বাংলাদেশের এনামুল জুনিয়র যেখানে এখনো সবার ওপরে

যুব বিশ্বকাপে এক আসরে সর্বোচ্চ ২২ উইকেটের রেকর্ড এখনো এনামুল হক জুনিয়রের দখলেছবি: সংগৃহীত

নীরবেই চলে গেল দিনটি। অথচ মাঝখানে সময় পেরিয়েছে মাত্র দুই বছর। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের যুবাদের বিশ্বজয়ের কথা বলা হচ্ছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ, দিনটি ছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। ২০২২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাজে ফলের কারণেই হয়তো উনিশের বিশ্বজয়ের সেই বীরত্বগাথা নীরবেই চলে গেল।

এবারের যুব বিশ্বকাপে শিরোপা ধরে রাখার মিশন নিয়ে গিয়েছিলেন আকবর আলীদের উত্তরসূরিরা। কিন্তু একের পর এক হারে শেষ পর্যন্ত অষ্টম স্থানে থেকেই বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা—এবার হারানো যায়নি কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের যুবদলকে। আরিফুল ইসলামের টানা দুই শতক ছাড়া ব্যাটে-বলে মনে রাখার মতো তেমন পারফরম্যান্সও নেই দলের। সব মিলিয়ে শিরোপা জয়ের পরের আসরের ফলই যে এমন ভুলে যাওয়ার মতো হবে, সেটি বোধ হয় ভাবেননি কেউই।

সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষিক্ত হওয়া দশম ক্রিকেটার এনামুল
ছবি: রয়টার্স

তারপরও ২০২০ সালে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় সুখস্মৃতিই হয়েই থাকবে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো বাংলাদেশের যুবা ক্রিকেটাররা আকবর-শরীফুল-শামীম-ইমন-তানজীদ সাকিবদের অর্জনকে প্রেরণা হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেবেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে এখনো যেমন এক বাংলাদেশির অর্জন সবার প্রেরণা।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ইতিহাসে একটি জায়গায় বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থান এখনো ধরে রেখেছে। বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের অর্জন আজও অটুট। ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে এনামুল তাঁর ঘূর্ণি-জাদুতে তুলে নিয়েছিলেন ২২ উইকেট। এটি এখনো যুব বিশ্বকাপের এক সংস্করণে কোনো বোলারের সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার কীর্তি।

টেস্টে সবচেয়ে কমবয়সী বোলার হিসেবে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন এনামুল
ছবি: রয়টার্স

২০০৫ সালে এই এনামুল জুনিয়রই বড় অবদান রেখেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে। ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এনামুল এক টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সী বোলার (১৮ বছর ৪০ দিন) হিসেবে নিয়েছিলেন ন্যূনতম ১০ উইকেট (প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট)। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলার আগেই অবশ্য টেস্ট অভিষেক হয়ে গিয়েছিল এনামুলের। সেটি ২০০৩ সালের অক্টোবরে ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেটির মাধ্যমেও টেস্টে রেকর্ড বইয়ে একটা জায়গা পেয়ে যান তিনি। ১৬ বছর ৩২০ দিন বয়সী এনামুল ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট অভিষিক্ত হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে দশম।

চমক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হলেও দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা বড় করতে পারেননি এই বাঁহাতি স্পিনার। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তাঁর, খেলেছেন মাত্র ১৫টি টেস্ট। ১০টি মাত্র ওয়ানডে খেলেছেন ২০০৫ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারটা অবশ্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ তাঁর। ১৩৮ ম্যাচে নিয়েছেন ৫০৫ উইকেট। ১২৬টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ১৬৩ উইকেট। টেস্টে তাঁর উইকেটসংখ্যা ৪৪, ওয়ানডেতে ১৪।

২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল ভারত, নিউজিল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। ভারত, নিউজিল্যান্ড দুটি দলের কাছেই হেরেছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে একমাত্র জয়টি আসে স্কটিশদের বিপক্ষে। দ্বিতীয় পর্বে উঠতে ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ প্লেট পর্ব খেলে আয়ারল্যান্ড, উগান্ডা ও কানাডার বিপক্ষে। তিনটি ম্যাচই জিতে বাংলাদেশ উঠে যায় প্লেট পর্বের ফাইনালে। প্লেট ফাইনালে অপর গ্রুপের শীর্ষ দল অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারায় বাংলাদেশ। এনামুল হক নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

টেস্ট ক্যারিয়ারটাকে এনামুল দীর্ঘ করতে পারেননি
ছবি: এএফপি

এনামুল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে ২ উইকেট নিয়েছিলেন, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ৪ উইকেট। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের শেষ পাঁচ ম্যাচে (ভারত, কানাডা, উগান্ডা, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) ১৫ উইকেট নেন এনামুল।

১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রথম আসরে অস্ট্রেলিয়ার ওয়েইন হোল্ডসওয়ার্থ নিয়েছিলেন ১৯ উইকেট। ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানের লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদও। এনামুলের আগে (২০০৪) হোল্ডসওয়ার্থ আর মুশতাকই ছিলেন যুব বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট–শিকারি বোলার। এনামুল সেই রেকর্ড ভেঙে ২২ উইকেট নেন।

এনামুলের ১০ উইকেট প্রাপ্তি বাংলাদেশকে ২০০৫ সালে এনে দিয়েছিল প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের গৌরব
ছবি: এএফপি

এরপর ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ার বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াইন পার্নেল ১৮ উইকেট নিয়েছেন, এবার (২০২২) ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুব বিশ্বকাপে ১৭ উইকেট পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার দুনিথ ওয়েল্লালাগে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের রবি বিশনই। ১৬ উইকেট নিয়েছেন ১৯৯৮ সালে (দক্ষিণ আফ্রিকায়) ওয়েস্ট ইন্ডিজের রামনরেশ সারোয়ান ও জিম্বাবুয়ের মুল্লেকি এনকালা এবং অস্ট্রেলিয়ার জাভিয়ের ডোহার্থি (২০০২, নিউজিল্যান্ড) ও আরেক অস্ট্রেলিয়ান ময়েসিস হেনরিকস (২০০৬, শ্রীলঙ্কা)। ১৯ উইকেট আছে পাকিস্তানের রিয়াজ আফ্রিদিরও। তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন। পাকিস্তান সে আসরের শিরোপা জিতেছিল।