বড়দের ক্রিকেটকে তো সহজই মনে করাচ্ছেন হায়দার

হায়দারের দারুণ এক ইনিংস কোনো সুযোগ দেয়নি জিম্বাবুয়েকে।ছবি: এএফপি

গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে এসেও বড়দের ক্রিকেটে অল্প যে কয়েকটা ম্যাচ খেলেছেন, তাতে আলো ছড়াতে পারেননি আকবর আলীসহ বাংলাদেশ দলের কেউই। আকবর কয়েক দিন আগেই বলছিলেন, সিনিয়রদের ক্রিকেট কত কঠিন, সেটা বুঝতে পারছেন।

আকবরদের সঙ্গেই একই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের জার্সিতে খেলেছেন হায়দার আলী। তাঁর প্রতিভা নিয়ে আলোচনা কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, তাঁকে সুযোগও করে দিচ্ছে পাকিস্তান। আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হায়দারের ব্যাটিং দেখে মনে হলো, সিনিয়রদের ক্রিকেটও বুঝি তাঁর কাছে অতটা কঠিন মনে হচ্ছে না!

জিম্বাবুয়ের ১৩৪ রানের সহজ লক্ষ্যটা পাকিস্তান পেরিয়ে গেছে ৮ উইকেট আর ২৯ বল হাতে রেখে। তিন ম্যাচের সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হয়ে গেছে এতে। আর বাবরকে এক পাশে রেখে আজ পাকিস্তানের জয়ের মূল নায়ক হায়দার আলী। ৪৩ বলে অপরাজিত ৬৬ রানের ইনিংসটি তাঁকে ম্যাচসেরার স্বীকৃতিও এনে দিয়েছে। বাবর করেছেন ২৮ বলে ৫১ রান।

টস যে-ই জিতুক, জিম্বাবুয়ে আগে ব্যাট করবে। টি-টোয়েন্টিতে মোটামুটি ভদ্রস্থ একটা রান উঠবে তাদের স্কোরবোর্ডে। এরপর পাকিস্তানের হয়ে আলো ছড়াবেন বাবর আজম। তাঁর সঙ্গে কে জুটি বেঁধে দলকে জেতাবেন, সেটিই শুধু একটু এদিক-ওদিক হবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি সিরিজের চিত্রনাট্যটা এখন পর্যন্ত এমনই। রাওয়ালপিন্ডিতে গতকাল সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে এই চিত্রনাট্য মেনেই জিম্বাবুয়েকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান, একই মাঠে আজ জয়টা এল আরও অনায়াসে।

প্রথম ম্যাচে গতকাল টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। কালকের পারফরম্যান্সের পর আজ জিম্বাবুয়ে টস জিতলেও আগে ব্যাটিং নিত কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে ভাগ্যপরীক্ষা সে সংশয়ই রাখল না। টস জিতে আজ পাকিস্তানই জিম্বাবুয়েকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে। এরপর জিম্বাবুয়ের উইকেটে নিয়মিত বিরতিতে আসা-যাওয়ার মিছিল! ২০ ওভার পুরোটাই খেলেছে দলটা, তাতে ৭ উইকেটে রান করেছে মাত্র ১৩৪। দলের সবচেয়ে বড় জুটি সপ্তম উইকেটে রায়ান বার্লের সঙ্গে টেন্ডাই চিসোরোর—৩০ রানের! দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি চতুর্থ উইকেটে ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজার ২৭ রানের।

হায়দার আলীকে পথ দেখিয়েছেন বাবর।
ছবি: এএফপি

জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান বার্লেরই, ছয়ে নেমে ২২ বলে করেছেন ৩২ রান। চার একটি, ছক্কা একটি। বার্ল ছাড়া ২০-এর ওপর ইনিংস আছে শুধু গতকালের ম্যাচে অপরাজিত ৭০ রানের দারুণ ইনিংস খেলা মাধেভেরের (২৪)। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে দারুণ বোলিং করেছেন কিংবদন্তি আবদুল কাদিরের ছেলে উসমান কাদির। বাবার মতো লেগ স্পিন করেন গতকালই পাকিস্তানের জার্সিতে অভিষিক্ত উসমানও। কাল ২৪ রানে ১ উইকেট পেয়েছিলেন, আজ উসমান ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ৩ উইকেট পেয়েছেন হারিস রউফও, তবে রান দিয়েছেন ৩১টি।

লক্ষ্য ১৩৫—টি-টোয়েন্টিতে এ আর এমন কী! তার ওপর প্রতিপক্ষ দলে যেখানে আগুনে ফর্মে থাকা বাবরের মতো একজন আছেন! গতকাল ৫৫ বলে ৮২ রান করেছিলেন, টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার লক্ষ্যে ছুটতে থাকা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আজ রান কম করলেও আরও দুর্ধর্ষ। ৫১ রানের ইনিংসটি এসেছে ৮টি চার ও ১ ছক্কায়, স্ট্রাইক রেট ১৮২.১৪!

দলের ১০ রানেই ওপেনার ফখর জামানকে হারানো পাকিস্তান দ্বিতীয় উইকেটে হায়দারের সঙ্গে বাবরের ঠিক ১০০ রানের জুটিতেই জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে। ৬৩ বলে আসা সেই জুটিতে বাবরের চেয়েও বেশি আলো ছড়িয়েছেন হায়দার। তাঁর ৪৩ বলে সাজানো ৬৬ রানের ইনিংসটি এসেছে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায়। মুখোমুখি তৃতীয় বলে ব্লেসিং মুজারাবানিকে দারুণ ক্রিকেটিং শটে ছক্কা মেরে রানের খাতা খুলেছেন। এরপর শন উইলিয়ামসকে এগিয়ে এসে বা টেন্ডাই চিসোরোকে ইনসাইড-আউটে উড়িয়ে মেরেছেন, কখনো আবার মুগ্ধ করেছেন কাট-পুল-ড্রাইভে। বাবর ফিরে গেলেও খুশদিল শাহকে নিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচ ও সিরিজ জিতিয়ে ফিরেছেন হায়দার।

গত সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল হায়দারের। অভিষেকেই ফিফটি! ৫৪ রান করেছিলেন ৩৩ বলে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো ব্যাটসম্যান যে পাকিস্তানের আগামীর পরিকল্পনায় ভালোভাবেই আছেন, তা বোঝা গেল তাঁকে জিম্বাবুয়ে সিরিজের ওয়ানডে দলে ডাকায়। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাঁর ওয়ানডে অভিষেক। ওয়ানডেতে দুই ম্যাচে ভালো করতে পারেননি, আলো ছড়াতে পারেননি গতকাল প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও।

কিন্তু আজ হায়দারের ইনিংস বুঝিয়ে দিল, সিনিয়রদের ক্রিকেটেও পাকিস্তানের হয়ে আলো ছড়ানোর ক্ষমতা তিনি রাখেন!