ভারতের ‘উপহার’–এর অমর্যাদা করেননি লাবুশেন
কপালে থাকলে ঠেকায় কে!
সৌভাগ্যের দেখা পেতে চেষ্টাও থাকতে হয়। মারনাস লাবুশেন সেই চেষ্টা তো করেছেন–ই। তার সঙ্গে ‘সৌভাগ্য’ জুড়ে দিয়েছেন ভারতের ফিল্ডাররা। স্বয়ং অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ও অভিজ্ঞ চেতেশ্বর পূজারা—ক্যাচ ছেড়েছেন লাবুশেনের। দুটো ‘জীবন’ পেলে লাবুশেনের মতো ব্যাটসম্যান কী করতে পারেন?
ব্রিসবেন টেস্টে আজ প্রথম দিনের খেলা না দেখে থাকলেও আন্দাজে ধরে ফেলা যায়। সেঞ্চুরি! হ্যাঁ, লাবুশেনের ১০৮ রানের ইনিংসে ভর করে ৫ উইকেটে ২৭৪ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
উইকেটে রয়েছেন ক্যামেরন গ্রিন (২৮) ও অধিনায়ক টিম পেইন (৩৮)। শেষ সেশনে গ্রিনের ক্যাচও ফেলেছে ভারত। এসব ক্যাচ না ছাড়লে অনভিজ্ঞ দল নিয়ে মাঠে নামা ভারত প্রথম দিন শেষে থাকত শক্ত অবস্থানে।
টেস্টে এটি লাবুশেনের পঞ্চম সেঞ্চুরি। ২০১০ সালে ব্রিসবেনের এই গ্যাবায় হট–স্পট অপারেটর ছিলেন লাবুশেন। ৯ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে এ মাঠেই পেয়েছেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি।
অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংস মিলিয়ে চারবার ‘জীবন’ পেয়েছিলেন লাবুশেন। সিডনিতে একবার এবং ব্রিসবেনে ৩৭ রানে থাকতে রাহানে ও ৪৮ রানে পূজারার কাছে ‘জীবন’ পেলেন তিনি।
তবু আজ ভারত যে একেবারে খারাপ করেছে তা বলা যাবে না। অভিজ্ঞ পেসারদের অনুপস্থিতিতে ‘শিক্ষানবিস’ মোহাম্মদ সিরাজ, নবদীপ সাইনি, টি নটরাজন ও শার্দুল ঠাকুররা একেবারে খারাপ করেননি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের প্রথম ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারকে (১) ফিরিয়ে ভালো সূচনা এনে দেন সিরাজ। আরেক ওপেনার মার্কাস হ্যারিসকেও (৫) দ্রুত ফিরিয়ে প্রথম সেশনে লড়াই জমিয়ে তুলেছিলেন ভারতের পেসাররা।
২৭ ওভারে ২ উইকেটে ৬৫ রান তুলে মধ্যাহৃভোজে যায় অস্ট্রেলিয়া।
পরের সেশনে অপেক্ষাকৃত ভালো খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। স্টিভেন স্মিথকে (৩৬) হারানোর বিনিময়ে তারা তুলেছে ৮৯ রান। শেষ সেশনে ভারত লাবুশেন ও ম্যাথু ওয়েডকে তুলে নিতে পারলেও রান উঠেছে ১২০।
তিন সেশনে অস্ট্রেলিয়ার গড় রানরেট যথাক্রমে—২.৪১, ৩.৩০ ও ৩.৬৪। অর্থাৎ দিন গড়িয়ে চলার সঙ্গে চওড়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ানদের ব্যাট। এর কারণ বোধ হয় দিন গড়িয়ে চলার সঙ্গে ভারতীয় পেসারদের গতি কমে আসা।
প্রথম দিনে মোট ছয় বোলার ব্যবহার করেন ভারতের অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। মোট ৪ টেস্টের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সিরাজ, শার্দুল ও সাইনির বাইরে অভিষিক্ত ওয়াশিংটন সুন্দর ও নটরাজন বল করেন।
রোহিত শর্মার হাত ঘোরানো এর মধ্যে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে চোটের কারণে ভারতীয় বোলিংয়ের দুর্বলতা।
তিনটি জুটির ওপর ভর করে প্রথম দিন শেষে শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় উইকেটে লাবুশেনের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়েন স্মিথ।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ অধিনায়কে রোহিতের ক্যাচ বানিয়ে টেস্টে উইকেটের খাতা খোলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। চতুর্থ উইকেটে ১১৩ রানের জুটি গড়েন ওয়েড ও লাবুশেন।
ফিফটির সুবাস পেতে থাকা ওয়েড (৪৫) নটরাজনকে তখন ঠিক কী করতে টেনে পুল করতে গিয়েছিলেন, তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। মাথার ওপর ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
লাবুশেনও একই ভুলের খেসারত দিয়ে আউট হন সেই নটরাজনের বলেই।
ব্রিসবেনে গ্যাবার উইকেটে আজ প্রথম দিনেই ‘ফাটল ধরা পড়েছে’—জানিয়েছেন লাবুশেন।
এখানকার উইকেট এমনিতে পেসবান্ধব। কিন্তু ফাটল তৈরি হওয়ায় কাল হয়তো ওয়াশিংটন সুন্দরকে বেশি হাত ঘোরাতে হবে। ভারতীয় দলে তিনি–ই যে একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার। আজও সবচেয়ে বেশি ২২ ওভার বল করেছেন এই অফ স্পিনার।