ভারতে নেমেই বাবার কবর দেখতে গেলেন সিরাজ

মোহাম্মদ সিরাজ।ছবি: এএফপি

সিডনি টেস্ট শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ কাঁদতে দেখা গিয়েছিল মোহাম্মদ সিরাজকে। তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় দলের হয়ে খেলার আবেগ বলেই মনে হয়েছিল সাবেক ক্রিকেটারদের। পরে জানা গেছে, বাবার কথা ভেবেই অশ্রু গড়িয়েছিল ভারতীয় এই পেসারের। প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া সফর করতে এসেই পেয়েছিলেন বাবার মৃত্যু সংবাদ। এমন অবস্থায় দেশে ফিরতে পারেননি। করোনাকালে কোয়ারেন্টিনের কঠিন সময়ে একবার দেশে ফেরা মানেই অনুমিতভাবে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়া।

বুকে পাথর বেঁধেছিলেন সিরাজ। বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে তাই দেশে ফেরেননি। অস্ট্রেলিয়ায় রয়ে গিয়েছিলেন। বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট পেয়ে সে সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই প্রমাণ করেছেন। প্রথমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির স্বাদ পেয়েছেন পেস বোলারদের স্বপ্নের ভেন্যু ব্রিসবেনে। প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ নিয়েই দেশে ফিরেছেন সিরাজ। আর দেশে ফিরেই আজ বৃহস্পতিবার সিরাজ ছুটেছেন কবরস্থানে, বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে।

বাবার জন্য প্রার্থনা করছেন সিরাজ।
ছবি: টুইটার

পাঁচ মাস ধরেই ঘরের বাইরে সিরাজ। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে আইপিএল খেলেছেন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলার জন্য প্রস্তুতি পর্ব ও কোয়ারেন্টিন মিলিয়ে বেশ দীর্ঘ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতেই কাটিয়েছেন। আবার আইপিএল শেষ হতেই চড়েছেন অস্ট্রেলিয়াগামী উড়োজাহাজে। এ সময়টায় আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। এর মাঝে আইপিএল চলার সময়টাতেই একবার প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সিরাজের বাবা মোহাম্মদ গাউস। সিরাজের রেকর্ড গড়া এক বোলিং স্পেল দেখে আবার সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন।

কিন্তু সিরাজের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর বাবা। নভেম্বরে পৃথিবীর মায়াই ত্যাগ করেন মোহাম্মদ গাউস। এমন ঘটনায় দল থেকে তাঁকে ফেরার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করার জন্যই ভারতে ফেরেননি। দেশের হয়ে টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণ করা সিরাজ দেশে ফিরেই তাই বাবার কবর দেখতে ছুটেছেন। হায়দরাবাদে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই ছুটেছেন কবরস্থানের দিকে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুর্বল দল নিয়েও সিরিজ জেতাতে অবদান রেখেছেন সিরাজ।
ছবি: টুইটার

এর আগে ব্রিসবেনে ম্যাচ জেতানো এক স্পেল উপহার দিয়েছিলেন সিরাজ। ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর সিরাজ বলেছিলেন, খেলার প্রতি বাবা ও মায়ের ভালোবাসাই এত দূর এনেছে তাঁকে, ‘আমার বাবার মৃত্যুর পর এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও পাঁচ উইকেট পাওয়ায় আমি ভাগ্যবান। মায়ের সঙ্গে কথা বলে আমি আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। মায়ের সে ফোন কল আমাকে মানসিকভাবে শক্ত করেছে। আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করাতেই আমার মনোযোগ ছিল।’

ব্রিসবেনে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে সিরাজ বলেছিলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল ভারতের হয়ে খেলব আমি। আল্লাহকে ধন্যবাদ দিই, কারণ, সেটা পূরণ করেছি। যদি বাবা আজ বেঁচে থাকতেন খুব খুশি হতেন। আমি জানি, তাঁর দোয়া সব সময় আমার সঙ্গে থাকবে। আর নিজের পারফরম্যান্সে হতবাক হয়ে গেছি।’