ব্র্যাডম্যানের চোখে ‘দ্রুততম’ পাকিস্তানি পেসারের গতি ছিল ১১০ মাইল!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ডেলিভারি কার? হেসে বলতে পারেন, এটাও কোনো প্রশ্ন! কার আবার, শোয়েব আখতারের! কিন্তু যদি বলা হয়, তথ্যটা ভুল। আকাশ থেকে পড়াই স্বাভাবিক। তবে ফারুক হামিদের দাবি সত্য হলে আকাশ থেকেই পড়তে হবে।

সবার আগে ফারুক হামিদের পরিচয় দেওয়া যাক। লাহোরে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানি এ ডানহাতি পেসার ষাটের দশকের ক্রিকেটার। দেশের হয়ে খেলেছেন মাত্র ১ টেস্ট। ৪৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেললেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর নামটা তেমন পরিচিত নয়। সে যাই হোক, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ডন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৭৫ বছর বয়সী সাবেক এ পেসার দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১১৫ মাইল বেগে বল করেছেন তিনি।

এবার শোয়েব আখতারের প্রসঙ্গে আসা যাক। ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিক নাইটকে ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার গতিতে (১০০.২ মাইল) বল করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক এ পেসার। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ড। ফারুক হামিদের দাবিটা তাই বিশ্বাস করতে কষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। ঘণ্টায় ১০০ মাইল হলেও না হয় তর্কের অবকাশ থাকত, তাই বলে ১১০ থেকে ১১৫ মাইল! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বোলার হিসেবে ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতিতে বল করার নজিরও নাকি ফারুক হামিদের। অথচ ক্রিকেট বিশ্ব জেনে আসছে, এ নজিরও প্রথম শোয়েব আখতারই গড়েছিলেন।

সাক্ষাৎকারে ফারুক হামিদ বলেন, ‘অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব—স্যার ডন ব্র্যাডম্যান থেকে আমাদের (পাকিস্তান) ইমতিয়াজ আহমেদ, জহির আব্বাসসহ আরও অনেকেই মনে করতেন আমি সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার, এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার্লি গ্রিফিথের চেয়েও দ্রুততম।’ ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল কমনওয়েলথ দল। সে সফর নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ফারুক, ‘অনেক বড় বড় ক্রিকেটারই আমার বাউন্সারে ভয় পেত। তবে সাবেক টেস্ট ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস আমার বাউন্সার ভালো কৌশল নিয়ে খেলেছে। সে গ্রিফিথের বাউন্সারেও ভালো হুক করত। গ্রিফিথ ১৯৬৩ সালে কমনওয়েলথ দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে এসেছিল। সে সফরেই রোহান কানহাইয়ের মতো কিংবদন্তি আমার বাউন্সারে ভূপাতিত হয়েছিল। ধারাভাষ্যকাররা বলেছিলেন আমি গ্রিফিথের চেয়েও জোরে বল করি। অবশ্যই ঘণ্টায় ১১০-১১৫ মাইল গতিতে বল করছিলাম বলে মনে করি।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ড শোয়েব আখতারের।
ফাইল ছবি

১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে একটি টেস্ট খেলেছিলেন ফারুক হামিদ। মেলবোর্নে সেই টেস্টে ইয়ান চ্যাপেলের উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সেটা ছিল ইয়ান চ্যাপেলেরও অভিষেক টেস্ট। এই অস্ট্রেলিয়াতেই ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ফারুকের। তা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন ফারুক, ‘অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ফাস্ট বোলার হিসেবে তিনিও আমার প্রশংসা করেছিলেন। অ্যাডিলেডে সেঞ্চুরির জন্য প্রশংসা করেছিলেন ইলিয়াসেরও।’ তা, এতই যখন ভালো তাহলে দেশের হয়ে কেন ক্যারিয়ার লম্বা হলো না ফারুকের?

সে প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন ফারুক, ‘নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটনে এক ম্যাচে ১৬ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলাম। মাত্র ১০ ওভারে ৫৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা। কয়েক দিন পর একই ভেন্যুতে টেস্ট ম্যাচে পাকিস্তান দলে আমাকে না দেখে অবাক হয়েছিল সবাই। সে সিরিজে বাকি দুই ম্যাচেও আমাকে দলে নেওয়া হয়নি। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান ঈগলেটসের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে ৩ ওভারে ৫ উইকেট নিই। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ল্যাঙ্কশায়ারের বিপক্ষে সে ম্যাচে অধিনায়ক ওয়াজির মোহাম্মদ আমার হাতে আর বল তুলে দেননি। পরে এমসিসি সেক্রেটারি আমাদের ম্যানেজারকে বলেছিলেন, ট্রুম্যানের সেরা সময়ের গতি থেকেও অনেক এগিয়ে ছিলাম আমি। এমন প্রতিদান পেতে পেতে আমি ক্রিকেটের ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি এবং ২৫ বছর বয়সে ছেড়ে দিই। হ্যাঁ, সেই একই রাজনীতি এখনো ক্ষতি করছে আমাদের ক্রিকেটের।’

ষাটের দশকে পেসারদের গতি মাপার প্রযুক্তি ছিল না। বিশ শতকের কাছাকাছি সময়ে এসে এ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ক্রিকেটে। জাতীয় দল নিয়ে নিজের তেতো স্মৃতি খোলামেলাই বলেছেন ফারুক, ‘দলের সবাই জানত অধিনায়কেরা আমাকে কোন চোখে দেখতেন। এ তালিকায় হানিফ মোহাম্মদ ও তার ভাই ওয়াজির মোহাম্মদ—তিনি নিশ্চিত করেন অস্ট্রেলিয়া সফরের পর আমি যেন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে না পারি।’