ভারত দেখাচ্ছে, ইচ্ছা থাকলে ফুটবলে অনেক কিছুই হয়

বাংলাদেশ চাইলে অনুসরণ করতে পারে ভারতের পথছবি : প্রথম আলো

বহুল ব্যবহৃত কথা ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’। সব সময় উপায় না হলেও ইচ্ছা থাকলে অন্তত ‘উপায়ের’ কাছাকাছি তো যাওয়া যায়। সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাইপর্ব সে কথাই বলছে। কঠিন বাছাইপর্ব পেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়ান অঞ্চল থেকে কোনো দলই এশিয়ান কাপের টিকিট অর্জন করতে পারেনি। তবে ভারত বড় একটা চমক দিয়েছে। অল্পের জন্য হোঁচট খেয়েছে তাদের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন।


ভারত দেখিয়েছে, ইচ্ছা থাকলে আজ বা কাল হোক, লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। ২০১৭ সালে স্বাগতিক হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলেছিল ভারত। ৩ ম্যাচের সব কটিতে হেরে গ্রুপ পর্বেই থেমে যায় তাদের বিশ্বকাপ। ১ গোল করার বিপরীতে গোল খেয়েছিল ৯টি। সেখানেই থেমে যায়নি ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (আইএফএ)।

গ্রুপের তলানিতে থেকে শেষ করেছে বাংলাদেশ
ছবি : প্রথম আলো

প্রতিভাবান কিশোরেরা যেন বছরজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলায় স্বাদ পায়, সে লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ নামের আই লিগে দল গঠন করে আইএফএ। অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের এই দলের ৮০ শতাংশ খেলোয়াড়ই ইন্ডিয়ান অ্যারোজে খেলে নিজেদের তৈরি করেছেন। প্রতিবেশী দেশটির একটি প্রজন্ম ভালোভাবে গড়ে উঠেছে।


স্বাগতিক আরব আমিরাত, ওমান, কিরগিজস্তান ও ভারতকে নিয়ে শক্তিশালী ‘ই’ গ্রুপ। খাতা–কলমে ভারতকে রাখা হয়েছিল চারে। অথচ ওমানকে ২-১ গোলে হারিয়ে বাছাইপর্বে শুরু। একটি করে গোল করা রহিম আলী ও বিক্রম প্রতাপ দুজনই অ্যারোজের আবিষ্কার। দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতের বিপক্ষেও লড়াইটা জমিয়ে তুলেছিল। ৮২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল খেয়ে হেরে যাওয়া। শেষ ম্যাচে কিরগিজস্তানকে টাইব্রেকারে হারানো।

কোচ ইগর স্টিমাচ ইন্ডিয়ান অ্যারোজকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন
ছবি : টুইটার

নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র থাকায় ভারতের খাতায় যোগ হয়েছে ১ পয়েন্ট। ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ। দুটি জয় নিয়েও খেলা হলো না এশিয়ান কাপ। এবার সেটি না হলেও ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে, ইন্ডিয়ান অ্যারোজ নামের দল গঠন করে তরুণদের যোগ্যভাবেই গড়ে তুলছে তারা। এ সাফল্যের জন্য ভারতের ক্রোয়েশিয়ার কোচ ইগর স্টিমাচ ইন্ডিয়ান অ্যারোজকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়ান অ্যারোজ তরুণ প্রজন্ম তুলে আনার জন্য দারুণ একটা পদক্ষেপ।’


এ পথে হাঁটলে সাফল্য পাওয়া যাবে, সেটি জানে বাংলাদেশও। ২০১৯ সালে ফোর্টিজ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল বাফুফেও। একাডেমি তো বন্ধ হয়েছেই, বাফুফের সে দল তৈরি করার ঘোষণাও তাদের অন্যান্য ঘোষণার মতোই হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে। ফলাফল আন্তর্জাতিক ফুটবলে বারবার মুখ থুবড়ে পড়া।

ইন্ডিয়ান অ্যারোজ নামের দল গঠন করে তরুণদের যোগ্যভাবেই গড়ে তুলছে ভারত
ছবি : টুইটার

বাছাইপর্বে ডি গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলগুলো ছিল সৌদি আরব, উজবেকিস্তান ও কুয়েত। মৃত্যুকূপ বলা যায়। এ গ্রুপ থেকে মারুফুল হকের বাংলাদেশ চূড়ান্ত পর্বে খেলবে, এমন স্বপ্ন কেউ দেখেছিল বলে মনে হয় না। কুয়েতের বিপক্ষে ১-০ গোলের হার শুরু হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে হয়েছে ভরাডুবি। বাংলাদেশ উড়ে গিয়েছে ৬-০ গোলে। সর্বশেষ ম্যাচে কাল সৌদি আরবের কাছে ৩-০ গোলের হার। ৩ ম্যাচে কোনো গোল না করা বাংলাদেশ খেয়েছে ১০ গোল।

দলটি নিয়ে ভাবেনি বাফুফেও। এ যুগে এসেও দলটিকে কোনো প্রস্তুতিমূলক ম্যাচের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। এ দলকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক খেলোয়াড়। ক্যাম্পের প্রথম দিকে খাবারের মান ভালো ছিল না। এমনকি শুরুর দিকে ছিল না দলের জন্য অনুশীলন জার্সিও।
দলটির সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা ছিল জাতীয় দলের ৯ খেলোয়াড়। তাঁদের মধ্যে তারিক রায়হান কাজী, বিপলু আহমেদ ও বিশ্বনাথ ঘোষ দলের সঙ্গে উজবেকিস্তান যেতে পারেননি।

ভারতের এই দলের ৮০ শতাংশ খেলোয়াড়ই ইন্ডিয়ান অ্যারোজে খেলে নিজেদের তৈরি করেছেন
ছবি : টুইটার

বাকিদের মধ্যে টুটুল হোসেন, রিয়াদুল হাসান, রহমত মিয়া ও ইয়াছিন আরাফাতদের নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ তেমন প্রতিদান দিতে পারেনি। বেশি ভুগিয়েছেন গোলকিপাররা। অথচ পাপ্পু হোসেন ও মিতুল মারমা জাতীয় দলেও ছিলেন।


শেষ পর্যন্ত গ্রুপের তলানিতে থেকে শেষ করেছে বাংলাদেশ। ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কুয়েত। বাংলাদেশকে হারিয়ে সেরা রানার্সআপ দল হিসেবে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট কেটেছে সৌদি আরবও। এ গ্রুপের আরেক দল উজবেকিস্তান তো স্বাগতিক হিসেবেই খেলবে এশিয়ান কাপ।


ভারতকে একপাশে সরিয়ে রাখলে বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোরও হয়েছে ভরাডুবি। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপ তাদের নিজ নিজ গ্রুপের তলানিতে থেকে শেষ করেছে বাছাইপর্ব।