বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী সত্যি হচ্ছে আইপিএলে

পারফরম্যান্স বৃদ্ধির প্রযুক্তিতে বলীয়ান হয়ে নামছে রাজস্থান।ছবি: আইপিএল

খেলোয়াড়েরা বরাবরই নতুন নতুন উপায় খুঁজছেন। পারফরম্যান্স ভালো করার উপায় হিসেবে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বৈধ উপায় খুঁজে ফিরছেন সবাই। কেউ বরফে স্নান করেন দ্রুত সেরে ওঠার জন্য। কেউ সনা থেরাপি নেন। কেউবা ম্যাসাজ করান। অলিম্পিকের সময় কাপিং বা আকুপাংচার পদ্ধতির ব্যবহারও দেখা গেছে। অক্সিজেন চেম্বার কিংবা অ্যান্টি অক্সিডেটিভ খাদ্য গ্রহণ করেন অনেকেই।

সবগুলো পদ্ধতিই ভালো। খেলার পর শরীরে যে ধকল যায়, সেটা দ্রুত সারিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি এগুলো। কিন্তু খেলার সময়ই যদি ধকল সারিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে তো আর পরের ম্যাচ নয়, চলতি ম্যাচেই এর প্রভাব কাজে লাগাতে পারবে দল। আর সে কাজটাই করার চেষ্টা করছে রাজস্থান রয়্যালস। খেলোয়াড়দের চাঙা করতে বায়ো-সিরামিকযুক্ত জার্সি আর ট্রাউজার পরিয়ে পাঠাচ্ছে মাঠে। কারণ, এই বিশেষ জার্সি থেকে ফার ইনফ্রারেড শক্তি পাওয়া যায়, যা শরীরের কোষ সেরে তোলায় ভূমিকা রাখে।

ওপরের বাক্যটা পরে ভ্রু কুঞ্চিত হলে চিন্তার কিছু নেই। কারণ, এ ধরনের কিছু যে হতে পারে এবং সেটাও ক্রিকেটে; এমনটা কেউ কিছুদিন আগেও যে ভাবতে পারেনি। কাপড়ের সুবাদে কারও শক্তি পুনরুদ্ধার হচ্ছে, শুনলেই তো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হয়। কিন্তু আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালস সে কাজটাই করছে।

সিরামিক ও মিনারেল অক্সাইড মিশিয়ে সৃষ্টি করা হয় বায়ো-সিরামিক। ১৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেটা উত্তপ্ত করা হয় এবং তারপর সেটা ঠান্ডা করা হয়। এর ফলে এই বস্তু থেকে বিকিরণ বের হয় যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ফার ইনফ্রারেডের সীমায় থাকে। এই ফার ইনফ্রারেড বা এফআইআর বহুদিন ধরেই থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়। কারণ এ রশ্মি পেশির ভেতর ঢুকে হালকা উত্তাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

ইউরোপের ফুটবল লিগগুলোর শীর্ষ দলগুলো এরই মাঝে এফআইআর সনা ব্যবহার করছে। কিন্তু আরেক ধাপ এগিয়ে পোশাকে এই প্রযুক্তি আনা হয়েছে। যাতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো মুহূর্ত নয়, চাইলে সব সময় এফআইআর থেরাপি নেওয়া যায়। এ ব্যাপারে রাজস্থান ফিজিও জন গ্লস্টার জানিয়েছেন, ‘শরীর থেকে ইনফ্রারেড বিকিরণ বের হয়। এফআইআর পোশাক যা করছে সেটা হলো এই ইনফ্রারেডটা ধরে রাখছে এবং সেটাকে এফআইআরে রূপান্তরিত করছে। এরপর সেটাকে প্রতিফলিত করে আবার শরীরে পাঠাচ্ছে। দেহে অক্সিডেটিভ এর প্রভাবে ব্যথা হয়, এবং শরীর ফুলে ওঠে, চাপা ব্যথা থাকে। এফআইআর অক্সিডেটিভ কমাতে পারে, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটা শরীরে কোষের গঠনে প্রভাব রাখে, যা সেরে ওঠায় ভূমিকা রাখে। এ দুটি বিষয় পেশির ব্যথা কমানো ও রক্তে সঞ্চালন বাড়ায় প্রভাব রাখে। এর ফলে শুধু যে দ্রুত সেরে ওঠা যায়, তাই না। সঙ্গে ঘুমও ভালো হয়। যেকোনো অ্যাথলেটের জন্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ।’

রাজস্থান প্রথম দল হিসেবে আইপিএলে এই প্রযুক্তি আনলেও বেশ আগ থেকে রাগবিতে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ৪৩ বছর বয়সেও কোয়ার্টারব্যাক পজিশনে খেলছেন টম ব্র্যাডি। এনএফএলের এই তারকা ২০১৭ সাল থেকেই এফআইআর পোশাক ব্যবহার করছেন নিজেকে ফিট রাখার জন্য।

২০১৬ সালে ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা দেশটির অনূর্ধ্ব-২০ দলের এক টুর্নামেন্টে এ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে দেখেছেন টানা তিন দিন অন্তত ১০ ঘণ্টা এ পোশাক পরে ঘুমালে পেশির ব্যথা কমে যাচ্ছে। এর আগে ফিনল্যান্ডে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের অ্যাথলেটদের মধ্যে গবেষণা চালিয়েও ধকল কমার প্রমাণ মিলেছিল।

বৈধ উপায়ে পারফরম্যান্সে প্রভাব রাখতে পারার মতো এমন সুবিধা তাই হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না লস্টার, ‘এই পোশাক পরলে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ে মাত্র এক শতাংশও ব্যবধান গড়ে দেয়। আর যদি অনেকগুলো এক শতাংশ যুক্ত করেন সেটা অনেক বড় একটা সংখ্যা হয়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনাকে কিছু করতে হচ্ছে না। শুধু অন্য সব পোশাকে যেমন পরে নামতেন ঠিক তেমনি এফআইআরযুক্ত পোশাক পরে নামলেই হচ্ছে।’

ভিআইপি গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের জার্সিতেও এফআইআর প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে কি?
ছবি: আইপিএল

বৈজ্ঞানিকভাবে পারফরম্যান্স ভালো করার সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবে এর প্রমাণ এখনো দিতে পারছে না রাজস্থান। আজও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে গেছে তারা। ৭ উইকেটের এই হারে ৯ ম্যাচ শেষেও ৬ পয়েন্ট তাদের। আইপিএলের পয়েন্ট তালিকায় এখন শেষ থেকে দুইয়ে আছে রাজস্থান।