বাংলাদেশ-হতাশা ভুলতে পারছে না শ্রীলঙ্কা

বাংলাদেশের অপেক্ষায় ছিল শ্রীলঙ্কা। সেই কবে থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অপেক্ষা করছে তারা। করোনাভাইরাস যখন মাত্র ছড়াতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কায়, তখনো তারা অনুশীলন চালিয়ে গেছে। প্রথমে ভারত ও পরে বাংলাদেশ সিরিজের কথা মাথায় রেখে মে মাসেই অনুশীলনে নেমে পড়েছিল তারা। কিন্তু এত লম্বা প্রস্তুতি কাজে লাগাতে পারেনি তারা।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে না পেরে হতাশ শ্রীলঙ্কা।
এএফপি ফাইল ছবি

জৈব-সুরক্ষা বলয়ের নিয়ম নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পেরে সিরিজ পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা এখন জানুয়ারির দিকে তাকিয়ে। সূচি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের তখন শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড তাই বাংলাদেশের কথা ভোলার চেষ্টা করে ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে। তবে এর মাঝেও বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজ খেলতে না পারার দুঃখটা থেকেই যাচ্ছে তাদের।

শ্রীলঙ্কা সরকারের কঠোর কোয়ারেন্টিন নিয়ম বাংলাদেশ সিরিজ পিছিয়ে দিয়েছে। জৈব-সুরক্ষা নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড টানা তিনটি দেশকে আতিথ্য দিয়েছে। বাংলাদেশকে তেমন জৈব-সুরক্ষা বলয়ে রেখেই সফরে ডেকেছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তাতে সায় দিয়েছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে সব দলই ওই বলয়ের মধ্যে থেকেও অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সে সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কায় গেলে কোনো অনুশীলন ছাড়াই ১৪ দিন হোটেলে বসে থাকতে হতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের কী হবে, সেটা ভেবে এ সময় আর সফরের আগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ।

সবশেষ মার্চে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজ নিয়ে কথা বলতে গিয়েও উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। দলটির কোচ মিকি আর্থার বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের সফরটা পিছিয়ে যাওয়ায় আমরা খুবই হতাশ হয়েছি। আমরা চার মাস ধরে অনুশীলন করছি। আমাদের খেলোয়াড়েরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল।’

প্রস্তুতি কাজে লাগাতে না পারার হতাশা অবশ্য দীর্ঘ হতে পারে শ্রীলঙ্কার। কারণ, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও জানিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন মানলেও অনুশীলন ছাড়া এত দিন বসে থাকা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন আর্থার, ‘আমাদের ক্রিকেট খেলা শুরু করতে হবে, না হলে সবকিছু বন্ধ করে দিতে হবে এবং টিকার জন্য বসে থাকতে হবে। আমি আশাবাদী। আশা করি ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে পারব এবং ইংল্যান্ডকে দিয়ে ব্যস্ত এক ২০২১ সালের সূচনা হবে। আমরা এক পেশার অংশ যাদের নিয়মিত খেলার মধ্যে থাকা উচিত, খেলা প্রচার করা দরকার, যদি খেলাটা টিকিয়ে রাখতে চাই। শ্রীলঙ্কা সরকার দারুণ কাজ করেছে। আমরা এখন বের হতে পারছি, রেস্তোরাঁয় যাচ্ছি, গল ফেইসে গিয়ে পান করতে পারছি। কিন্তু আমরা কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারছি না এখনো।’

শ্রীলঙ্কায় করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশটির সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে বোর্ডের অনেকের ধারণা, বাংলাদেশের সফর নিয়ে কিছুটা ছাড় দিতেও পারত দেশটি। কারণ, অনুশীলনের সুযোগ ছাড়া কোনো দেশই সফর করতে রাজি হবে না। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী টম হ্যারিসন এরই মাঝে জানিয়ে দিয়েছেন, অনুশীলনের সুবিধা ছাড়া ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন মানা সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। বাংলাদেশের তুলনায় আর্থিক দিক থেকে ইংল্যান্ড সফরটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ শ্রীলঙ্কা বোর্ডের কাছে। এ অবস্থায় সিরিজ আয়োজনের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন আর্থার, ‘আমাদের এটা করতেই হবে না হলে বোর্ড আরও অনেক চাপে পড়ে যাবে। এরই মাঝে আমরা ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন এবং এটা খুবই দুঃখজনক। আমি পূর্ণাঙ্গ চিত্রটা (করোনার প্রভাব) বুঝি এবং আমি বলছি না ক্রিকেটই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। মানুষ জীবন হারাচ্ছে এবং অনেকে চাকরি হারাচ্ছে—কিন্তু ক্রিকেটীয় দিক থেকে আমাদের খেলা দরকার।’