ভন বুঝলেন, বেশি মশকরা ভালো না

চতুর্থ টেস্টের উইকেট নিয়ে ফেসবুকে এ ছবিটি পোস্ট করে ভারতকে খোঁচা মারেন মাইকেল ভন
ছবি: ফেসবুক

তৃতীয় ও আজ থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ টেস্টের ভেন্যু একই—আহমেদাবাদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তৃতীয় টেস্ট দুই দিনে শেষ হওয়ায় নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে স্পিনবান্ধব পিচকে স্রেফ ধুয়ে দিয়েছেন অনেকে।

মাইকেল ভন তাঁদের একজন। ইংল্যান্ডের সাবেক এ অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার চতুর্থ টেস্ট সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে ভারতের পিচ নিয়ে খোঁচা মেরে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রসিকতামূলক পোস্ট করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু চতুর্থ টেস্টে আজ প্রথম দিনে পিচের আচরণ ভনের সব খোঁচাকে ভোঁতা বানিয়ে যেন তাঁর কাছেই ফেরত পাঠাল!

চার টেস্টের এই সিরিজে স্পিনবান্ধব পিচ নিয়ে কথা চলছে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে। আহমেদাবাদে তো তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিন থেকেই বল বড় বাঁক নিয়েছে। জো রুটের মতো খণ্ডকালীন স্পিনার নিয়েছেন ৫ উইকেট! পিচ কেমন ছিল, এর উত্তরে নিজের ৫ উইকেট নেওয়ার উদাহরণ দিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।

তবে ইংল্যান্ড দলের কেউ পিচ নিয়ে সরাসরি কোনো অভিযোগ করেননি। সাবেক অধিনায়ক ভন অবশ্য অন্য ধাতে গড়া। ইংল্যান্ড অধিনায়ক মজা করার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করেছেন খুব কমই।

ভনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে ঢুঁ মারলেই তা বোঝা যায়। পরশু নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ছবি পোস্ট করেন ভন।

ছবিতে দেখা যায়, ভন ছোট একটি ব্যাট হাতে এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাটিংয়ের ভঙ্গি করছেন, যেখানকার মাটি কুপিয়ে এলোমেলো করা। মানে, খেতে চাষ দেওয়ার আগে জমি যেভাবে কুপিয়ে রাখা হয় আরকি! এ ছবিতে ভনের ক্যাপশন, ‘চতুর্থ টেস্টের জন্য প্রস্তুতি ভালোই হচ্ছে’।

কাল ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন ভন। আগের ছবির মতোই যথারীতি এক পার্কে কুপিয়ে রাখা জমিতে চতুর্থ টেস্টের জন্য রম্য পিচ প্রতিবেদন দেন তিনি। অনেকটাই ডেভিড লয়েডের রম্য প্রতিবেদনের মতো—ইংল্যান্ডের সাবেক এই ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রম্য পিচ প্রতিবেদনের জন্য খ্যাতি কুড়িয়েছেন বিশ্বজুড়ে।

কিন্তু ভনের এই প্রতিবেদন শুধু রম্য নয়, চতুর্থ টেস্টেও ভারত যে প্রকট স্পিনবান্ধব উইকেট বানাবে, সেই প্রত্যাশিত সম্ভাবনাকে খোঁচা মেরে বানানো। ভন এই ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘চতুর্থ টেস্টের প্রত্যাশিত পিচ প্রতিবেদন’।

কিন্তু ভনের এই মজা শেষ পর্যন্ত তাঁর জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আহমেদাবাদে চতুর্থ টেস্টের পিচ প্রতিবেদনে ছিলেন ভারতের দুই সাবেক ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত ও অজিত আগারকার।

দীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘ব্যাটসম্যানদের জন্য খানিকটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ আছে। তৃতীয় টেস্টের পিচের তুলনায় একটু ঘাস আছে।’ তবে সাবেক পেসার অজিত আগারকার রিলায়েন্স প্রান্তের পিচ দেখিয়ে বলেছেন, ‘এ প্রান্তটা বেশি শুকনো। বোঝা যাচ্ছে, বেশি স্পিন ধরবে।’

ফিফটি তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপর্যয় এড়ান বেন স্টোকস
ছবি: এএফপি

টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেছে ইংল্যান্ড। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি নতুন বলে স্পিনারদের না এনে দুই পেসার ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ সিরাজকে দিয়ে শুরু করান বোলিং। তবে উইকেট পড়েছে সেই স্পিনেই—ষষ্ট ওভারে অক্ষয় প্যাটেলের বলে বোল্ড হন ডম সিবলি। উইকেটে আহামরি কোনো বাঁক নেই, উপমহাদেশের উইকেটে স্পিনাররা প্রথম দিনে যতটা রুটিন-বাঁক পান তেমনই, বলা ভালো তার চেয়েও কম। সিবলি স্রেফ বাঁক নেবে মনে করে খেলতে গিয়ে বোকা বনেছেন।

নিজের পরের ওভারেও উইকেট নেন অক্ষর। ইংল্যান্ডের এই উইকেট পতনে না অক্ষর, না স্পিন, বরং ক্রলির ভূমিকাই বেশি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে অক্ষরকে মারার সাধ পূর্ণ করার খেসারত দেন তিনি। ইংলিশ মিডলঅর্ডারে পরের দুটি উইকেট জো রুট ও জনি বেয়ারস্টোর (২৮)।

ফিফটি তুলে নেওয়া বেন স্টোকস (৫৫) আউট হয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে। বলে কোনো বাঁক ছিল না। স্পিনে ভুল খেলে এলবিডব্লুর শিকার হন স্টোকস। প্রথম দিনে ৭৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর চা–বিরতির আগপর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৪৪ রান তুলেছে ইংল্যান্ড।

দিনের শুরুতে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং মোটেও ভালো লাগেনি ভনের। আর এই ভালো না লাগা থেকেই চতুর্থ টেস্টের উইকেট নিয়ে নিজের অবস্থান পাল্টান ভন। একেবারে ‘ইউ-টার্ন’ নিয়ে ভন টুইট করেন, ‘শেষ কয়েকটি টেস্টের তুলনায় খুব বাজে ব্যাট করছে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে বড় রান তোলার জন্য এই পিচটা দারুণ। কোনো স্পিন নেই, বল ব্যাটে আসছে। এখন পর্যন্ত খুব বাজে ব্যাটিং।’

স্বাভাবিকভাবেই ভনের এই মন্তব্য নিয়ে রসিকতা চলছে। তাঁর টুইটেই একজন সরাসরি লিখেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত উইকেটের দোষ দেওয়া ছাড়লেন!’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘শুধু এই টেস্ট নয়, এটা (বাজে ব্যাটিং) দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে।’

পিচ নিয়ে ভনের রসিকতা ভারতের সাবেক ক্রিকেটারদেরও ভালো লাগেনি। দীপ দাশগুপ্ত যেমন সরাসরি বলেছেন, ‘পিচ নিয়ে যথেষ্ট হয়েছে। আমরা মাইকেল ভনকে মিডিয়ায় বেশি জায়গা দিচ্ছি। সে কী বলতে চায়, সেটা আমরা সবাই জানি।’