বুমরাকে দেখে কপিলদের বোলিং সাধারণ ঠেকছে লারার

এবারের আইপিএলে অসাধারণ বোলিং করছেন জসপ্রীত বুমরা।ছবি: বিসিসিআই

খেলোয়াড়ি জীবনে দলের সেরা বোলার ছিলেন কপিল দেব। জাভাগাল শ্রীনাথের বেলায়ও তাই। যখন ভারতের হয়ে খেলেছেন, ছিলেন দলের সেরা বোলার। কপিল আর শ্রীনাথ দুজনের সময়েই খেলেছেন ভারতের আরেক পেসার মনোজ প্রভাকর। তিনি তো একই সময়ে দলের ব্যাটিং, বোলিং—দুটিই ওপেন করতেন। কিন্তু সেই সময়ের ভারতীয় পেস আক্রমণ খুব একটা পাত্তা পেত না প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পেস আক্রমণকে সমীহ করেই খেলতে হচ্ছে বিশ্বজোড়া সেরা সেরা ব্যাটসম্যানকে। বিশেষ করে জসপ্রীত বুমরার প্রশংসায় তো পঞ্চমুখ সাবেক–বর্তমান সবাই। টেস্ট, ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টি—তিন সংস্করণেই দাপটের সঙ্গে বোলিং করে যাচ্ছেন ভারতীয় ফাস্ট বোলার। ১৪ টেস্টে ২০.৩৩ গড়ে নিয়েছেন ৬৮টি উইকেট। ৫৪ ওয়ানডেতে ১০৪ উইকেট ২৪.৪৩ গড়ে। আর আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে তাঁর উইকেট ৫৯টি, গড় ২০.২৫।

জসপ্রীত বুমরাকে ভারতের সাবেক বোলারদের চেয়ে ভালো মানছেন ব্রায়ান লারা।
ছবি: বিসিসিআই

এবারের আইপিএলেও অসাধারণ বোলিং করছেন স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে ২১.৪০ গড়ে ২০৯ উইকেট পাওয়া বুমরা। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে ১৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ফাস্ট বোলার। ওই ম্যাচের পর তো আরেক দফায় বুমরা–বন্দনায় মেতেছে ক্রিকেট বিশ্ব। বাদ যাননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারাও। ভারতের দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান বলেছেন, বুমরার চেয়ে তিনি কপিল, শ্রীনাথ বা প্রভাকরের মুখোমুখি হতেই বেশি পছন্দ করতেন!

ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে লারা ছিলেন যেকোনো বোলারের জন্য আতঙ্কের এক নাম। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের (৪০০*) মালিক লারার মুখোমুখি হলে যেকোনো বোলারকেই হাত থেকে বল ছোড়ার আগে একটু ভাবতে হতো। কপিল, শ্রীনাথ ও প্রভাকর—তিনজনের বিপক্ষেই খেলেছেন লারা। কিন্তু খেলা হয়নি বুমরার বিপক্ষে। কপিল, শ্রীনাথ ও প্রভাকরদের দলে যদি বুমরা থাকতেন, তাহলে কী করতেন লারা? হাসতে হাসতেই উইন্ডিজ কিংবদন্তি উত্তর দিলেন, ‘বুমরার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে আমি কপিল দেব, জাভাগাল শ্রীনাথ ও মনোজ প্রভাকরকে খেলতেই পছন্দ করতাম!’

বুমরার বোলিংয়ে মুগ্ধ ব্রায়ান লারা।
ছবি: বিসিসিআই

গ্লেন ম্যাকগ্রা, শোয়েব আখতার, অ্যালান ডোনান্ড...ক্যারিয়ারে কম ফাস্ট বোলারের মুখোমুখি হননি লারা। তবে বুমরার বোলিংটা একটু অন্য রকমই। লারার কথা, তাঁর সময়েও এমন বোলার ছিল, ‘এটা ঠিক যে বুমরার মুখোমুখি হওয়ার চ্যালেঞ্জটা একটু অন্য রকম হতো। আমার সময়েও এ রকম একজন ছিল, এই যেমন মাখায়া এনটিনি। সেও একই অ্যাঙ্গেলের ডেলিভারি দিত। তাই বলি, আমি যাদের বিপক্ষে খেলেছি, তাদের কারও কারও সঙ্গে (বুমরার) তুলনা করা যেতে পারে।’

এবারের আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের ‘বেগুনি টুপি’ এখন বুমরার অধিকারে। ২৭ উইকেট নিতে তিনি খুব বেশি রান যে দিয়েছেন, তা–ও নয়। এবারের আইপিএলে তিনি ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৬.৭১ করে। গড়টাও চোখে পড়ার মতো, ১৩.৯২। এবারের আইপিএলে বুমরা ছাড়াও লারার নজর কেড়েছে রাজস্থান রয়্যালসের ফাস্ট বোলার জফরা আর্চার।

টেস্ট, ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি—তিন সংস্করণেই সফল এক ফাস্ট বোলার জসপ্রীত বুমরা।
ছবি: বিসিসিআই

সময়ের সেরা ফাস্ট বোলারদের মধ্যে বুমরা আর আর্চারকে একটু এগিয়েই রাখতে চান লারা, ‘ক্রিকেটের যেকোনো যুগেই বুমরা আর আর্চার ওপরের সারিতে থাকবে। তা তারা একুশ শতকের প্রথম দশক, নব্বই, আশি বা এমনকি সত্তরের দশকে খেললেও। অতীতের কাউকে ছোট করতে চাই না আমি। কিন্তু এই দুজন আমার খেলা বা দেখা যেকোনো যুগের ক্রিকেটের ফাস্ট বোলিংয়েই ওপরের সারিতে থাকত।’

ভারতের আরেক ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামিকে নিয়েও উচ্ছ্বসিত অনেকেই। বুমরার মতো তিনিও সব সংস্করণেই ভালো বোলিং করে যাচ্ছেন। সব সংস্করণেই এত ভালো কীভাবে করছেন বুমরা আর শামি? লারার ব্যাখ্যাটা এ রকম, ‘ওদের এই সফলতার কারণ একটাই—ওরা দুজনেই টেস্ট ও টি–টোয়েন্টিতে একই লেংথে বোলিং করতে পারে। ওদেরকে আপনি খুব বেশি স্লোয়ার বোলিং করতে দেখবেন না। ওরা সিমের ওপর বোলিং করতে চায় আর বল করে স্টাম্প বরাবর। ব্যাটের প্রান্ত লক্ষ্য করে বোলিং করে তারা। ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলতে শর্ট বলটাও ভালোই করতে পারে ওরা।’