‘ভাইরাস’ এর আগে কবে বন্ধ করেছে ক্রিকেট?

স্থগিত হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড সিরিজ
ছবি: টুইটার

কী এক অদ্ভুত কারণেই না স্থগিত হয়ে গেল ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ। সময়সূচি নির্ধারিত, দুই দল মাঠে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময় করোনা হানা দিল এই সিরিজে।

প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার এক ক্রিকেটার, পরে দুই হোটেলকর্মী ও ইংলিশ ক্রিকেটার—জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে করোনার হানা! এরপর আর ক্রিকেট চলে নাকি! স্থগিতই হয়ে গেল গোটা সিরিজ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ—কত কারণেই না ক্রিকেট স্থগিত হয়ে গেছে। কিন্তু ‘ভাইরাস’ আক্রমণে আয়োজক শহরে দুই দলের খেলোয়াড় উপস্থিত থাকার পরও কোনো ম্যাচ না হয়ে খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার ঘটনা বোধ হয় এই প্রথম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম গত মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত ক্রিকেটহীন দুনিয়া দেখেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রায় প্রতিটি দেশই ক্রিকেট বন্ধ করে দিয়েছিল। কেবল ক্রিকেটই কেন!

সব খেলাই চলে গিয়েছিল বন্ধ দরজার ওপাশে। খেলোয়াড়েরা প্রায় সবাই কাটিয়েছেন অলস সময়। সেটি অতিমারির প্রাদুর্ভাবেই। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার পর নির্ধারিত সূচির খেলা করোনার কারণে স্থগিত হলো এই প্রথম।

ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজটি স্থগিত হওয়ায় অনেক অর্থ খরচের জৈব সুরক্ষা ব্যবস্থাও নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।

তবে যে প্রশ্নটা উঠছে, সেটি হচ্ছে, খেলোয়াড় শিবিরে মহামারি আকারে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্রিকেট বন্ধ হয়ে গেছে কি না।

হাতের কাছে গুগল আছে, খোঁজ চালিয়ে দেখতে পারেন, তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়ে নতুন কিছুই দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া। মার্চেই অবশ্য একটি সিরিজ শুরু হয়েও শেষ হয়নি।

দেশে ফিরে দীর্ঘ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটানোর ঝক্কি এড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ শেষ না করেই দেশে ফিরে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সে সিরিজেও কিন্তু অন্তত এক ম্যাচ খেলা হয়েছিল।

ইতিহাস বলছে, বৃষ্টি, তুষারপাত, মোটকথা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাদ দিলেও সম্পূর্ণ অন্য কারণে ক্রিকেট বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা আছে।

গত অর্ধশতকে সিরিজ চলাকালে সম্পূর্ণ অন্য কারণে ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় ঘটনা বোধ হয় ৩৪ বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু।

ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়ে নতুন কিছুই দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া
ছবি: টুইটার

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজের দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা গান্ধী। ঠিক সে সময়ই ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর করছিল। নির্দিষ্ট করে যে দিনটিতে ইন্দিরা নিহত হন, সেদিনই শিয়ালকোটে ওয়ানডে সিরিজের একটি ম্যাচে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল।

প্রথমে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ৪০ ওভারে (ম্যাচটা ৪০ ওভারেরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল) ভারত ৩ উইকেটে ২১০ রান তোলার পর ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের খবর পৌঁছায় শিয়ালকোটের ভেন্যুতে। সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। স্থগিত হয়ে যায় সে সিরিজই।

বাংলাদেশেও এমন একটা ঘটনা আছে। সেটি ১৯৯২ সালে। স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচ নয় সেটি। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সেদিন মুখোমুখি ছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ও ভারতীয় ‘এ’ দল।

বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন ভারতীয় ‘এ’ দলে। অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার জের এসে পড়েছিল এই ঢাকাতে। সুযোগসন্ধানী সন্ত্রাসীদের দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টায় সেদিন ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়।

ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই সেদিন ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। যে টুর্নামেন্টের ম্যাচ ছিল সেটি, সেই সার্ক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার প্রথম আসরটিও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কারণে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (সে সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড) ও বাংলাদেশ সরকার।

অপরাধীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে টেস্ট ক্রিকেট পণ্ড করে দেওয়ার ঘটনাও আছে। ১৯৭৫ সালের ১৯ আগস্ট ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার হেডিংলি টেস্টের পঞ্চম দিন মাটি হয়েছিল এক অপরাধীর জন্য।

১৯৭৫ হেডিংলি টেস্টের উইকটে পোড়া মোবিল ফেলে রাখা হয়েছিল
ছবি: টুইটার

জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ২২৫ রান আর ইংল্যান্ডর দরকার ছিল ৭ উইকেট। কিন্তু দিনের খেলা শুরুর আগেই দেখা গেল কে বা কারা উইকেট খুঁড়ে রেখেছে। মাখিয়ে রেখেছে পোড়া মোবিল।

যার জন্য এত ঘটনা, সেই জর্জ ডেভিস ছিলেন একজন দাগি অপরাধী। ১৯৭৪ সালে লন্ডন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড অফিসে অস্ত্র হাতে ডাকাতি করার অপরাধে বিচার চলছিল তখন তাঁর।

ভিসা না দেওয়ায় একবার ইংল্যান্ডের ভারত সফর বাতিল হয়েছিল। সেটি ১৯৮৮ সালের কথা। গ্রাহাম গুচসহ ইংল্যান্ডের সাত ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছিলেন।

সে সময় বর্ণবাদ নীতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল ভারতসহ অনেক দেশই। ১৯৮২ সালে গুচসহ অন্য ছয় ইংলিশ তারকা জন এম্বুরি, কিম বার্নেট, রবার্ট বেইলি, গ্রাহাম ডিলি, রবার্ট রবিনসন, অ্যালান ল্যাম্ব, ফিলিপ নিউপোর্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী সফরে গিয়েছিলেন।

অনেক দেনদরবারের পরেও ভারত তাদের ভিসা দেয়নি। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে ইংল্যান্ড সফরই বাতিল করে দেয় ইসিবি।