‘ব্যাঙ লাফ’ দিয়ে ভারতীয় উইকেটকিপারকে দাওয়াত খাইয়েছিলেন মিয়াঁদাদ

১৯৯২ বিশ্বকাপে সিডনিতে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ভারত। এরপর থেকে অবশ্য বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানো একপ্রকার নিয়মই বানিয়ে ফেলেছে ভারত। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ভারতের জয়—এটা একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু ২৯ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি জয়-পরাজয় ছাপিয়েও আলোচিত এক ‘ব্যাঙ লাফ’ কে কেন্দ্র করে।

সে ম্যাচে ভারতীয় উইকেটকিপার কিরন মোরে আর পাকিস্তানের কিংবদন্তি তারকা জাভেদ মিয়াঁদাদের মুখোমুখি কথার লড়াই ইতিহাস হয়ে আছে। ক্রিকেট ইতিহাসের ‘আইকনিক’ ছবি হয়ে আছে মোরের সামনে মিয়াঁদাদের সেই ব্যাঙ লাফের দৃশ্য। মোরের কথার তিরে অতিষ্ঠ হয়েই মিয়াঁদাদ সেদিন এমন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড করেছিলেন—সেটি তিনি অনেকবার বলেছেন। মোরে অবশ্য সেই ‘ব্যাঙ লাফ’ নিয়ে সম্প্রতি জানিয়েছেন এক মজার তথ্য।

সিডনিতে সেদিন কথার লড়াইয়ে মুখোমুখি মিয়াঁদাদ আর মোরে নাকি এরপর বেশ কয়েকবার নিজেদের মধ্যে সেই ঘটনা আলোচনা করে হো হো করে হেসেছেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পরপরই মোরে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেটি জানতে পেরে মিয়াঁদাদ তাঁকে ফোন করে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানান। ‘বড়ে মিয়া’র বাড়িতে ভোর চারটা পর্যন্ত খোশগল্পে মেতেছিলেন দুজন। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সেই ঘটনাটি মনে করে হেসেছেন তাঁরা।

আসলে সেদিন কী ঘটেছিল! এত বছর ধরে বহুবার আলোচিত সেই ঘটনাটির কথা নতুন করে বলেছেন মোরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গতি তারকা কার্টলি অ্যামব্রোসের ইউটিউব চ্যানেলে এক আলাপচারিতায় মেরে বলেছেন, ‘সবাই মনে করে মিয়াঁদাদের সঙ্গে বোধ হয় আমার চিরদিনের ঝগড়া। কিন্তু আসল কথা হলো, আমরা দুজনই খুব ভালো বন্ধু। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পরপরই আমি পাকিস্তান গিয়েছিলাম। মিয়াঁদাদ আমাকে ফোন করে তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। আমরা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে ভোর চারটা পর্যন্ত আড্ডায় মেতেছিলাম। যতবার মিয়াঁদাদের সেই “ব্যাঙ লাফের” প্রসঙ্গ এসেছে, ততবার আমরা হো হো করে হেসেছি। অনেক মজা করেছি সেদিন।’

জাভেদ মিয়াঁদাদ।
ছবি : এএফপি

মোরে বলেন, ‘আমি মিয়াঁদাদকে উত্ত্যক্ত করছিলাম। সে পাকিস্তান দলের সেরা ব্যাটসম্যান। আমার লক্ষ্য ছিল তাকে রান করতে না দেওয়া। জানতাম সে পিঠের চোটে ভুগছে। তাই বোলারদের বারবার বলছিলাম, তাকে শট খেলার জায়গা না দিতে। শর্ট বল করলেই সে কাট করছিল। অসম্ভব মেধাবী ব্যাটসম্যান মিয়াঁদাদ। আমি এ নিয়েই বলছিলাম।’

এক সাক্ষাৎকারে মিয়াঁদাদ বলেন, ‘মোরে সেদিন এমনভাবে আবেদন করছিল প্রতিটি বলে, মনে হচ্ছিল যেন সে আম্পায়ারের কাছে টাকাপয়সা ভিক্ষা চাচ্ছে।’ ম্যাচটা যে প্রচণ্ড চাপের ছিল, সেটা অ্যামব্রোসের ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন মোরে, ‘আমরা দুজনই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো একটা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ খেলতে নেমেছিলাম। দুজনই চাপে ছিলাম। ম্যাচটার আগে মিডিয়াতে বহু লেখালেখি হয়েছে। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেদিন যত দর্শক ছিল, সবাই খুব আওয়াজ করছিল। আমরা তেতে ছিলাম। আমরা জানতাম, ম্যাচটা হেরে গেলে ভারতে ফেরাটাই আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠবে।’

মাঠে দুজনের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, সেগুলোও বলেন মোরে, ‘মিয়াঁদাদ একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘মোরে, এত চিন্তা করছ কেন! ম্যাচটা আমরাই জিতছি।’ আমি উত্তরে বললাম, ‘আরে, জিতব আমরাই। তুমি জাহান্নামে যাও।’

কিরণ মোরে এখন
ফাইল ছবি

এই সময় শচীন টেন্ডুলকারের একটি বল খেলতে গিয়ে মিস করেন মিয়াঁদাদ। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে মোরে সেটি ধরেন। তিনি উচ্চ স্বরে আবেদন করেন। এমনভাবে আবেদন করেন যেন বলটি মিয়াঁদাদের ব্যাট ছুঁয়ে সেটি তাঁর গ্লাভসে এসেছে। ঠিক এই সময়ের ঘটনা বর্ণনা করেছেন মোরে, ‘সে আমার দিকে ফিরে বলল, “চুপ কর!” আমিও তাকে সে কথাটিই ফেরত দিলাম। মিয়াঁদাদ আম্পায়ার ডেভিড শেফার্ডকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগও করে যে আমি তাকে বিরক্ত করছি। পরে একটি বলে মিয়াঁদাদকে রান আউট করার একটা সুযোগ আসে। আমি বলটা ধরে স্টাম্প ভাঙার একটা ভঙ্গি করলাম। সেই সময় আমি একটা ছোট্ট লাফ দিয়েছিলাম। এরপর আমার দিকে ফিরে মিয়াঁদাদ হঠাৎ করেই ব্যাঙের মতো লাফাতে শুরু করে।’