, বাংলাদেশে হতে যাওয়া এই সিরিজই অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন খেলোয়াড়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্ষতিটা আর্থিক। করোনাভাইরাসের কারণে এলোমেলো হয়ে যাওয়া সূচিতে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরটা সাংঘর্ষিক হতে পারে এ বছরের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে হতে যাওয়া ‘দ্য হানড্রেড’-এর সঙ্গে।

১০০ বলের সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েলসহ অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে বিভিন্ন সংস্করণে খেলা ৯ জনসহ মোট ১০ জন খেলোয়াড়ের খেলার কথা।

বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবন-জীবিকাকে সংশয়ে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি করোনা ছোট্ট একটি ক্ষতি করে দিয়ে গেছে ক্রিকেটেরও। এলোমেলো করে দিয়েছে ক্রিকেটের সূচি। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) যে ১০০ বল ক্রিকেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে, সেটিও গত বছরই হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে পিছিয়ে টুর্নামেন্টটা শুরু হচ্ছে এ বছরের ২১ জুলাই।

এখানে ঝামেলা হয়ে গেছে টুর্নামেন্টটি অস্ট্রেলিয়ার দুটি সফরের মধ্যে ‘স্যান্ডউইচ’ হয়ে যাওয়ায়। জুন-জুলাইয়ে তিন টি-টোয়েন্টি ও তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবে অস্ট্রেলিয়া দল। ডেইলি মেইলের খবর, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া—সিএ) ঠিক করেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পরই সরাসরি বাংলাদেশ সফরে যাবে অস্ট্রেলিয়া।

তাতেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের ১০০ বলের টুর্নামেন্টে খেলা সংশয়ে পড়ে গেছে বলে জানাচ্ছে ডেইলি মেইল। যদিও বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ অক্টোবরে ধরে নিলে, সে ক্ষেত্রে জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষ হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া বাকি সময় কী করবে, সে নিয়ে সংশয় জাগে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন দেখার পর।

আরেকটা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচিও (এফটিপি)। সেটি অনুযায়ী, অক্টোবরে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলতে শ্রীলঙ্কা দলের অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার কথা! সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় কি আসলেই অক্টোবরে থাকছে, নাকি আরও এগিয়ে আসছে, সে প্রশ্নও ওঠে।

ম্যানচেস্টার অরিজিনালস, নর্দার্ন সুপারচার্জার্স, বার্মিংহাম ফিনিক্স, ট্রেন্ট রকেটস, ওয়েলশ ফায়ার, লন্ডন স্পিরিট, ওভাল ইনভিনসিবলস ও সাউদার্ন ব্রেভ—এই আটটি দল নিয়ে হবে ১০০ বলের ক্রিকেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটি। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির ছেলে ও মেয়েদের দল আছে।

আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজির ছেলেদের দলে সব মিলিয়ে ১০ জন অস্ট্রেলিয়ান। অ্যারন ফিঞ্চ ও ক্রিস লিন আছেন সুপারচার্জার্সে; অ্যাডাম জাম্পা ফিনিক্সে; ডার্সি শর্ট ও নাথান কোল্টার-নাইল রকেটসে; ঝাই রিচার্ডসন ফায়ারে; গ্লেন ম্যাক্সওয়েল স্পিরিটে, ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্কাস স্টয়নিস ব্রেভে। আর এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে এখনো অভিষেক না হওয়া ন্যাথান সাওটার খেলবেন ইনভিনসিবলস দলে।

ডেইলি মেইল লিখছে, অন্য কোনো সময় হলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া হয়তো তাদের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের বাংলাদেশে যেতে বাধ্য না করে ইংল্যান্ডের এই ১০০ বলের টুর্নামেন্টেই খেলার অনুমতি দিত। কিন্তু এবার ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ বলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া চাইছে, তাদের খেলোয়াড়েরা এশিয়ার মাটিতেই খেলে প্রস্তুতি নিক।

সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সিরিজে ম্যাক্সওয়েল-ওয়ার্নারদের চায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরের দিন তারিখ এ সপ্তাহের শেষ দিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক কেন্দ্রীয় চুক্তি নিশ্চিত হওয়ার পরই জানা যাবে বলে জানাচ্ছে ডেইলি মেইল।

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল গত বছরের জুনেই, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে দুটি টেস্ট খেলতে। কিন্তু করোনার কারণে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সম্মতিতে সফরটি বাতিল হয়ে যায়। এর আগে ২০১৮ সালে টিভিস্বত্ব নিয়ে ঝামেলায় বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

তবে এবার অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আসার পর ব্যাটে-বলে মিলে গেলে এটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ থেকে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেও পরিণত হয়ে যেতে পারে বলে গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো। আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচি অনুযায়ী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডেরও টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা। সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের সঙ্গে ইংল্যান্ডও যোগ হয়ে তিন জাতির টুর্নামেন্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল ক্রিকইনফো।

সে সময় বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, আপাতত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টি–টোয়েন্টি সিরিজ নিয়েই ভাবছেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের সম্ভাবনার কথা বলতে তিনি রাজি ছিলেন না। তবে সে সম্ভাবনা উড়িয়েও দেননি। তবে বিসিবির প্রধান নির্বাহী তখন জানিয়েছিলেন, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার আগে তিন টি–টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসবে নিউজিল্যান্ড দল।

বাংলাদেশের জন্য সে ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের আগে ভালো প্রস্তুতিই হবে!