বড় ভাইয়ের হ্যাটট্রিকের পর শেষ ওভারে ছোট ভাইয়ের ৬ ছক্কা

শিরোপাজয়ী ব্যালিমেনা ক্লাবের উদ্‌যাপনের কেন্দ্রে জন গ্লাস (নিচের সারিতে মাঝে)ছবি: টুইটার

একটা হ্যাটট্রিকই একটা ক্রিকেট ম্যাচকে আলোকিত করে রাখতে পারে। অথবা পাঁচ উইকেট। বা ব্যাট হাতে কোনো ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টির যুগে মাঝেমধ্যে দেখা মিললেও ওভারে ছয় ছক্কার কীর্তি এখনো বিরলই আছে।

সে হিসেবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে গত পরশু যা ঘটে গেল, সেটা একেবারে অভূতপূর্ব কিছু নয়। আবার একদিক থেকে অভূতপূর্বও। একই ম্যাচে দুই ভাইয়ের এমন কীর্তি কবে দেখেছে ক্রিকেট?

ম্যাচটা তেমন বড় মাপের নয়, কিন্তু কীর্তিটা এমন বলে, সেটিও দুই ভাইয়ের বলেই তা সংবাদের শিরোনামে আসছে। ম্যাচে প্রথমে বল হাতে বড় ভাই স্যাম গ্লাস করলেন হ্যাটট্রিক, পরে ব্যাট হাতে ছোট ভাই জন গ্লাসের কীর্তি তো আরও অবিশ্বাস্য। জয়ের জন্য শেষ ওভারে দলের দরকার ছিল ৩৫ রান, জন সে সমীকরণ মিলিয়ে দিয়েছেন ৬ ছক্কায়! সেটিও কিনা একটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে!

শেষ ওভারের আগপর্যন্ত ম্যাচটা এত নাটকীয় হবে, তা বোঝাই যায়নি! লগান ভ্যালি স্টিলস (এলভিএস) টি-টোয়েন্টি ট্রফির ফাইনালে ক্রেগাঘ ক্লাবের বিপক্ষে ব্যালিমেনার হয়ে খেলছিলেন দুই ভাই জন ও স্যাম। শেষ ওভারের সময় মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা সহজেই জিততে যাচ্ছে ক্রেগাঘ।

মনে হবে নাই–বা কেন! আগে ব্যাট করে ক্রেগাঘ করেছিল ৭ উইকেটে ১৪৭ রান, জবাব দিতে নেমে ১৯ ওভার শেষেও ব্যালিমেনার রান ছিল ৭ উইকেটে ১১৩!

দলের অন্যদের আসা-যাওয়ার মিছিলে অবশ্য উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে ক্রিজে টিকে ছিলেন অধিনায়ক জন গ্লাস। ২০তম ওভারের খেলা যখন শুরু হচ্ছে, তার আগেই তাঁর ফিফটি হয়ে গেছে। ৩৩ বলে ৫১ রান নিয়েই শেষ ওভারে গেছেন জন। কিন্তু কে জানত শেষ ওভারে এমন কিছু অপেক্ষায় আছে!

জন গ্লাস (মাঝে), তাঁর ভাই স্যাম ও কাজিন মিকেল।
ছবি: সংগৃহীত

৬ বলে ৩৫ রানের সমীকরণে এক-দুটি ছক্কা না হয় হতেই পারে, কিন্তু প্রথম চার বলেই জন চার ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন! নড়েচড়ে বসতে হলো তখন। ম্যাচটির ধারাবিবরণী যাওয়া টুইটার পেজ নর্দান ক্রিকেট ইউনিয়ন তখন অবিশ্বাস নিয়ে টুইট করেছিল, ‘শেষ ওভারের প্রথম চার বলেই জন গ্লাস ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ব্যালিমেনার এখন ২ বলে ১২ রান দরকার। এটাও করে ফেলবেন জন?’

উত্তর মিলল দুই বল পর। ওই দুই বলেও বল উড়ে গিয়ে পড়ল বাউন্ডারির বাইরে। শেষ ছক্কার পর নর্দান ক্রিকেট ইউনিয়নের টুইট, ‘জন গ্লাস, তোমার সামনে মাথা নোয়াই! শেষ ওভারে ৩৬ রান নিয়েছেন তিনি! ব্যালিমেনা বনে গেল লগান ভ্যালি স্টিলস ২০২১ চ্যাম্পিয়ন! অধিনায়ক কী অবিশ্বাস্য ইনিংসই না খেললেন!’

ম্যাচসেরা কে হয়েছেন, সেটি নিয়ে কারও নিশ্চয়ই আর সংশয় থাকার কথা নয়। তবে গ্লাস পরিবারে সেদিন জনই সব আলো কেড়ে নিলেও বড় ভাই স্যাম গ্লাসও কম করেছেন নাকি!

ম্যাচসেরা জন গ্লাস।
ছবি: টুইটার

প্রথম ইনিংসে হ্যাটট্রিক করে ব্যালিমেনার জয়ের ভিতে প্রথম ইটের গাঁথুনি তো স্যামেরই দেওয়া। ইনিংসে ৪ ওভার বল করে উইকেট ওই তিনটিই নিয়েছেন স্যাম, রান দিয়েছেন ৫টি! কিন্তু তাঁর হ্যাটট্রিকের বাড়তি গুরুত্ব এই যে, ১৪তম ওভারে স্যাম বোলিংয়ে আসার আগে ক্রেগাঘ ক্লাবের কোনো উইকেটই ফেলতে পারেনি ব্যালিমেনা, ততক্ষণে ক্রেগাঘের রান হয়ে গিয়েছিল ১০৪।

হ্যাটট্রিকটা অবশ্য ১৪তম ওভারেই শেষ হয়নি। সে ওভারের শেষ বলে প্রথম উইকেট নিয়ে ক্রেগাঘের ওপেনিং জুটি ভেঙেছিলেন স্যাম, ১৬তম ওভারে এসে প্রথম দুই বলে নেন আরও দুই উইকেট। ক্রেগাঘের প্রথম তিন উইকেটই তাঁর!