‘বোমাবাজ’ বলে ডাকা হতো মুসলিম ক্রিকেটারকে

জোহেব শরীফ (সবার ডানে)ছবি : টুইটার

বর্ণবাদ বিতর্কে উত্তাল ইংলিশ ক্রিকেটাঙ্গন।


সম্প্রতি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইংলিশ ক্রিকেটার আজিম রফিকের বর্ণবাদের অভিযোগটি আবার সামনে উঠে এসেছে। ২০০৯ সালে ইয়র্কশায়ারে বর্ণবাদের শিকার হন বলে দাবি করেন কাউন্টি দলটির সাবেক অধিনায়ক রফিক। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ইয়র্কশায়ারজুড়ে। ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন ইয়র্কশায়ার চেয়ারম্যান রজার হাটন। একই অভিযোগে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ব্যাটসম্যান মাইকেল ভনকে নিজেদের রেডিও শো থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিবিসি। এর মধ্যেই আরেক অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন জোহেব শরীফ নামের সাবেক এক ক্রিকেটার।

বর্ণবাদ বিতর্ক উসকে দিয়েছেন আজিম রফিক
ছবি: রয়টার্স

পূর্ব লন্ডনে জন্ম নেওয়া শরীফকেও বর্ণবাদী আচরণের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলা যখন হয়, শরীফ তখন এসেক্সের খেলোয়াড়। ৯/১১-এর পরদিন থেকেই অনুশীলনে শরীফকে ‘বোমাবাজ’ বলে ডাকা শুরু করেন সতীর্থরা। শরীফের সতীর্থরা ব্যাপারটাকে নিছক ফাজলামো হিসেবে দেখলেও শরীফের কাছে ব্যাপারটা বর্ণবাদ ছাড়া কিছু মনে হয়নি।

শুধু তা–ই নয়, শরীফকে ‘কারি মাঞ্চার’ও ডাকা হয়েছে। উপমহাদেশের মানুষদের হেয় করার জন্য পশ্চিমারা এই বিশেষ নাম ব্যবহার করে থাকে। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য মিররকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শরীফ জানিয়েছেন এসব, ‘সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখের পর থেকেই এই অভিজ্ঞতা শুরু হয় আমার। সতীর্থরা আমাকে বোমাবাজ বলে ডাকা শুরু করে। শুধু তা–ই নয়, তখন কারি মাঞ্চার বলে ডাকার বিষয়টিও ওদের কাছে অনেক স্বাভাবিক ছিল।’


আজিম রফিকের মুখ খোলার কারণেই নিজের অভিজ্ঞতাকে সবার সামনে নিয়ে আসার সাহস পেয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত শরীফ, ‘রফিকের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতায় অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছি। যা হচ্ছে, তাতে রফিক খুব ভালোভাবে সবার নজরে এনেছে।’

ভনের নামও জড়িয়েছে এই বিতর্কে
ছবি: টুইটার

২০০১ সালের ঘটনা এত দিন পর কেন তুলে আনলেন, এ প্রসঙ্গে শরীফ বলেছেন, ‘সে সময় আমি কিছু বলিনি। সে সময়ে ড্রেসিংরুমের তরুণ সদস্য ছিলাম। তাঁদের কাছে এসব বিষয় ঠাট্টা ছিল। কিন্তু আমার কাছে ছিল না। কিন্তু ওই সময়ে আপনি এমন কিছু করতে চাইবেন না, যাতে মূল দলে যাওয়ার সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়।’


পূর্ব লন্ডনের লেটনস্টোনে জন্ম শরীফের। বাবা-মা পাকিস্তানের। আর সেটাই কাল হয়েছিল তাঁর জন্য। আট বছর বয়স থেকে এসেক্সের হয়ে খেলা শুরু করেন, মূল দলের হয়ে ২০০১ সালে অভিষেক হয় তাঁর। মূল দলের হয়ে মাত্র চার ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। অথচ এসেক্সের দ্বিতীয় দলে ২০০৪ সালে ১০১ গড়ে রান করেছেন, ২০ উইকেটও পেয়েছিলেন। তাও নিজের শেকড়ের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাননি শরীফ, ‘কমিটির এক সদস্য আমাকে বলেছিলেন, যত যাই করো না কেন, মূল দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাবে না। ভালো হয়, যদি তুমি অন্য কোনো দেশে চলে যাও। কখনো কখনো মনে হতো, ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার স্বপ্নটা আমি আমার গায়ের রঙের জন্য হারাচ্ছি।’

নামাজ পড়ার জন্যও জায়গা পেতেন না ৩৮ বছর বয়সী রফিক, ‘মুসলিম হিসেবে নামাজ পড়ার জন্য মাঠের এক কোনা বেছে নিতাম। সেখানে আমাকে নামজ পড়তে দেওয়া হতো না। এক সিনিয়র খেলোয়াড় বলতেন, এভাবে নামাজ পড়লে দেখতে খারাপ লাগে। তাই আমি গাড়ির মধ্যেই নামাজ পড়তাম।’


শরীফের এমন অভিযোগ বর্ণবাদ আগুনে আরও সলতে দেবে নিশ্চিত!