ভারতের ক্রিকেটারদের আর আইপিএলে মন ভরছে না

আইপিএলে ভারতের দুই তারকা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি।ছবি: আইপিএল

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগে ভারতই শুধু দুশ্চিন্তামুক্ত ছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টি লিগের যুগে অনেক খেলোয়াড়ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিসর্জন দিয়ে হলেও এসব লিগ খেলতে চায়।

কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম আইপিএল ভারতেরই পণ্য। আর সে সুবাদে অর্থ নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের খুব বেশি চিন্তা না করলেও চলে। ঘরের মাঠে আইপিএল আর অন্যান্য ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগই তাঁদের ব্যস্ত রাখে।

দুনিয়ার সেরা সব খেলোয়াড়কে আইপিএলে আনার ব্যবস্থা করলেও নিজেদের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যেন ‘রক্ষণশীল বাবা!’ কোনোভাবেই নিজেদের ক্রিকেটারদের ঘর থেকে বের হতে দিতে রাজি নয়। তাই কোনো টি-টোয়েন্টি লিগেই ভারতীয় ক্রিকেটারকে দেখা যায় না। খেলোয়াড়দের এ ব্যাপারে অনাপত্তিপত্রও দেওয়া হয় না।

শুধু অবসরের পরই প্রীতি টুর্নামেন্টে দেখা মেলে কয়েকজনকে। এ নিয়ে কদিন আগে যুবরাজ সিং মুখ খুলেছিলেন। বলেছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেটারদের বাইরে খেলতে দেওয়া উচিত।

এ চিন্তা যে শুধু যুবরাজের মাথায় খেলছে, তা নয়। অনেক ভারতীয় ক্রিকেটারেরই এখন বাইরের পৃথিবী দেখার ইচ্ছা জেগেছে। অন্তত এউইন মরগান দাবি করছেন, ভারতীয় ক্রিকেটাররাও বাইরের লিগে খেলতে চাইছেন।

করোনাভাইরাসের ধাক্কা ক্রিকেট দুনিয়া ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে। সব দেশই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে। এমনকি সবার আকর্ষণের টি-টোয়েন্টি লিগও আয়োজন করে ফেলেছে অনেক দেশ। যদিও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের স্বপ্নের প্রকল্পটা এখনো স্থবির হয়ে আছে।

টি-টোয়েন্টি নামক ক্রিকেটের ধারণার জন্ম দেওয়া ইসিবি এবার ‘দ্য হান্ড্রেড’ প্রকল্পে হাত দিয়েছে। ১০০ বলের এই টুর্নামেন্টের প্রথম মৌসুম করোনা আটকে দিয়েছে। নতুন এই টুর্নামেন্ট নিয়ে বেশ আশা দেখছে ইংল্যান্ড। দেশটির সংক্ষিপ্ত সংস্করণের অধিনায়কের দাবি, ক্রিকেটাররা এই ক্রিকেট খেলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।

স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে কথোপকথনে মরগান বলেছেন, এই আগ্রহী ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেক ভারতীয়ও আছেন, ‘এখানেই (ভারতে) দ্য হান্ড্রেড নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমি জানি, অনেক ভারতীয় ক্রিকেটারই আছে যারা “দ্য হান্ড্রেড” ও বিশ্বের অন্যান্য প্রতিযোগিতাতে খেলতে আগ্রহী। তারা ভ্রমণ ভালোবাসে, নতুন কন্ডিশন এবং সংস্কৃতির স্বাদ পেতে চায়। আর তাদের অংশগ্রহণ এই টুর্নামেন্টের মানও বাড়াবে।’

ভারত তবু অনাপত্তিপত্র না দিয়েও খেলোয়াড় ধরে রাখতে পারছে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দলই জাতীয় দলের ক্ষতি মেনে নিয়েও আইপিএলের জন্য খেলোয়াড় ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে ছয়জন মূল ক্রিকেটার নিয়ে খেলতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।

যুবরাজ দেশের বাইরের লিগে খেলতে যাওয়ার পক্ষে।
ফাইল ছবি

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খর্বশক্তির দল নামাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক ক্রিকেটার তো জাতীয় দলের হয়ে খেলার কথা মাথায়ও আনেন না এখন। মরগান সতর্ক করে দিয়েছেন, আইসিসি শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে অনেক ক্রিকেটারই টি-টোয়েন্টি লিগের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবেন।

মরগানের দাবি, অনেক দিন ধরে এ নিয়ে কথা হলেও আইসিসি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ এখনো। সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইনের সঙ্গে কথোপকথনে বলেছেন, ‘আমার মূল দুশ্চিন্তা হলো খেলাটা যে গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, সে গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে না। এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয় এবং সামনে এগোতে চাইলে এ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কারণ, আপনি এমন অনেক দলের সঙ্গে খেলছেন, যারা সেরা একাদশ নামাতে পারছে না কারণ বিশ্বের বড় লিগগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে (খেলোয়াড় ধরে রাখার ব্যাপারে)।’

মরগান সাবধান করে দিয়েছেন, এমন চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জায়গা কেড়ে নিতে পারে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। আর এর পেছনে আইসিসির ব্যর্থতাই তাঁর কাছে বড় মনে হচ্ছে, ‘যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের উচিত ১০ বছর পর দৃশ্যটা কেমন হবে, সেটা ভাবা। কারণ, ব্যাপারটা যদি সামলাতে না পারে, বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর আরও দাপট বাড়বে। আমরা সবচেয়ে বড় ভুল যেটা করেছি, তা হলো সব সংস্করণ একসঙ্গে খেলানোর চেষ্টা করছি এবং এই খেলার মধ্যে কোন সংস্করণের কী কাজ, সেটা বুঝতে না পারা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হলো বাচ্চাদের জন্য, যারা এর আগে কখনো এই খেলা দেখেনি। তারা টিভিতে এই তারকায় ভরা চকচকে জিনিস দেখছে, বল মাঠের সব জায়গায় আছড়ে পড়তে দেখছে। ৫০ ওভার ক্রিকেট আবার ভিন্ন। এই ক্রিকেট এক দিনের মধ্যেই সবকিছু একটু একটু করে দিচ্ছে। টেস্ট ম্যাচ হলো শীর্ষ খেলোয়াড়দের সবচেয়ে সম্মানের খেলা। এটা সব সময় তাই ছিল এবং বিশ্বের খুব কম দেশেই একে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’