ব্যাটে নায়ক বোলিংয়েও নায়ক—রাজশাহীর মেহেদী

ব্যাটের পর বল হাতেও দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাজশাহীর মেহেদী হাসানের।ছবি: শামসুল হক

জয়ের জন্য ওভারপ্রতি রান তুলতে হবে সাড়ে ৮। উইকেট খুব কঠিন তা মনে হয়নি। মাঝে-মধ্যে বল একটু উঠেছে-নেমেছে, এই যা! শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে এ নতুন কিছু না। তবু মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর মতো ঢাকার শুরুও ভালো হয়নি। প্রথম ৫ ওভারে রান রেট ভালো থাকলেও (৩৮) তুলতে ২ উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে গিয়েও পারেননি। শেষ দিকে রোমাঞ্চ ভর করা ম্যাচে ২ রানে জিতে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে শুভসূচনা করেছে রাজশাহী।

দল বিপদে পড়লে মুশফিকের বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের অভ্যাস পুরোনো। জাতীয় দলে তা বহুবার দেখা গেছে। আজ তাঁকে একই ভূমিকায় দেখা গেল ঢাকার অধিনায়ক হিসেবে। চতুর্থ উইকেটে মুশফিক এবং আকবর আলীর ৭১ রানের জুটিতে ভর করে মূলত জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ঢাকা। দলের বিপদে লড়াইয়ের অভ্যাস আকবরেরও মজ্জাগত থাকলেও ২৯ বলে ৩৪ রান করে তিনি আউট হন চাপের মুহূর্তে।

চাপটা হলো বলের চেয়ে রানসংখ্যার এগিয়ে থাকা। ১৫.৪ ওভারে আকবর যখন আউট হলেন ২৬ বলে ৪৪ রানের দূরত্বে ছিল ঢাকা। এমন মুহূর্ত সাব্বির রহমানের মতো ব্যাটসম্যানের জন্য আদর্শ। সঙ্গে দরকার ছিল মুশফিকের ক্রিকেটীয় বুদ্ধি। কিন্তু দল চাপে থাকে (১৮ বলে ৩৬ রান দরকার) মুশফিক নিজেই যেন ‘আত্মাহুতি’ দিলেন! পেসার ইবাদত হোসেনকে উইকেটের পেছনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন রাজশাহীর উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানকে। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৪ বলে ৪১ রান করে আউট হওয়া মুশফিকের এই ইনিংস ঢাকার সমর্থকদের আক্ষেপই শুধু বাড়াবে।

জয়ের পর মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী দল।
ছবি: প্রথম আলো

ইবাদতের করা ১৮তম ওভারে মূলত পিছিয়ে পড়ে ঢাকা। ওই ওভারে ১ উইকেটের সঙ্গে মাত্র ৬ রান দেন জাতীয় দলের এই পেসার। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১২ বলে ৩০ রান। সাব্বিরের সঙ্গে ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ মুক্তার আলী।

১৯তম ওভারে ফরহাদ রেজাকে উল্টো চাপে ফেলে প্রয়োজনীয় রান আদায় করে নেন মুক্তার। প্রথম বলে জায়গা করে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ‘ফ্লিক’ করে মারা তাঁর ছক্কাটা ছিল দেখার মতো। মাঝে দুই বল পর ফুল টসে আবারও ছক্কা! এবারও মিড উইকেট। পরের বলে লং অন দিয়ে মারা তৃতীয় ছক্কাটা মোড় ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের। এই ওভারে ২১ রান আদায় করে শেষ ওভারে লক্ষ্যটা ৯ রানে নামিয়ে আনেন মুক্তার-সাব্বির। এর মধ্যে মুক্তার একাই তুলেছেন ২০ রান। কিন্তু নাটকের তখনো শেষ অঙ্ক বাকি।

ব্যাট হাতে রাজশাহীর সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন মেহেদী।
ছবি: প্রথম আলো

শেষ ওভারে (৬ বলে ৯ রান) অলরাউন্ড স্পিনার মেহেদী হাসানের হাতে বল তুলে দেন রাজশাহী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। রাজশাহীর ব্যাটিংয়ে চাপ সামলে ফিফটি তুলে নেওয়া মেহেদী বোলিংয়েও দিয়েছেন দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। প্রথম তিন বলে মুক্তারের পায়ে বল করে মেহেদী কোনো রান দেননি। পরের বলে চার আদায় করে নেন মুক্তার। পঞ্চম ডেলিভারিতে ‘নো বল’ করায় উত্তেজনা ভর করে মাঠে। এমন সময় ফ্রি হিট! অবিশ্বাস্যভাবে এই ডেলিভারিতেও মেহেদী ব্যাটসম্যানকে রান নিতে দেননি, পরের বলেও না! মেহেদীর দুর্দান্ত বোলিংয়েই ২ রানের জয় পায় রাজশাহী। বিফলে যায় মুক্তারের ১৫ বলে ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। দলকে জয়ের সুবাস পাইয়ে শেষ কাজে ব্যর্থ হওয়ায় মুক্তার নিজেকেই তুলতে পারেন কাঠগড়ায়।

এর আগে পঞ্চম ওভারে উইকেটে আসেন মুশফিক। খেলেছেন নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে। রাজশাহীর স্পিনারদের বল তেমন বাঁক না নেওয়ায় রান চুরি করতে মুশফিকের কোনো সমস্যা হয়নি। তবে নিজের জায়গায় বল পেলে ছাড়েননি। আরাফাত সানিকে যেমন ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন সুইপে। আবার রাজশাহীর পেসার মুকিদুলকে মেরেছেন কাভার অঞ্চল দিয়ে। তবে সানিকে একটু এগিয়ে এসে জায়গা করে ইনসাইড আউটে কাভারের ওপর দিয়ে মুশফিকের মারা ছক্কাটা ছিল দেখার মতো। কিন্তু চাপ সামলাতে পারেননি মুশফিক নিজেও। ২৬ রান এসেছে মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাট থেকে।

রাজশাহীর হয়ে মেহেদী-ই সেরা বোলার। ২২ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। ব্যাট হাতেও রান পাওয়ায় এবং ভীষণ চাপের মুহূর্তে বল হাতে ম্যাচ বের করায় ম্যাচসেরা কে তা না বললেও চলে!