ব্যাটিং-জড়তাই হারিয়েছে বাংলাদেশকে

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেননি বলে মনে করছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদপ্রথম আলো ফাইল ছবি

হারের হতাশা দিয়েই শুরু হলো বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যদিও আমি মনে করি, স্কটল্যান্ডের ১৪০ রান তাড়া করে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত ছিল। যে কেউই তা বলবে। এ ছাড়া মাসকাটের উইকেট যেমন দেখলাম, লক্ষ্যটাকে মোটেই কঠিন বলা যাবে না। বাংলাদেশ তবু পারেনি। হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে বললে আমি এক কথায় বলব, ব্যাটিং–জড়তাই আমাদের হারিয়েছে।

আমি আগেও বলেছি, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি সিরিজে আমাদের ব্যাটিং ভালো ছিল না। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশিত রান পায়নি। এরপর দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ হেরে আমাদের ব্যাটসম্যানরা যেন নিজেদের আরও খোলসে গুটিয়ে নিয়েছে। এ কারণেই ব্যাটিং পাওয়ার প্লের ৬ ওভার সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কিছু শট লক্ষ করলে দেখবেন ওরা যেন একটু দ্বিধায় ছিল যে শট খেলবে কি খেলবে না।

মুশফিকুর রহিমকে (ছবিতে নেই) ফিরিয়ে ক্রিস গ্রিভসের উল্লাস
ছবি: এএফপি

শুরুতে দুই উইকেট হারানোর পর সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম ইনিংস গড়ার চেষ্টা করেছে। ওরা খেলার ছন্দটা ধরেও ফেলেছিল। কিন্তু থিতু হয়ে যখন রান বাড়ানোর সময় হলো, তখনই দুজন আউট হয়ে গেল। মুশফিকের ওই সময়ে এমন বাজে শট খেলা উচিত হয়নি। ওর মতো অভিজ্ঞ একজন ব্যাটসম্যানের উচিত ছিল আরও কিছুক্ষণ উইকেটে থাকা, নিজের ইনিংসটাকে আরও বড় করা। সেটা না করে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বাড়িয়ে বাজে শট খেলে আউট হয়ে গেল। সাকিবও একটি বাজে বলে আউট হয়ে ফিরেছে।

আমি অবশ্য স্কটল্যান্ডের বোলারদেরও কৃতিত্ব দেব। ওরা খুব নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে। ইনিংসের যে সময়ে যেমন বোলিং করা উচিত, ঠিক তেমন বোলিংটাই করতে পেরেছে। অমন বোলিংয়ের বিপক্ষে আমাদের ব্যাটিং যেমন হওয়ার কথা ছিল, তেমন হয়নি। ব্যাটিংয়ে পরিকল্পনার ছাপ চোখে পড়েনি। এ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট ও খেলোয়াড়দের আরও ভাবতে হবে।

আমাদের বোলিংটা শুরুতে গোছানোই ছিল। বিশেষ করে মেহেদী হাসান খুবই বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করেছে। ওর বোলিং দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ভালো বোলিংয়ের প্রতিদানও সে পেয়েছে। মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছে। সাকিবও ভালো বোলিং করেছে। এই দুজনের ভালো বোলিংয়ে ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্কটিশরা। তবে সেখান থেকে ওরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটা ঠিক যে সপ্তম উইকেটে দুর্দান্ত একটি জুটি গড়েছে স্কটিশরা, কিন্তু আমাদের বোলাররাও যেন রশিটা আলগা করে দিয়েছিল তখন।

বাংলাদেশের বোলাররা শুরুর চাপটা ধরে রাখতে পারেনি
ছবি: এএফপি

পেসাররা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো বোলিং করতে পারেনি। একটু বেশিই রান দিয়ে ফেলেছে, বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহরও অবশ্য কিছু দায় আছে। আমরা অতীতেও দেখেছি যে তাসকিন ইনিংসের শেষের দিকে বোলিং করায় খুব একটা স্বচ্ছন্দ নয়। ওর ওভারগুলো ১৫–১৬ ওভারের মধ্যেই শেষ করে দিলে ভালো হতো। শেষ চারটি ওভার মোস্তাফিজ ও সাইফউদ্দিনকে দিয়ে করানো উচিত ছিল। তবে সবকিছুর পরও আমি বলব, ব্যাটিংয়ের কারণেই হেরেছে বাংলাদেশ।

এমন একটি হারের পর টিম ম্যানেজমেন্টকে লক্ষ রাখতে হবে খেলোয়াড়দের মনটা যেন চাঙা থাকে। এমনিতেই ‘ছোট’ দলের কাছে হারলে খেলোয়াড়দের মন খুব খারাপ থাকে। এর ওপর সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার তির ছুটে আসবে। এসব দেখে খেলোয়াড়দের মন আরও ভেঙে যেতে পারে। সেটার প্রভাব পড়তে পারে পরের ম্যাচে। ওমানের বিপক্ষে কালকের ম্যাচে যেন এ হার কোনো প্রভাব না ফেলে, সেটা লক্ষ রাখতে হবে। ওমানও কিন্তু সহজ প্রতিপক্ষ নয়।