ভারতকে আবারও ‘নাস্তানাবুদ করা’ উইকেট বানাতে বলছেন ভিভ

ইংল্যান্ডকে দাপটের সঙ্গে হারিয়েছে ভারত।
ছবি: বিসিসিআই

বহু আলোচিত দিবারাত্রি টেস্টের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র দুই দিন। আহমেদাবাদ টেস্টের প্রথম দিন থেকেই উইকেট নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের পরের টেস্টও আহমেদাবাদেই হবে। এ অবস্থায় ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটাররা যেন পণ করেছেন, আলোচনার এমনই ঝড় বইয়ে দেবেন যেন ভারত আর স্পিনিং উইকেট না বানায়। ওদিকে ভিভিয়ান রিচার্ডস চাইছেন ভিন্ন কিছু। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি চাইছেন, চতুর্থ টেস্টেও একই রকম কঠিন উইকেটই দেওয়া হোক।

আহমেদাবাদে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। স্বাগতিক দলের জয়ের ব্যবধান মূল আলোচ্য নয়। দুই ইনিংস মিলিয়ে ইংল্যান্ডের মাত্র ১৯৩ রান তোলাই যত আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম ভারতের বিপক্ষে এক শর (৮১) নিচে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। এক লাফে আগের সর্বনিম্ন ইনিংস রেকর্ড থেকে ২০ রান কমিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় স্পিনাররা।

এমন ঘটনার পর মাইকেল ভন, মন্টি প্যানেসার কিংবা অ্যালিস্টার কুকরা ইংল্যান্ডকে আইসিসির শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। এমন উইকেট টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদাহানি করছে বলেও দাবি তাঁদের। ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটারদের এমন দাবিকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন ভিভ রিচার্ডস। তাঁর স্পষ্ট কথা, ভারতের মতো স্পিনের রাজ্যে স্পিনিং উইকেট দেখা তো বিস্ময়কর কিছু নয়!

ভিভ রিচার্ডস।
ফাইল ছবি: এএফপি

আহমেদাবাদে ৩০ উইকেটের ২৮ উইকেটই পেয়েছেন দুই দলের স্পিনাররা। অক্ষর প্যাটেল ১১ উইকেট পেয়েছেন। তবে চমকটা দেখিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট। ৮ রানে ৫ উইকেট পেয়ে অনন্য কীর্তি গড়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে কম রান দিয়ে কোনো স্পিনার কখনো ইনিংসে ৫ উইকেট পাননি। ম্যাচ শেষে রুট বলেছিলেন, উইকেট কেমন সেটা তাঁর পাঁচ উইকেটপ্রাপ্তিতেই বোঝা গেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই বোর্ডের লড়াই পুরো বিশ্ব ক্রিকেটেই ছড়িয়ে পড়েছে। ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটাররা এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার নাথান লায়নও বলেছেন, পেসবান্ধব উইকেটে যখন দলগুলো ৪৭ বা ৬০ রানে অলআউট হয়ে যায়, তখন তো আলোচনা হয় না। তাহলে এখন এত কথা কেন? রিচার্ডসও এটাই বলছেন, ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটারদের কান্নাকাটি বন্ধ করতে বলেছেন। আর বর্তমান ক্রিকেটারদের এমন চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করতে বলে দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিওতে ইংল্যান্ড দলকে বাস্তবতা মেনে নিতে বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে ভারতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আমার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি এ প্রশ্ন নিয়ে একটু বিভ্রান্ত। কারণ, মনে হয়েছে যে উইকেটে খেলা হয়েছে, তা নিয়ে কান্নাকাটি, শোরগোল একটু বেশি হচ্ছে বলেই আমার ধারণা। আমার মনে হয়েছে, যারা এমন কান্নাকাটি করছে, তাদের বোঝা উচিত, যখন পেসবান্ধব উইকেটে খেলা হয়, তখন গুড লেংথ থেকে বল লাফ দিয়ে ওঠে। তখন সবাই ধরে নেয়, এটা ব্যাটারদের সমস্যা। কিছু ব্যাটার এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখে।’

চেন্নাইয়েও স্পিন উইকেটে ইংল্যান্ডকে কাবু করেছে ভারত।
ছবি: বিসিসিআই

পেসবান্ধব উইকেট নিয়ে যেহেতু কখনো প্রশ্ন তোলা হয় না, স্পিনবান্ধব উইকেট নিয়েও প্রশ্ন তোলা অনুচিত বলে মনে করেন রিচার্ডস, ‘এখন আপনি উল্টো দিকটা (স্পিনবান্ধব উইকেট) দেখছেন। এ কারণেই তো এর নাম টেস্ট ক্রিকেট দেওয়া হয়েছে। কারণ, এখানে মনের জোরের, ইচ্ছাশক্তি ও লড়তে নামার সঙ্গে জড়িত সবকিছুর পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর এখন উইকেটে বল বেশি ঘুরছে বলে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ উল্টো দিক। মানুষ সম্ভবত ভুলে যাচ্ছে তারা কোথায় খেলছে। যদি আপনি ভারতে খেলতে যান, এটার জন্য আপনার প্রস্তুত থাকাই উচিত। আপনি স্পিনের দেশে যাচ্ছেন। কিসের মুখোমুখি হচ্ছে সেটা জেনেই তো প্রস্তুত হওয়া উচিত।’

আহমেদাবাদ টেস্টের পর উইকেট নিয়ে যেমন কথা হয়েছ, তেমনি ব্যাটসম্যানদের ভুলও অনেকে দেখিয়ে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল পায়ের ব্যবহার ঠিক করতে বলেছেন। ওদিকে ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন স্পিনবান্ধব উইকেটে পায়ের ব্যবহার ঠিক করার পেছনে কেডসের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। স্পাইকবিহীন কেডস নিয়ে নামলে স্পিনের বিপক্ষে পা নাড়ানো তুলনামূলক সহজ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন আজহারউদ্দিন। নিজের পক্ষে যুক্তি দেখাতে ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটিং ও ভারতে তাঁর সাফল্যের কথাও বলেছেন আজহার। আর রিচার্ডস ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বলছেন প্রতিপক্ষের মাটিতে প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের চরিত্র দেখাতে, ‘আমি বিশ্বাস করি এসব কান্নাকাটি, ওজর-আপত্তি থামা দরকার। ভারতের অস্ত্রভান্ডারে কী থাকে, সেটা না দেখার ভান থামাতে। আমার তো দেখতে ভালোই লাগছে (স্বাগতিক দলের কন্ডিশন কাজে লাগানো)।’

এত আলোচনার মধ্যেই ৪ মার্চ সিরিজের চতুর্থ টেস্ট শুরু হচ্ছে, সেই আহমেদাবাদেই। আগ্রাসী ক্রিকেটের শেষ কথা রিচার্ডসের কাছে এটা বড় এক সুযোগ মনে হচ্ছে। সিরিজের শেষ টেস্টেও আগের ম্যাচের মতো উইকেটই চাচ্ছেন রিচার্ডস। ক্যারিবীয় কিংবদন্তির চোখে এতে ইংল্যান্ডের নিজেদের দক্ষতাটা সঠিকভাবে বোঝা যাবে। আর তৃতীয় টেস্ট দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজেদের পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ সফরকারীরা পেয়েছে বলেও ধারণা কিংবদন্তির, ‘এসব কান্নাকাটি না করে, যেভাবে টেস্টটা এত দ্রুত শেষ হয়েছে আমার মতে এটা বরং ইংল্যান্ডকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে নিজেদের সবকিছু আরেকবার পরখ করে দেখার। ওদের এটা মাথায় রাখা উচিত যে উইকেটে খেলেছে চতুর্থ টেস্টেও এমন উইকেট থাকতে পারে। আমি যদি ভারত হতাম বা উইকেট বানানোর সঙ্গে জড়িত থাকতাম, আমি একই উইকেটই বানাতাম।’