ব্রিসবেনে ভারতের ‘শার্দুল’ ‘সুন্দর’ লড়াই

দলে থাকারই কথা ছিল না, কিন্তু এই দুই তরুণ ক্রিকেটারই ব্রিসবেনে ভারতের বড় শক্তি হয়ে উঠলেন।ছবি: এএফপি

কী মধুর সমস্যার মধ্যেই না পড়ে গেলেন ভারতীয় নির্বাচকেরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্টের আগে যেখানে চোটের কারণে মোটামুটি ১১ জন ক্রিকেটার খুঁজে বের করাই মুশকিল হয়ে পড়েছিল, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের জায়গায় খেলাতে হয়েছিল অনভিজ্ঞ, আনকোরা ক্রিকেটারদের, আজ টেস্টের তৃতীয় দিনে এসে, সেই ‘আনকোরা’ ক্রিকেটারদের খেলাই শঙ্কায় ফেলে দিয়েছেন অভিজ্ঞজনদের। বিশেষ করে শার্দুল ঠাকুর আর ওয়াশিংটন সুন্দর নামের দুই তুলনামূলক ‘শিক্ষানবিশ’ ক্রিকেটাররাই নিচ্ছেন অভিজ্ঞ অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণের বড় পরীক্ষা।

প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৩৯৭ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত ব্যাকফুটেই ছিল। কাল বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে ৬০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারতীয় দল আজ তৃতীয় দিনে রীতিমতো ধুঁকছিল। রোহিত শর্মা, শুভমন গিল তো কালই ফিরে গিয়েছিলেন। আজ চেতেশ্বর পূজারা কিংবা অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ফিরেছেন দলকে অপ্রস্তুত অবস্থায় রেখেই। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মায়াঙ্ক আগারওয়াল আর ঋষভ পন্তও। দলীয় সংগ্রহ ২০০ পেরোনোর আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে কী চমৎকারভাবেই না ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন দুই তরুণ, অনিয়মিত ক্রিকেটার শার্দুল ঠাকুর ও ওয়াশিংটন সুন্দর। ১৮৬ রানে ৬ উইকেট হারানো দল যখন বড় বিপর্যয়ই দেখছিল, ঠিক তখনই এই দুই তরুণ ব্যাট হাতে গর্জ উঠলেন। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউডদের বোলিং আক্রমণকে এমন তুচ্ছজ্ঞান করে এঁরা দুজন লড়াই করলেন,সেটা মুগ্ধতা ছড়াল দারুণভাবেই।

শার্দুল ঠাকুর খেলেছেন ৬৭ রানের ইনিংস।
ছবি: এএফপি

ঠাকুর ও সুন্দর বিচ্ছিন্ন হয়েছেন ১২৩ রানের জুটি গড়ে। বিদেশের মাটিতে এটি সপ্তম উইকেট জুটিতে ১৮তম শতরানের জুটি। কিন্তু এই জুটিটিই এল এমন দুজনের হাত ধরে। এ দুজন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে লড়ে গেলেন ঠিক সেই সময়, যখন এমন কিছুর বড্ড প্রয়োজন ছিল। সুন্দরের ব্যাট থেকে এসেছে ১৪২ বলে ৬২ রান। ৭টি বাউন্ডারির পাশাপাশি তিনি মেরেছেন ১টি ছক্কা। শার্দুল ফিরেছেন ১১৫ বলে ৬৭ রান করে, প্যাট কামিন্সের বলে বোল্ড হয়ে। তবে এ দুজন বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ইনিংসের পার্থক্যটা কমিয়ে নিয়ে আসেন ৬০-এ।

ওয়াশিংটন সুন্দর আর শার্দুল ঠাকুর যে ব্যাটিংটা বেশ ভালোই পারেন—এটা ভেবেই তাঁদের দলে নেওয়া হয়েছিল। এই দুই বোলার অবশ্য নিজেদের আসল কাজটা দারুণভাবেই সম্পন্ন করেছেন। প্রথম ইনিংসে দুজনই নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। শার্দুলের মিডিয়াম পেস আর সুন্দরের অফ স্পিন দারুণ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে ব্রিসবেনে। অথচ, ব্রিসবেন টেস্টের আগে চোটের কারণে নিজেদের মূল বোলিং আক্রমণের প্রায় গোটাটাই হারিয়ে বসেছে ভারত। তাঁদের মতো দুই তুলনামূলক নবীন ক্রিকেটারের কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স—নির্বাচকেরা তো মধুর সমস্যায় পড়বেনই। ভাবা যায়, এমন পারফরম্যান্সের পরেও নিজেরা পরের টেস্টটি কবে খেলবেন, সেটা জানেন না শার্দুল ও সুন্দর।

অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের চোখের দিকে তাঁকিয়ে ওয়াশিংটন সুন্দরের লড়াই।
ছবি: এএফপি

রোববার আধঘণ্টা আগেই খেলা শুরু হয়েছিল। অস্ট্রেলীয় পেসারদের সামলে শুরুটাও মোটামুটি ভালোই হয়েছিল ভারতের। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দিনের প্রথম আঘাতটা হানেন প্যাট কামিন্স। তিনি ফেরান চেতেশ্বর পূজারাকে। ২৫ রান করে উইকেটের পেছনে অধিনায়ক টিম পেইনের ক্যাচ হন তিনি। অজিঙ্কা রাহানে ৩৭ রানের বেশি করতে পারেননি। তিনি ম্যাথু ওয়েডের হাতে ধরা পড়েন মিচেল স্টার্কের বলে। । এরপর আগারওয়ালকে হ্যাজলউড ফেরান, স্মিথের ক্যাচ বানিয়ে, ব্যক্তিগত ৩৮ রানে। ঋষভ পন্তের ব্যাটিংয়ে ভালো কিছুর প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু ২৩ রানের বেশি টিকতে পারেননি। তাঁর ক্যাচ ধরেন গ্রিন, হ্যাজলউডের বলে। নবদীপ সাইনিও ফিরেছেন হ্যাজলউডের বলে স্মিথের ক্যাচ হয়ে। শার্দুলের সঙ্গে ১২৩ রানের জুটি গড়ার পর নবদীপ সাইনি ও মোহাম্মদ সিরাজকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইটা জারি রেখেছিলেন সুন্দর। কিন্তু তিনি স্টার্কের বলে গ্রিনকে ক্যাচ দিয়ে দারুণ এক রূপকথার সমাপ্তি ঘটান। এ প্রতিবেদন লেখার সময় ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে ৩৩৬ রানে, অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৩৩ রানে পিছিয়ে থেকে। শেষ দিকে সিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ রান।

অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছেন হ্যাজলউড। ২টি করে উইকেট মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের। নাথান লায়ন নিয়েছেন ১ উইকেট।