ভন ‘মানসিক কোষ্ঠকাঠিন্যে’ ভুগছেন, বললেন সালমান বাট

মাইকেল ভনকে পাল্টা ধুয়েছেন সালমান বাটফাইল ছবি

কোথাকার আলোচনা কোথায় গিয়ে গড়াল! যে আলোচনা শুরু হয়েছিল বিরাট কোহলি আর কেইন উইলিয়ামসনের মধ্যে কে সেরা সেটা নিয়ে, সেটি এখন গড়িয়েছে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক সালমান বাটের ম্যাচ ফিক্সিং আর ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের ‘মানসিক কোষ্ঠকাঠিন্য’ নিয়ে খোঁচাখুঁচিতে!

বিতর্কটার শুরু সালমান বাটই করেছিলেন। কোহলি আর কেইন উইলিয়ামসনের তুলনায় নিজের মত জানাতে গিয়ে ভন বলেছিলেন, উইলিয়ামসন ভারতের হলে তাঁকেই সেরা বলত সবাই। কিন্তু এ নিয়ে খোঁচা মেরে বসেন বাট। ভনের কোনো ওয়ানডে সেঞ্চুরি নেই জানিয়ে তাঁর কোহলি-উইলিয়ামসন বিতর্কে আলোচনা করার অধিকারই নেই বলে ইঙ্গিত করেছিলেন পাকিস্তানি সাবেক ব্যাটসম্যান। ভন আবার সেটির জবাবে পাল্টা দেন সালমান বাটের ২০১০ স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি নিয়ে খোঁচা মেরে।

অপমানের জবাবে পাল্টা অপমানের ধারা অব্যাহত রেখেছেন বাটও। ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, নতুন ইউটিউব ভিডিওতে বাট বলেছেন, ভনের ‘মানসিক কোষ্ঠকাঠিন্য’ আছে। তাঁর মন্তব্যগুলোকে ‘অপমানজনক’ বলেও জানিয়েছেন বাট।

আলোচনাটা শুরু হয়েছিল কোহলিকে নিয়ে।
ছবি: রয়টার্স

নিউজিল্যান্ডের স্পার্ক স্পোর্ট চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে ভনের কথা থেকে সবকিছুর সূত্রপাত। সেখানে কোহলির সঙ্গে উইলিয়ামসনের তুলনায় নিউজিল্যান্ড অধিনায়ককে এগিয়ে রাখা ভন বলেছিলেন, উইলিয়ামসন ভারতীয় হলে তাঁকেই বিশ্বসেরা বলা হতো। ইঙ্গিত, ক্রিকেটীয় দক্ষতার চেয়ে ভারতের বিশাল ক্রিকেটপ্রেমী জনগোষ্ঠীর সমর্থনই কোহলির শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকে বেশি জোরালো করে।

এর জবাব দিয়ে কথার লড়াইয়ের শুরুটা আসলে করেছেন বাট নিজেই। গত শনিবার ইউটিউবে বলেছেন, ভনের উচিত তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যায় পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত দেওয়া। ইংল্যান্ডের হয়ে ৮২ টেস্ট, ৮৬ ওয়ানডে ও ২টি টি-টোয়েন্টি খেলা ভনের কোনো ওয়ানডে সেঞ্চুরি না থাকার ব্যাপার টেনে নিয়ে বললেন, এ ব্যাপারে তাই ভনের মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক। টুইটার-ইউটিউবে বেশ সরব ভনও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। বাটের নিজের মত জানানোর অধিকার আছে জানিয়ে পরে দিলেন খোঁচা, ‘...আমার একটাই দুঃখ, ২০১০ সালে যখন সে ম্যাচ পাতাচ্ছিল, তখন যদি এত পরিষ্কার চিন্তাভাবনা করতে পারত!’

প্রসঙ্গত, ২০১০ ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে পাকিস্তানের তিন খেলোয়াড়ের স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির মূল হোতা ছিলেন বাট। তখন পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। শুধু স্পট ফিক্সিংয়ে জড়াননি, সেই সঙ্গে দলের দুই পেসারকেও এই অপকর্মে যুক্ত করেছিলেন। মোহাম্মদ আসিফের মতো দুর্দান্ত এক বোলারকে পাকিস্তান সে কাণ্ডেই হারিয়েছে। আর মাত্র ১৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আমির ক্যারিয়ারের উঠতি সময়ে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এ ঘটনায় জেলেও যেতে হয়েছিল সালমান বাটকে। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত জেল খাটা বাট পরে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেললেও আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি।

২০১০ সালের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রসঙ্গ তুলে সারমান বাটকে খোঁচা দিয়েছিলেন মাইকেল ভন
ফাইল ছবি

কিন্তু নিজের অন্ধকার অতীত নিয়ে এমন অপমান আবার সহ্য হয়নি বাটের। গতকাল আবার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতে ভনকে উদ্দেশ করে আবার পাল্টা অপমান করলেন বাট, ‘আমি বিস্তারিত আলোচনায় যেতে চাই না। শুধু বলতে চাই তিনি কোনো কারণ ছাড়া এই ব্যাপারটাকে (স্পট ফিক্সিং) আলোচনায় নিয়ে এসেছেন। এ রকম প্রতিক্রিয়ার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। খুবই অপমানজনক, মানহীন কথা হলো এটা।’

এরপর বাট যা বললেন, সেটার মান নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়। ভনের মানসিক কোষ্ঠকাঠিন্য আছে বলেই পাল্টা অপমান করার চেষ্টা থাকল বাটের, ‘তিনি অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকতে চাইলে, সেটা নিয়ে কথা বলতে চাইলে সেটা অবশ্যই করতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য একধরনের অসুস্থতা। সবকিছু আটকে যায়, সহজে বের হয়ে আসতে চায় না। কিছু কিছু মানুষের মানসিক কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে। তাঁদের মন সব সময় অতীতে পড়ে থাকে। এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।’

ভনের ওয়ানডে সেঞ্চুরি না থাকা নিয়ে খোঁচা দিয়ে বিতর্কের শুরু করা বাট অবশ্য ভনের উদ্দেশে আরেকবার বললেন তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তর্কে নামতে, ‘আমরা দুজন অসাধারণ খেলোয়াড়কে নিয়ে কথা বলছিলাম, সেখান থেকে কথাটাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার তো কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু তিনি সেটাই করলেন। যে বছরটার (২০১০ স্পট ফিক্সিং) কথা তিনি বললেন, সেটা নিয়ে তিনি বলতেই পারেন। কিন্তু সেটা অতীতের ব্যাপার, পেছনে চলে গেছে। আর এতে তো আসল যে ব্যাপারটা নিয়ে (কোহলি বনাম উইলিয়ামসন) আমরা কথা বলছিলাম, সেটাতে কোনো বদল হচ্ছে না। তিনি যদি কোনো পরিসংখ্যান তুলে ধরতে পারতেন, কিছু যুক্তি, অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পর্যালোচনা করতেন, তাহলে আরও ভালো হতো। আমরাও কিছু শিখতে পারতাম।’

ভিডিও শেষ করার আগে আবার তাই ভনকে খোঁচা মেরে গেলেন বাট, ‘তিনি যদি শুধু ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতেন, আমাদের ভুল আর নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতেন, তাহলে ব্যাপারটা মজার হতো। কিন্তু এমনটা হয়নি। অপমানজনক কথা যে কেউই বলতে পারে। কিন্তু সেটা বলা মানে আপনি কেমন মানুষ সেটা বোঝা যায়। তিনি যেহেতু সেটাই করেছেন, এখন তিনি যত ইচ্ছা এমন কথা বলে যেতে পারেন। এটাতে কারও কিছু যায়-আসে না, শুধু এতটুকুই বোঝা গেল যে তিনি কেমন মানুষ।’