বাংলাদেশে তো আর জ্যাক ক্যালিসকে পাবেন না

বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।ছবি: প্রথম আলো

খেলেছেন মাত্র তিন ম্যাচ। তবু আইপিএল থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হয়ে গেছে মনে করেন সাকিব। করোনার ছোবলে স্থগিত হয়ে গেছে আইপিএল।

দেশে ফেরার অপেক্ষায় বিদেশি ক্রিকেটাররা। তার মধ্যেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান কাল আহমেদাবাদের হোটেল থেকে মুঠোফোনে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে—

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: আইপিএল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ওখানে এখন আপনাদের কী অবস্থা?

সাকিব আল হাসান: আমরা আছি ভালো। দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে আসা নিয়েও তো অনেক জটিলতা...

আইপিএলে এবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেন সাকিব।
ছবি: আইপিএল

সাকিব: আজ-কালের ভেতরে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ। মোস্তাফিজ আর আমার একই সঙ্গে ফেরার কথা। তবে পরিকল্পনাটা কী, এখনো পুরোপুরি জানি না। এসব নিয়ে কাজ চলছে।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: সরকারের নিয়ম অনুযায়ী দেশে এসে আপনাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হবে। মানসিকভাবে প্রস্তুত আছেন নিশ্চয়ই?

সাকিব: অবশ্যই। একটা নিয়ম যেহেতু করা হয়েছে, তা তো মানতেই হবে।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: আইপিএলে এবার ৩ ম্যাচ খেলে ৩৮ রান করেছেন, উইকেট ২টি। নিজের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সাকিব: অবশ্যই আরও ভালো কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু এখানে কন্ডিশন একটু ভিন্ন ছিল। আমার আরও ভালোভাবে মানিয়ে নেওয়ার দরকার ছিল।

আইপিএলে এবার তেমন ভালো করতে পারেননি সাকিব।
ছবি: আইপিএল
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: আপনার প্রস্তুতিও কি ভালো ছিল? এই পর্যায়ের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তো অনেক দিন খেলেননি...

সাকিব: প্রস্তুতি ভালো ছিল, এটা বলব না। কারণ, আমার ও রকম ম্যাচই খেলা হয়নি। কয়দিন অনুশীলন করাটাই তো আর প্রস্তুতি নয়। এখানে আমি টি-টোয়েন্টি খেলেছি ১৮-২০ মাস পর। প্রস্তুতি মোটেই ভালো ছিল না।

প্রশ্ন:


প্রশ্ন: পরের আইপিএলে মেগা অকশন হবে। তিন বছরের জন্য খেলোয়াড় নেবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। আপনার তো বয়স এখন ৩৪ বছর। আপনাকে পরেরবার ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিতে চাইবে, সেই আত্মবিশ্বাস আছে?

সাকিব: এখনই বলা কঠিন। ফিটনেস ইনশা আল্লাহ ধরে রাখতে পারব। কিন্তু পারফরম্যান্সের গ্যারান্টি কেউই দিতে পারবে না। তবে আমার মনে হয় না একজন খেলোয়াড়কে কোনো দল একবারে তিন বছরের চিন্তা করে নেয়। দলগুলোর তো প্রতিবছরই সুযোগ থাকে খেলোয়াড় ছেড়ে দেওয়ার। আর ক্রিস গেইল ৪২-৪৩ বছর বয়সে এসেও যেভাবে খেলে যাচ্ছে; আমরা যদিও ক্রিস গেইল নই, তবু ওর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা তো নেওয়াই যায়।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ থেকে ছুটি নিয়ে আইপিএলে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপের প্রস্তুতির কথা বলে। কিন্তু এখন তো সেই প্রস্তুতিটাও ঠিকভাবে হলো না...

সাকিব: আমি তা মনে করি না। বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য আমার কী কী দরকার, সে ধারণা তো হয়েছে এই কয়দিনে। প্রস্তুতি অবশ্যই হয়েছে। আইপিএল স্থগিত হয়ে গেলেও প্রায় অর্ধেক টুর্নামেন্টই তো শেষ। আমার যা যা জানা, বোঝার দরকার ছিল, তা হয়ে গেছে এই কয়দিনে। আমি এখন জানি ভারতে যদি বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত হয়, কোন কোন জায়গায় আমাকে কাজ করতে হবে, কোন কোন জায়গায় আরও উন্নতি করা দরকার। ম্যাচ হয়তো কম খেলেছি, তবে অনুশীলন করে এবং এখানে থেকেও অনেক কিছু ধারণা করা সম্ভব।

আইপিএল স্থগিত হওয়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলার সম্ভাবনা আছে সাকিবের।
ছবি: আইপিএল
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ হেরে এল বাংলাদেশ দল। ফলাফল নিয়ে কী বলবেন?

সাকিব: দ্বিতীয় টেস্টটা হয়তো মনমতো হয়নি। তবে প্রথম টেস্ট নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংটা আমাদের সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। সেটা আরেকটু ভালো হলে না জিতলেও এই টেস্টটা আমরা ড্র করতে পারতাম। যেহেতু তৃতীয় দিন থেকে বল ঘোরা শুরু হয়ে গিয়েছিল, অনেক কিছুই হতে পারত।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: দুটি টেস্টেই বাংলাদেশ দল তিন পেসারসহ পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলেছে। বোলিং আক্রমণের পরিবর্তনটাকে কীভাবে দেখেন?

সাকিব: তিন পেসার খেলবে না দুই পেস বোলার খেলবে, এটা কোচ-অধিনায়কেরাই ঠিক করবেন। তবে পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলার চিন্তাটা ভালো ছিল। আমি নিশ্চিত, মিরাজের ওপর ব্যাটিংয়ের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দল থেকে। তা ছাড়া প্রথম টেস্টের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি উইকেট প্রথম দু-তিন দিন অনেক ফ্ল্যাট ছিল। চার বোলার খেলালে তাদের ওপর চাপ বেশি পড়ে যেত। দ্বিতীয় টেস্টের শুরু দিকে আমরা কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছি, ফিল্ডিংয়ে ভুল করেছি। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের কথা তো বললামই। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল। বল তখন ঘোরা শুরু হয়ে গেছে। প্রথম ইনিংসে যদি আমরা ভালো ব্যাটিং করতাম, সে সাহসটা হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসে কাজে লাগত।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: স্পিনাররা কি প্রত্যাশা মেটাতে পারলেন? অভিষেক টেস্টে শ্রীলঙ্কার প্রাভিন জয়াবিক্রমে তো ১১ উইকেট নিলেন...

সাকিব: স্পিনাররা হয়তো আরেকটু ভালো করতে পারত। তার মানে এই নয় যে আমি অন্য কারও সঙ্গে ওদের তুলনা করব। প্রথম টেস্টে যদি দেখেন, শ্রীলঙ্কা বলতে গেলে স্পিনারই খেলায়নি। যারা বল করেছে, তারা উইকেট পায়নি। আর দ্বিতীয় টেস্টে ওরা বোলিং করেছে স্পিনারদের জন্য সুবিধাজনক সময়ে...তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে। ও রকম সময়ে আমাদের স্পিনাররাও ভালো বোলিং করেছে।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: উইকেট স্পিন সহায়ক না হলে বাংলাদেশের স্পিনারদের বল তেমন কার্যকর হয় না। কিন্তু সে রকম উইকেট তো সব সময় পাওয়া যায় না। এ জায়গাতে কি আরও কাজ করার আছে?

সাকিব: অবশ্যই। ফ্ল্যাট উইকেটে আমাদের স্পিনাররা কীভাবে ভালো বল করতে পারে, কীভাবে উইকেট নিতে পারে, এগুলো খুঁজে বের করতে হবে।

দেশে এসে কোয়ােরন্টিনের পর অনুশীলনের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া নিয়ে সন্দিহান সাকিব।
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

প্রশ্ন: কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছেন বিদেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে হলে দলে একজন সিমিং অলরাউন্ডারও দরকার...

সাকিব: সিমিং অলরাউন্ডার থাকাটা তো অবশ্যই বাড়তি সুবিধা। কিন্তু আমাদের দেশে সে রকম কাউকে পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশে তো আর আপনি জ্যাক ক্যালিসকে পাবেন না!

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: সামনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ। দেশে এসে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনের পর যে সময় পাবেন, সেটা কি প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট হবে?

সাকিব: যথেষ্ট হবে না। ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করার পর খেলা কতটুকু সম্ভব হবে, সেটাও বলা মুশকিল। তবে দেশে যদি এ রকম নিয়ম থাকে, সেটাকে তো সম্মান করতেই হবে। আসলে সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকা ভালো। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: জুনের শেষ দিকে টেস্ট খেলতে জিম্বাবুয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। এরপর এ বছরই পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা দল আসবে টেস্ট খেলতে। বাংলাদেশ যাবে নিউজিল্যান্ডে। এই টেস্টগুলোতে আপনাকে পাবে তো দল?

সাকিব: ইনশা আল্লাহ, ইচ্ছা তো আছে খেলার। তবে এখন অত কিছু নিয়ে চিন্তা করতে চাচ্ছি না। পুরো মনোযোগ দিতে চাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দিকে। পরেরটা পরে দেখব।