ভনকে আবর্জনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং

কুশল মেন্ডিসের এ ছবিটা যেন শ্রীলঙ্কার ইনিংসের প্রতীকী চিত্র। ব্যর্থ সবাইছবি: টুইটার

ডেভিড ‘বাম্বল’ লয়েড ভীষণ রসিক। নানা দেশে টেস্ট ক্রিকেট কাভার করতে গিয়ে মজার সব পিচ প্রতিবেদন করেন।

গল টেস্টেও লয়েডের রসিকতার নমুনা দেখা গেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আজ টেস্টের প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কান ব্যাটিং অর্ডার যখন ‘আত্মহত্যা’ করছিল, লয়েড তখন গলের দুর্গে।

পাথুরে মাটি, ঘাস ও নুড়ি পাথরের দঙ্গলে কে কেমন করতে পারেন, তা বলার পর কথার যবনিকা টানলেন এই ইংলিশ ধারাভাষ্যকার, ‘আমার মনে হয় খেলাটা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। দেখতে (উইকেট) সাপের মতো লাগছে।!’ পাশেই পাইথন কাঁধে এক লোক, তিনি সাপটা উঁচিয়ে ধরতেই দমক উঠল হাসির।

শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দেখেও হাসতে পারেন অনেকে!

হ্যাঁ, বেশির ভাগই আত্মহত্যা, হাসিটা আসতে পারে সেসবের নমুনা দেখে। স্কোরকার্ড দেখে অবশ্য মায়া লাগতে পারে। প্রথম ইনিংসে ৪৬.১ ওভার খেলে ১৩৫ রানে অলআউট স্বাগতিক দল।

গলের বাইশ গজের জমিনে বল বরাবরই লয়েডের সেই সাপের মতো বাঁক নেয়। ইংল্যান্ড স্পিনার ডম বেস সে উদাহরণ রেখেই নিয়েছেন ৫ উইকেট। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন অবশ্য বেসের প্রশংসার ধারকাছ দিয়ে যাননি।

লঙ্কানদের ব্যাটিং দেখে টুইটের সময় বেসের বাঁকের সৌন্দর্য হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন ভন, ‘ওই ৪৬.১ ওভার সম্ভবত টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে বাজে বিজ্ঞাপন। অথচ এই সংস্করণটাই সবকিছুর শীর্ষে। আক্ষরিক অর্থেই আবর্জনাসুলভ ব্যাটিং করেছে শ্রীলঙ্কা।’

অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালের ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ২৮। টেস্টের প্রথম দিনে প্রথম ইনিংসে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়েছেন দুজন—শেষ উইকেটে পিন্নাদুয়াগে ডি সিলভা এবং ওপেনার কুশল পেরেরা (২৮ বলে ২০)।

সত্তরের ওপর স্ট্রাইকরেটে সকাল থেকে ব্যাট করতে করতে পেরেরার হয়তো মনে হয়েছে রিভার্স সুইপ কেন নয়! বেসকে তা করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে জো রুটের হাতে।

তার আগেই অবশ্য এক ওভারে তিন বলের ব্যবধানে ফিরে গিয়ে ইনিংসের গতিপথ কোনদিকে যাবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে রেখেছিলেন লাহিরু থিরিমান্নে (৪) ও কুশল মেন্ডিস (০)।

লেগ স্লিপ থিরিমান্নের চোখের সামনে দিয়েই রেখেছিলেন রুট। স্টুয়ার্ট ব্রড বল করছিলেন পায়ের ওপর। রুটের এই কৌশলকে ‘নিখুঁত’ করতেই সম্ভবত দেখে-শুনে, বুঝে লেগ স্লিপে ক্যাচ দেন থিরিমান্নে।

ফিফটি তুলে নেন জো রুট
ছবি: টুইটার

আর মেন্ডিস? বেচারা! উইকেটে সকাল থেকেই বল এদিক-সেদিক হচ্ছিল। এরপর ব্রডের লেগ কাটার আরও ‘মুভ’ করবে সে তো জানা কথাই। রানের খাতা খুলতে মরিয়া মেন্ডিস তবু ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক জস বাটলারকে।

ফেরার সময় মেন্ডিসের মনে টেস্টে তাঁর শেষ চার ইনিংসের স্কোর ঘাই মারার কথা—০, ০, ০ এবং ০!

২৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৫ রানে মধ্যাহ্নভোজে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর তাদের বাকি ৭ উইকেট মিলে ব্যাট করতে পেরেছে ২২.১ ওভার। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ব্যাট করতে গেলে কী হয়, সেই প্রমাণ হয়ে থাকবে এই ইনিংস।

দ্বিতীয় সেশনের প্রথম দুই ওভারে চার-ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (২৭)। মাঝে দুই ওভার পরই ব্রডের ভালো লেংথের বল ‘কাট’(!) করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে। বলটা খাটো লেংথের হলেও না হয় মনকে বোঝানো যেত!

পরের ওভারে অধিনায়ক চান্দিমাল স্রেফ লোভ সংবরণ করতে পারেননি। স্পিনার জ্যাক লিচের বাতাসে ভাসানো ডেলিভারি মারতে গিয়ে টাইমিংয়ের গড়বড়ে ক্যাচ দেন কাভারে।

৮১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কার ইনিংসের দ্রুত পতন আর ঠেকানো যায়নি। এর মধ্যে মজার এক দৃশ্যের জন্ম নেয় ৩৮.১ ওভারে দুই দলের যৌথ প্রযোজনায়—বেসের মাঝ উইকেটে ফেলা বল কাট করতে গিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তুলে দেন ডিকভেলা (১২)। সেখানে দাঁড়ানো ডম সিবলিও ক্যাচটা ধরেন কোনোমতে! ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্যে এটা যেন ‘গ্রামের ক্রিকেট!’

গল দুর্গের সৌন্দর্য, পাশেই ভারত মহাসাগরের সফেন সৈকত—মনঃসংযোগের খেলায়ও (টেস্ট) মন আনচান করাই স্বাভাবিক! ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদেরও সম্ভবত তেমন কিছু ‘ভর’ করেছিল। ১৭ রান তুলতেই নেই দুই ওপেনার! বাঁ হাতি স্পিনার লাসিথ এমবুলদেনিয়া তুলে নেন জ্যাক ক্রলি ও ডম সিবলিকে।

তবে জো রুট ও জনি বেয়ারস্টোর দৃঢ়তায় ২ উইকেটে ১২৭ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে ইংল্যান্ড। রুট (৬৬*) ও জনি বেয়ারস্টো (৪৭*) রানে অপরাজিত। লয়েডের সাপের মতো বাঁক নেওয়া স্পিনারদের এই দিনে ব্যতিক্রম একটাই—ব্রড নিয়েছেন ৩ উইকেট!