১০ ওভার শেষে রাজস্থান রয়্যালসের রান ছিল ১ উইকেটে ৭৭। ক্রিজে দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে জস বাটলারের রান ছিল ৩০ বলে ৩২, সঞ্জু স্যামসনের ১৭ বলে ২৫। এর আগের তিন ওভারে রান এসেছে মাত্র ১৭, চার এসেছে মাত্র ১টি। মনে হচ্ছিল, মোস্তাফিজুর রহমানের রাজস্থান বুঝি আজ ওয়ানডে গতিতে খেলার ব্যাপারে মনস্থির করেছে!
কিন্তু ভুলটা পরের ১০ ওভারে ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাটলার-স্যামসনরা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে শেষ ৮ ওভারে। ওই আট ওভারে ১২৬ রান তুলেছে রাজস্থান।
বাটলার পেয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি। তা-ও কী, ১৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৬৪ বলে করেছেন ১২৪ রান। ইনিংসে চার ১১টি, ছক্কা ৮টি! স্যামসন ২ রানের জন্য ফিফটি না পাওয়ার অতৃপ্তি নিয়ে আউট হলেও খেলেছেন প্রায় ১৫০ স্ট্রাইকরেটের ইনিংস। তাতে মোস্তাফিজদের লড়াইয়ের জন্য দারুণ একটা পুঁজিও হয়ে গেল। আইপিএলে মোস্তাফিজেরই সাবেক দল, প্রথম দলও—সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ২২১ রানের লক্ষ্য দিয়েছেন বাটলাররা।
ম্যাচের আগে সানরাইজার্স দলে একটা বড় বদল ঘটে গেছে। দলটা এবার মৌসুমের শুরু থেকেই ভালো করছে না, সেটির শাস্তি হিসেবে হঠাৎ অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো ডেভিড ওয়ার্নারকে।
শুধু অতটুকু হলেও কথা ছিল। আজ রাজস্থানের বিপক্ষে একাদশেও জায়গা হয়নি ওয়ার্নারের। তাঁর বদলে সানরাইজার্সের অধিনায়কত্ব করেছেন কেন উইলিয়ামসন।
কিন্তু উইলিয়ামসন কি আজ একটু ভুল করে ফেললেন? রাজস্থানের ইনিংসের পর এমন প্রশ্ন ওঠারই কথা। ইনিংসের ১১ ওভারের মধ্যেই দলের মূল বোলার, লেগ স্পিনার রশিদ খানের চার ওভার শেষ করে ফেলেছেন উইলিয়ামসন। রশিদ দারুণ বোলিং করেছেন, ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন ১টি। কিন্তু ১১তম ওভারে তাঁর বোলিংয়ের কোটা ফুরিয়ে যেতেই চেহারা বদলে ফেললেন বাটলার-স্যামসনরা। যেন রশিদকে দেখেশুনে পার করে দেওয়ার অপেক্ষাতেই ছিলেন তাঁরা!
সানরাইজার্স অধিনায়ক উইলিয়ামসন হয়তো রশিদকে দিয়ে রানের বান চেপে ধরতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি উইকেটও পড়ে গেলে তো সোনায় সোহাগাই হতো। সে ক্ষেত্রে শেষ দিকের ওভারগুলোতে আফগানিস্তানেরই মোহাম্মদ নবী, আর ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার, সন্দীপ শর্মা ও খলিল আহমেদের ওপর ভরসা করতে চেয়েছিলেন উইলিয়ামসন। কিন্তু ফাটকাটা কাজে আসেনি। নবী ১ ওভার করেছেন, দিয়েছেন ২১ রান! রশিদ খান ছাড়া বাকি পাঁচ বোলারের মধ্যে শুধু ভুবনেশ্বর কুমার ওভারপ্রতি গড়ে রান দিয়েছেন ১০-এর কম! ভুবনেশ্বরের ইকোনমি রেট ৯.২৫।
১১তম ওভারে রশিদের বোলিংয়ের কোটা শেষ হলো, তারপর বাটলারদের একটা ওভার লাগল একটু আড়মোড়া ভাঙতে। আড়মোড়া ভাঙা বলতে রশিদের শেষ ওভার, আর খলিলের করা ১২তম ওভারেও একটি করে চার মেরেছেন বাটলার-স্যামসন। ১২ ওভার শেষে রাজস্থানের রান ১ উইকেটে ৯৪। তখন কে জানত, ধেয়ে আসছে মরুঝড়!
১৩তম ওভারে সন্দীপ শর্মাকে দিয়ে শুরু। ওই ওভারে বাটলারের এক চার ও এক ছক্কায় এল ১৭ রান। পরের ওভারে খলিলের বলে এক চার ও এক ছক্কা হাঁকালেন স্যামসন, ওই ওভারে এল ১৪। রানে বাঁধ দিতে নবীকে এনেছিলেন হায়দরাবাদ অধিনায়ক উইলিয়ামসন, কিসের বাঁধ। জোয়ারের স্রোত তখন বাঁধ মানে না! বাটলার নবীকে রীতিমতো উড়িয়ে দিলেন। ওভারে দুই চার ও দুই ছক্কায় এল ২১ রান। নবী আর ওমুখো হননি!
ভুবনেশ্বর, বিজয় শংকর, সন্দীপ...এরপর বোলারের নাম বদলেছে। কিন্তু সবচেয়ে কম রান এসেছে শুধু শঙ্করের করা ইনিংসের শেষ ওভারে, ১১ রান। তা-ও ততক্ষণে বাটলার-স্যামসন দুজনই আউট হয়ে যাওয়ায়। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে শংকরের বলে আউট হওয়া স্যামসন করেছেন ৩২ বলে ৪৮ রান। বাটলারের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তাঁর জুটিটা হলো ৮৮ বলে ১৫০ রানের!
স্যামসন ফিরলেও বাটলার তো ছিলেন! স্যামসন ফেরার পরের বলে মারলেন চার, তার পরের বলে ১ রান নিয়ে পেলেন সেঞ্চুরি। মাঝে ভুবনেশ্বরের করা ১৮তম ওভারে ২ বলে মারতে পারেননি, নিয়েছেন মাত্র ২ রান। কিন্তু ১৯তম ওভারে সন্দীপকে পেয়ে আবার বেধড়ক পেটালেন বাটলার। শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৩টা ছক্কা ও ১টি চার মারলেন। এর মধ্যে একটি ছক্কা এসেছে নো বলে!
গতকাল চেন্নাইয়ের ২১৮ রান পোলার্ডের ঝড়ের কারণে যথেষ্ট হয়নি। আজ বাটলার ‘পোলার্ড’ বনেছেন, রাজস্থানের ২২০ রান যথেষ্ট হবে?