ভারতের বিপক্ষেই স্মিথের জবাব

সমালোচকদের মুখ বন্ধ করলেন স্মিথ।ছবি: এএফপি

৯৯ রানে অপরাজিত কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য নবদীপ সাইনির ডেলিভারিটা আদর্শ কিছু ছিল না। স্টাম্পের ওপর হাফ ভলি। স্বভাবসুলভ একটু সরে গিয়ে বলটা স্কয়ার লেগে ঠেলে ৩টি রান নেন স্টিভেন স্মিথ। এরপর যা করলেন সেটিকে অন্তত স্মিথসুলভ বলা যায় না।

স্মিথ ঠান্ডা মাথায় খেলতে অভ্যস্ত। উদ্‌যাপনও হয় শীতল। কিন্তু এ যাত্রায় উপচে পড়া আনন্দ (নাকি স্বস্তি?) ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। ব্যাটটা বাতাসে ছুড়ে মারার ভঙ্গি করলেন! যেন বোঝাতে চাইলেন, আগের দুই টেস্টে আমার বাজে ব্যাটিং নিয়ে যত কথা, কাটাছেঁড়া ও পরিসংখ্যান ঘাঁটা হয়েছে, তার জবাব এই ব্যাট, এই ইনিংস! আগের চার ইনিংস মিলিয়ে মোট রান ছিল ১০। পাঁচ নম্বর ইনিংসে এসে তা মোট ১৪১!

অর্থাৎ সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ১৩১ রানের এক ইনিংসে প্রত্যাবর্তন ঘটল স্মিথের, প্রত্যাবর্তন ঘটল এখনকার টেস্ট ক্রিকেটে খুব স্বাভাবিক হয়ে আসা এক অনুভূতির, স্মিথ রান পাচ্ছেন! ২২৬ বলের এই ইনিংস শুরু হয়েছিল কাল দলীয় ১০৬ রানে। ১৬ চারে সাজিয়ে শেষ উইকেট হিসেবে। রান আউট, জশ হ্যাজেলউডকে ওই ওভারে যশপ্রীত বুমরার মুখোমুখি হতে দিতে চাননি স্মিথ। ২ রান নিতে গিয়ে অপমৃত্যু ঘটেছে শেষ ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দারুণ এক লড়াইয়ের। লাবুশেনের সঙ্গে ১০০ রানের জুটি ভাঙার পর সাতটি উইকেট জুটিতে কারও সঙ্গে পঞ্চাশের দেখাও পাননি স্মিথ। শেষ উইকেটে হ্যাজেলউডকে নিয়ে যোগ করেন ১৭ বলে ২২। এর মধ্যে স্মিথেরই ২১।

এ সেঞ্চুরি যেন স্মিথের তরফ থেকে সমালোচকদের দেওয়া ‘জবাব’!
ছবি: এএফপি

স্মিথের এমন প্রত্যাবর্তন তো হওয়ারই কথা ছিল। রবিচন্দ্র অশ্বিনের পায়ে অফ স্পিন করার কৌশলের সামনে শুরুতে ভুগেছেন। কিন্তু খেলা গড়িয়ে চলার সঙ্গে স্মিথের ফেরাও যেন অবধারিত ছিল। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যেহেতু ভারত, টেস্টে আর কোনো দলের বিপক্ষে এত সেঞ্চুরি নেই স্মিথের।

সিডনিতে আজ তৃতীয় দিনের সেঞ্চুরিসহ ৮টি; টেস্টে এর আগে শুধু তিনজন ভারতের বিপক্ষে এত সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ভিভ, সোবার্স ও পন্টিং। এর আগে টেস্টে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ সেঞ্চুরি (২০১৭, ধর্মশালা) পাওয়া ব্যাটসম্যানও ছিলেন স্মিথ। সেই খরা কাটল তাঁর ব্যাটেই। এবার ভারতের সফরে স্মিথের তিন সেঞ্চুরি, সবগুলোই সিডনিতে! ভারত স্মিথের কত প্রিয় প্রতিপক্ষ তা-ও বুঝিয়ে দেয় পরিসংখ্যান। স্মিথের মোট আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির ৩৪ শতাংশ ভারতের বিপক্ষে।

সেঞ্চুরির পর জবাবটাও দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ অধিনায়ক। বাতাসে ব্যাট বাগিয়ে ধরা যে কিছু লোকের মুখ বন্ধ করতে, তা বোঝা গেল স্মিথের কথায়, ‘ফর্ম হারানো নিয়ে অনেকের অনেক কথাই পড়লাম। আমার মনে হয় ফর্ম হারানো ও রান–খরার মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই কিছু রান করে কিছু লোককে চুপ করাতে পেরে ভালো লাগছে।’

স্মিথের এটি ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরি। শুধু স্যার ডন ব্র্যাডম্যানই তাঁর চেয়ে কম ইনিংস খেলে এতগুলো সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। ২৭তম সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ৭০ ইনিংস লেগেছিল ডনের। স্মিথের লাগল ডনের প্রায় দ্বিগুণ! ১৩৬ ইনিংস। কিন্তু তালিকায় পরের নামগুলো দেখুন, বিরাট কোহলি (১৪১ ইনিংস), শচীন টেন্ডুলকার (১৪১ ইনিংস), সুনীল গাভাস্কার (১৫৪ ইনিংস), ম্যাথু হেইডেন (১৫৭ ইনিংস)। স্মিথ এর আগে সর্বশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২০১৯ অ্যাশেজে ওল্ড ট্রাফোর্ডে। ভুল হলো। ডাবল সেঞ্চুরি।

‘জবাব’ দিয়ে উদ্‌যাপনটা বুনোই করলেন স্টিভেন স্মিথ।
ছবি: এএফপি

আরেকটি সেঞ্চুরির দেখা পেতে মাঝে কেটে গেছে ৪৯০ দিন। এর মধ্যে গত বছরটা ছিল সবচেয়ে বাজে। টেস্টে স্মিথের ব্যাটিং গড় ছিল ২০-এর নিচে। এমন কিছু তাঁর ক্যারিয়ারে এই প্রথম। কিন্তু নতুন বছরটা স্মিথ শুরু করলেন সেঞ্চুরি দিয়ে; সবার প্রতি হয়তো এটাই স্মিথের বার্তা, নতুন বছরটা সবার এমন কাটুক, এমন প্রত্যাবর্তন ঘটুক!