বিপিএল ফাইনালে যেমন খেলার দেখা মেলে

সর্বশেষ বিপিএল জিতেছে রাজশাহী রয়্যালসফাইল ছবি
আজ ২০২২ বিপিএলের ফাইনাল। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মুখোমুখি হচ্ছে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। এর আগে দুটি শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা। ওদিকে এখনো শিরোপা ছোঁয়া হয়নি বরিশালের। অষ্টম বিপিএলের শিরোপা কে জিতবে, সেটির মীমাংসা হবে সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানদের ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে। তার আগে চলুন দেখে নেওয়া যাক আগের সাত ফাইনালে কী হয়েছিল।

২০১২

দাপট পাকিস্তানের

প্রথম বিপিএলের সেরা ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেরা তারকা অবশ্য ফাইনাল খেলার সুযোগ পাননি। সেমিফাইনালে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলার পরও হেরে বসেছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কাছে। খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে ৪১ বলে ৮৬ রান করেও হার মেনেছিলেন পাকিস্তানের আজহার মাহমুদের ৩৯ বলে ৬৫ রানের কাছে।

ফাইনালেও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের জয়জয়কার। বরিশাল বার্নার্সকে ফাইনালে তুলেছিলেন আহমেদ শেহজাদ। পাকিস্তানি ওপেনারকে ফাইনালে জ্বলে উঠতে দেননি শহীদ আফ্রিদি। দুই পাকিস্তানি আফ্রিদি ও সাঈদ আজমল ৮ ওভারে মাত্র ৪৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে বরিশালকে ১৪০ রানে আটকে দিয়েছিলেন। সে রান তাড়া করতে নেমে ইমরান নাজির ৪৩ বলে ৭৫ রান করে ২৬ বল আগেই ম্যাচ শেষ করে দিয়েছিলেন। এনামুল হক অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে। ৮ উইকেটের জয়ে প্রথম বিপিএল যায় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ঘরেই।

২০১৫ সালেই হ্যাটট্রিক হয়ে গেছে মাশরাফির
ফাইল ছবি

২০১৩

বিতর্কিত বিপিএলেও ঢাকাই সেরা

স্পট ফিক্সিং, খেলোয়াড়দের বেতন বকেয়া রাখা ইত্যাদি মিলিয়ে দ্বিতীয় বিপিএল আলোচনা ছড়িয়েছিল নেতিবাচক কারণে। অন্য সব দলের চেয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস ফাইনালেও দাপট দেখিয়েছে। টানা দ্বিতীয় ফাইনালে রানের দেখা পেয়েছেন এনামুল হক (৫৮)। সে সঙ্গে সাকিব (৪১) ও মোহাম্মদ আশরাফুলের (২৪) দুটি ইনিংস ১৭২ রান তুলেছিল ঢাকা। মোশাররফ হোসেনের স্পিনের সামনে পথ হারানো চট্টগ্রাম কিংস কোনো সুযোগই পায়নি। জেসন রয় (৪০) ও মাহমুদউল্লাহর (৪৪) ইনিংসও ১৭ ওভারের মধ্যে চট্টগ্রামের ১২৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারেনি।

২০১৫

মাশরাফির হ্যাটট্রিকে অলকের ঝলক

দুই বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে আবার ফেরে বিপিএল। প্রথম দুবার ঢাকার হয়ে শিরোপা জেতা মাশরাফি এবার ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের দায়িত্বে। তবে মাশরাফির হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় এসেছিল অলক কাপালির সুবাদে। ১৫৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ইমরুল কায়েসের অর্ধশতকের (৫৩) পরও কিছুটা বিপাকে পড়ে কুমিল্লা। ২৮ বলে ৩৯ রান করা কাপালি ইনিংসের শেষ বলে বরিশাল বুলসকে হারিয়েছেন। এবারও পরাজিত দলে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ (৪৮)।

২০১৭ ফাইনালে উঠেছিল গেইল-ঝড়
ফাইল ছবি

২০১৬

ডায়নামাইটসে বিস্ফোরিত কিংস

ঢাকা ডায়নামাইটসের ব্যাটিং জ্বলে ওঠেনি। এভিন লুইস (৪৫) ও কুমার সাঙ্গাকারা (২৬) ছাড়া কেউ ১৫ রানও পেরোতে পারেননি। আটে নামা সাকিব করেছিলেন ১২ রান।

১৬০ রানের লক্ষ্যে রাজশাহী কিংসের ব্যাটিং ছিল আরও বিদঘুটে। ওয়ানডে ছন্দে ব্যাট করে থিতু হয়েছিলেন মুমিনুল (২৭) ও সাব্বির রহমান (২৬)। প্রথম ১০ ওভার ২ উইকেট হারিয়ে ৬২ রান তোলার মাশুল ১০৩ রানে অলআউট হয়ে দিয়েছে রাজশাহী। দলটির আর মাত্র এক ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক পেরিয়েছিলেন।

২০১৭

গেইল+৩= ঢাকা

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে জনসন চার্লসকে আউট করেছিলেন সাকিব। কুমির আগ থেকেই ছিল, খাল কেটে হাঙরও ডেকে আনা হয়েছে তাতে। ইনিংসের বাকি ১৮.১ ওভারে বিচ্ছিন্ন হননি ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ২০১ রানের জুটিতে ৫১ রান এনে দিয়েছিলেন ম্যাককালাম। গেইল তাঁকে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে দেননি। ব্যাটিংয়ের জন্য তুলনামূলক কঠিন উইকেটেই ৫৯ বলে ১৪৬ রান করেছিলেন। পাঁচটি চারের সঙ্গে ১৮টি ছক্কা ছিল গেইলের। রংপুর রাইডার্স চড়ে ২০৬ রানের পাহাড়ে।

বোলিং করতে নেমে মাশরাফিদের বাড়তি কিছু করতে হয়নি। দুই শ তাড়া করার চাপই যথেষ্ট ছিল। ঢাকা ডায়নামাইটস ৯ উইকেটে ১৪৯ রান তুলতে পেরেছিল। জহুরুলের ৫০ রানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাকিবের ২৬। শহীদ আফ্রিদি (৮), কাইরন পোলার্ডরা (৫) ছিলেন ব্যর্থ।

২০১৯ সালের ফাইনালে ১৪১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তামিম
ফাইল ছবি

২০১৯

তামিম ঝড়ে উড়ল ঢাকা

ফাইনালের আগে খুব একটা ছন্দে ছিলেন না। ইমরুল কায়েসের হাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দিয়েছিলেন। ফাইনালেই নিজের রূপে দেখা দিলেন তামিম ইকবাল। তাঁর ৬১ বলে ১৪১ রানের ইনিংসের পাশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এনামুল হকের ৩০ বলে ২৪! ১০ চার ও ১১ ছক্কার ইনিংসে ৫০ বলে ১০০ ছুঁয়েছিলেন তামিম।

২০০ রানের লক্ষ্যে নেমেছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। কোনো রান তোলার আগেই সুনীল নারাইনকে হারায় দলটি। তবু দুর্দান্ত শুরু করেছিল ঢাকা। ৯ ওভারের মধ্যে ১০০ পেরোয় দলটি। কিন্তু ২৭ বলে ৪৮ করা থারাঙ্গা ফিরতেই ছন্দ হারায় দলটি। অধিনায়ক সাকিবও (৩) ব্যর্থ হন। ৩৮ বলে ৬৬ তুলে বিদায় নেন রনি তালুকদারও। পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেলরা শুধু আসা-যাওয়া করেছেন। ১৮২ রানে থামে ঢাকা।

২০২০

রাসেলে রাজ রাজশাহীর

ইরফান শুক্কুর (৫২) ভিত্তি এনে দিয়েছিলেন, বাকিটা আন্দ্রে রাসেল (১৬ বলে ২৭) ও মোহাম্মদ নওয়াজ (২০ বলে ৪১*) করেছেন। প্রথম ১০ ওভারে ৬৭ তোলা রাজশাহী রয়্যালস পায় ১৭০ রানের পুঁজি। জবাবে কখনোই জেতার আশা জাগাতে পারেনি খুলনা টাইগার্স। মোহাম্মদ ইরফান (২/১৮), রাসেল (৩২/২) ও কামরুল ইসলামদের (২/২৯) সামনে শুধু তিনজনই ২০-এর বেশি রান করেছেন। শামসুর রহমানের ৫২ ও রাইলি রুসোর (৩৭) পরিস্থিতির দাবি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিল।