ভারতের দেওয়া এমন লজ্জা কখনো পায়নি ইংল্যান্ড

জয়ের গন্ধ পাচ্ছে ভারতছবি: রয়টার্স

রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপের সেমিফাইনাল চলছে। গ্ল্যামারগণের বিপক্ষে এসেক্সের ইনিংস তখনো শেষ হয়নি, তবে অ্যালিস্টার কুক আগেই আউট হয়ে গেছেন। তাঁর ৬৬ বলে ৬৮ রানের ইনিংসটা দেখে ইংলিশ সমর্থকেরা নির্ঘাত হাপিত্যেশ করে মরছেন।

না, কুকের ঝোড়ো গতিতে রান তোলা দেখে নয়, এমন দারুণ ছন্দে আছেন বলেই কুকের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলা হচ্ছে। একদিকে এখনো ফর্মের চূড়ায় ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ওদিকে ভারতের বিপক্ষে লজ্জার এক ইতিহাস গড়ে ফেললেন বর্তমান দুই ওপেনার ররি বার্নস ও ডম সিবলি!

বার্নস ফিরেছেন আগে
ছবি: এএফপি

লর্ডস টেস্টে পঞ্চম দিনে ভালো বিপদে পড়েছিল ভারত। দলের ১৯৪ রানেই ফিরে গিয়েছিলেন ঋষভ পন্ত। ২০৯ রানে ফিরলেন ইশান্ত শর্মা। ভারতের লিড তখন মোটে ১৮২। দিনের মাত্র ৮ ওভারের খেলা শেষ হয়েছে। লর্ডস টেস্ট ইংল্যান্ডের কাছে যাচ্ছে বলেই তখন বাজি ধরছেন সবাই।

এর মধ্যে ইতিহাস গড়তে ইচ্ছা হলো মোহাম্মদ শামি (৫৬*) ও যশপ্রীত বুমরার (৩৪*)। দুজনের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে এল ৮৯ রান। ইংল্যান্ডের মাটিতে নবম উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ রান। ইতিহাসে নবম উইকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি রান (১০৪) একবারই তুলেছিল ভারত। ১৯৮১ সালের দিল্লির সে ঘটনায় উইকেটে ছিলেন বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রী।

শামি ও বুমরা মিলে শুধু ৮৯ রান যোগ করেননি, খেলেছেন ২০ ওভারও। তাতে ইংল্যান্ডের জন্য নির্ধারিত ওভারের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছিল। এতে অনেক বিশ্লেষকই বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। এভাবে ওভার কমে আসায় আর ম্যাচের মজা থাকবে না। ইংল্যান্ড আর রান তাড়া করার চেষ্টা করবে না।

সিবলি ফিরেছেন ৪ বল খেলেই
ছবি: এএফপি

ওসব নিয়ে বিরাট কোহলির ভাবতে বয়েই গেছে। তাই একদম নিরাপদ বুঝে ইনিংস ঘোষণা করেছেন। ৮ উইকেটে ২৯৮ রানে থেমেছে ভারতের ইনিংস। ৬০ ওভারে প্রতিপক্ষকে ২৭২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। ইংলিশ বিশ্লেষকেরা আবার হতাশ হলেন, যখন ররি বার্নস ও ডম সিবলি ব্যাট করতে নামলেন। রক্ষণাত্মক এ দুজন নামা মানেই তো ইংল্যান্ডের ম্যাচ জেতার কোনো ইচ্ছা নেই।

ম্যাচ জেতাতে না পারেন, কিন্তু তাই বলে ম্যাচ জমানোর ক্ষমতা তো আছে ইংলিশ দুই ওপেনারের। প্রথম টেস্টে দুজনে মিলে ৪ ইনিংসে তুলেছিলেন ৬৪ রান। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে দুজন মিলে মোট ৬০ রান এনে দিয়েছিলেন। ৪ ইনিংস শেষেও তা-ই থাকল। প্রথম বুমরার বলে শূন্য হাতে ফিরলেন বার্নস। পরের ওভারে শামির বলেই বিদায় সিবলির। দুজনের মধ্যে আশ্চর্য মিল, দুজনই খেলেছেন ৪টি করে বল!

১ রানে ২ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে এখন ম্যাচ জেতার চেষ্টা পুরোপুরি বাদ দিয়ে সময় কাটানোয় ব্যস্ত হতে হয়েছে। আর এর মধ্যেই লজ্জার এক রেকর্ড দেখে ফেলেছে ইংল্যান্ড। টেস্টে একই ইনিংসে দুই ওপেনারকে ইংল্যান্ড শূন্য হাতে এর আগেও ফিরতে দেখেছে, তাও পাঁচবার। কিন্তু সে পাঁচবারের একটিও ঘরের মাঠে নয়। অর্থাৎ প্রায় ১৪০ বছরের বেশি সময়ে অক্ষুণ্ণ থাকা এক রেকর্ড আজ শেষ হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের।

বার্নস ও সিবলি জুটি ইংল্যান্ডের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে
ফাইল ছবি

এটা যে একক কোনো ঘটনা নয়, সেটা বোঝা যায় আরেকটি তথ্যে। এ বছর টেস্টে বার্নস ও সিবলি মিলে ৯ বার শূন্য হাতে ফিরেছেন। আর যাঁর প্রসঙ্গ টেনে এই লেখার শুরু, সেই কুক ১৬১টি টেস্ট খেলে শূন্য রানে আউট হয়েছেন মাত্র নয়বার! তাঁকে নিয়ে ইংলিশদের হাপিত্যেশের কারণ এতেই বোঝা যায়।

এই ওপেনিং জুটি ইংল্যান্ডের জন্য কতটা দুশ্চিন্তার, সেটা বোঝা যায় আরেক তথ্যে। এ পর্যন্ত যতবার এ দুজন একসঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেছেন, তার ৩৭ ভাগ সময় দুই ওভার শেষ হওয়ার আগেই উইকেটের পতন হয়েছে! এর মধ্যে ররি বার্নস তাঁর ক্যারিয়ারের প্রতি ৬ ইনিংসে একবার ৬ বলের মধ্যে আউট হয়েছেন। একজন ওপেনারের এমন পরিসংখ্যান কোনো টেস্ট দলকেই স্বস্তি দিতে পারে না।

ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছেন ইশান্ত শর্মা
ছবি: রয়টার্স

দুই ওপেনারের ব্যর্থতা তিনে নামা ব্যাটসম্যান ঢেকে দিতে পারেন। কিন্তু পাঁচ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা হাসিব হামিদ প্রথম ইনিংসে ‘গোল্ডেন ডাক’ পেয়েছিলেন। এবার দুই ওপেনারের ‘কীর্তি’তে আরেকটি রেকর্ডও হলো। একই টেস্টে ইংল্যান্ডের এক, দুই ও তিনের শূন্য পাওয়ার ঘটনা চারটি। তার মধ্যে একটি ১৯১০ সালে, আরেকটি ২০০২ সালে। বাকি দুটিই ঘটেছে ২০২১ সালে। অর্থাৎ ১৪৩ বছরে যে কাণ্ড হয়েছে দুবার, সেটা এক বছরেই দুবার দেখল ইংল্যান্ড। সিবলির দুর্ভাগ্য, দুই ঘটনাতেই ছিলেন তিনি।

এদিকে প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা ঢাকার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনে নামা হামিদ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ব্যাটসম্যান ইশান্ত শর্মার বলে এলবিডব্লু হয়েছেন ৯ রানে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইংল্যান্ডের স্কোর ২২ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৭ রান। বাকি ৩৮ ওভার কাটিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে খেলছেন অধিনায়ক জো রুট (৩৩*)।