ব্যাটে-বলে অনবদ্য সাকিব

তামিম দারুণ ব্যাটিং করলেও ব্যাটে-বলে সাকিবের পারফরম্যান্সই বেশি নজর কেড়েছে। ছবি: এএফপি
তামিম দারুণ ব্যাটিং করলেও ব্যাটে-বলে সাকিবের পারফরম্যান্সই বেশি নজর কেড়েছে। ছবি: এএফপি
>বাংলাদেশের ১২ রানের জয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন সাকিব আল হাসান। ৬০ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক

৩৮ বলে ৬০ রানের ইনিংস। সেটিও আবার দলের ভীষণ প্রয়োজনের মুহূর্তে। যখন রানের গতি বাড়াতে হবে, ঠিক সে সময়েই। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়েই তেমন একটি ইনিংস খেলেছেন সাকিব আল হাসান। এরপর বোলিংয়ে এসে প্রতিপক্ষের রানের চাকা আটকে রাখতেও দারুণ ভূমিকা বাংলাদেশ অধিনায়কের। ১৯ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। প্রশ্নটা তাই উঠেই যাচ্ছে, এরপরও সাকিব ম্যাচসেরা নন?

ম্যাচসেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল। ৪৪ বলে ৭৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটা তাঁকে এনে দিয়েছে এই পুরস্কার। এর মধ্যে ১৬তম ওভারে ২২ রান নিয়ে দলের রানের গতি বাড়াতে তাঁর দারুণ ভূমিকা ছিল। তারপরও ব্যাটে-বলে সাকিবের পারফরম্যান্সই বেশি করে চোখে পড়েছে সবার। আর তাই সাকিবের ম্যাচসেরা না হওয়া নিয়ে খেদটা থেকেই যাচ্ছে সমর্থকদের মনে। সাকিবের কিন্তু এসব নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। তাঁর বিশ্বাস ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের সবচেয়ে প্রিয় সংস্করণে হারাতে পারবেন। বিশ্বাস ছিল তাঁর সতীর্থদেরও। এই বিশ্বাসটুকু মাঠে অনূদিত করেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ দল।

জয়ের পর সাকিব সেই বিশ্বাসের কথাই বললেন, ‘সেন্ট কিটসে হারের পরও জয়ের বিশ্বাসটা ভীষণ কাজে দিয়েছে। বেশ ভালো একটা আলোচনায় সবাই বিশ্বাসী ছিলাম যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলটাকে আমরা হারাতে পারি। এই মানসিকতাটুকুই দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে।’

সেই দৃশ্যপট পাল্টানোয় সাকিবের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। ৩০ বলে তুলে নিয়েছেন ফিফটি। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে দুই বছরেরও বেশি সময় পর ফিফটির মুখ দেখলেন সাকিব। এর আগে সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছিলেন ২০১৬ সালের মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এরপর ১৭টি ইনিংসে তিনি কোনো ফিফটির মুখ দেখেননি। শেষ ওভারে যখন আউট হলেন তখন তাঁর নামের পাশে ৩৮ বলে ঝকঝকে ৬০। টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এই সংস্করণে সর্বোচ্চ ৭টি ফিফটিও এখন সাকিবের।

বোলিংয়ে কিপটেমির দিক থেকে সাকিবকে কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। ৪ ওভারে ১৯ রান—ওভারপ্রতি ৪.৭৫ ইকোনমি রেট। বোলিংয়েও এসেছেন দলের ভীষণ প্রয়োজনের মুহূর্তে। চতুর্থ ওভারে মোস্তাফিজ আন্দ্রে রাসেলকে ফেরালেও ২১ রান দিয়েছিলেন। রান আটকাতে তাই পরের ওভারে বল হাতে তুলে নেন সাকিব। দল ফল পেয়েছে হাতেনাতে—নিজের প্রথম ওভারেই মারলন স্যামুয়েলসকে ফেরানোর সঙ্গে মাত্র ৫ রান দিয়েছেন এই তারকা অলরাউন্ডার।

সপ্তম ওভারে ৫ রান আর ১২তম ওভারে ৬ রান দেওয়ার পর সাকিবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওভার ছিল শেষেরটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ২৪ বলে ৪৮ রানের দূরত্বে। উইকেটে রোভম্যান পাওয়েল ও কার্লোস ব্রাফেটের মতো দুই মারকুটে। এই অবস্থায় ১৭তম ওভারে সাকিব বোলিংয়ে এসে ব্রাফেটকে তুলে নেওয়ার পাশাপাশি খরচ করেছেন মাত্র ৩ রান। এরপর ১৮ বলে ৩৯ রানের দূরত্বে পিছিয়ে পড়ে ক্যারিবীয়রা সেই যে চাপে পড়ল, আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

প্রবাসী বাঙালি সমর্থকেরাও দলের খেলা চুটিয়ে উপভোগ করেছেন। বিশেষ করে সাকিব বোলিংয়ে এলেই তাঁর নাম ধরে চিৎকার করেছে সমর্থকেরা। যেন এ বাংলাদেশের ঘরের মাঠ! অথচ ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়—জায়গাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সবার হাতের তালুর মতোই চেনা। সিপিএল খেলার সুবাদে সাকিবেরও চেনা। প্রবাসী সমর্থকদের তাই ধন্যবাদ জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘দর্শকদের সমর্থন খুব বড় একটা ব্যাপার ছিল। কখনো মনে হয়নি আমরা ঘর থেকে বাইরে খেলছি। মনে হয়েছে বাংলাদেশেই খেলছি। আশা করি, কালও তাঁরা আমাদের এভাবে সমর্থন দেবেন।’

আসল ধন্যবাদটা তো দলের প্রাপ্য। বিশেষ করে সাকিবের। ব্যাটে-বলে তাঁর সব্যসাচী নৈপুণ্যে তো সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ। খেদ বলতে কোনো কিছু থাকলে সেটিও সাকিবকে ঘিরেই। এমন পারফরম্যান্সের পরও তিনি ম্যাচসেরা নন!