বিতর্ক নিয়ে ব্যস্ত ভারত ম্যাচের কথা ভুলে গিয়েছিল

আম্পায়ারিং নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিল ভারতছবি: এএফপি

কেপটাউন টেস্টে প্রথম ইনিংসে লিড পেয়েও হেরেছে ভারত। এই হারে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয়ের স্বপ্নটা এবারও পূরণ হয়নি কোহলিদের। তবে ম্যাচ নিয়ে গত দুই দিন খুব কমই আলোচনা হয়েছে। কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে যে ভারতীয় ক্রিকেটাররা সবাই হাজির হয়েছিলেন আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা নিয়ে। খেলার চেয়ে আম্পায়ারিং–বিতর্ক নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল ভারত দল।

টেস্টের তৃতীয় দিনে ডিন এলগারকে এলবিডব্লু দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু ডিআরএস সে সিদ্ধান্ত বদলে দেয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিরাট কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, লোকেশ রাহুলরা স্টাম্প মাইকের সামনে এসে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ডিন এলগার অবশ্য এতে কিছু মনে করেননি। তাঁর ধারণা, আম্পায়ারিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ম্যাচের কথা ভুলে গিয়েছিল ভারত।

এলগারকে আউট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ভারত
ছবি: এএফপি

তৃতীয় দিনে ২১২ রানের লক্ষ্যে নেমেছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। ১ উইকেটে ৬০ রান তুলে ফেলেছিল স্বাগতিক দল। তবে এই সিরিজে দুই দলই ভালো অবস্থান থেকে ব্যাটিং–ধসের মুখে পড়েছিল। আর কেপটাউনের উইকেট যেভাবে পেসারদের সুবিধা দিচ্ছিল, তাতে ম্যাচের রূপ যেকোনো সময়ই বদলে যেতে পারত। এ অবস্থায় ডিন এলগারকে আউট করে দেন অশ্বিন। খালি চোখে পরিষ্কার আউট বলেই মনে হয়েছিল। বল অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে প্যাডে যখন আঘাত হেনেছিল, তখন সেটা স্টাম্পের মধ্যেই ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক রিভিউ নেন।

ট্র্যাকিং দেখায়, বল প্যাডে ঠিকভাবেই লেগেছিল, কিন্তু বলের উচ্চতা সবাইকে চমকে দেয়। বলের সম্ভাব্য গতিপথ নাকি স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত। ডিআরএসের এই সিদ্ধান্ত মানতেই পারেননি কোহলি। ভারত অধিনায়ক স্টাম্প মাইকের কাছে মুখ নিয়ে সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা সুপারস্পোর্টের উদ্দেশে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বল বিকৃতির ঘটনাই (২০১৮ সালের মার্চে কেপটাউনে) শুধু না দেখিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররাও যে বল চকচকে (কোহলির ইঙ্গিত বল বিকৃতির দিকে) করেন, সেদিকে নজর দিতে। অধিনায়কের পথ ধরে অশ্বিনও দক্ষিণ আফ্রিকাকে জেতার জন্য অন্য উপায় খুঁজে নিতে বলেছেন। রাহুল বলেছেন, ১১ জনের ভারত দলের বিরুদ্ধে নেমেছে পুরো দেশ (দক্ষিণ আফ্রিকা)।

উত্তেজিত ভারতীয় বোলাররা এরপর লাইন–লেংথ মেনে বল করার কথাই ভুলে গেছেন। পরের ৮ ওভারে ৪০ রান তুলে জয়ের আরও কাছে চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কোহলিদের সবাই ডিআরএস নিয়ে ব্যস্ত থাকায় যে স্বাগতিকদের লাভ হয়েছে, সেটা অম্লানবদনে স্বীকার করেছেন এলগার, ‘আমাদের শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে এটা। বিশেষ করে গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা আরেকটু নিশ্চিন্তে রান নিতে পেরেছি এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে যত দরকার ছিল, তার সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে নিতে পেরেছি।’

মাঠে বরাবরই আগ্রাসী কোহলি
ছবি: এএফপি

পরদিনও আম্পায়ারদের যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে কোহলিদের। আরেকটি সিদ্ধান্তে ডিআরএস পক্ষে না পাওয়ায় আবার কথা শুনিয়েছেন কোহলি। স্বাগতিক দলের ৭ উইকেটের জয় তাতে আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। এলগারই তা বলছেন, ‘এটা আমাদের কাজে দিয়েছে। খুব চমৎকারভাবে আমাদের পক্ষে এসেছে। বেশ কিছু সময় ওরা ম্যাচের কথাই ভুলে গিয়েছিল এবং টেস্ট ক্রিকেটের আবেগপূর্ণ দিকটা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল।’

ডিআরএস–বিতর্ক নিয়ে এলগার নিজে যা বলেছেন, সেটা শুনলে অবশ্য কোহলিদের রাগ আরও বাড়তে পারে, ‘আমার খুব ভালো লেগেছে। এটা তো নিশ্চিত, একটা দল চাপের মধ্যে ছিল এবং সবকিছু ওদের পছন্দমতো হচ্ছিল না, অনেক দিন ধরে এমন কিছুর সঙ্গে (সবকিছু পছন্দমতো না হওয়া) পরিচয় নেই তাদের।’