‘ভুল বোঝাবুঝি’ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়ই!

মাহমুদউল্লাহ বললেন ওই ‘ভুল বোঝাবুঝি’র কথাইছবি: এএফপি

জিমি নিশামের টুইট, ‘কত রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছেন, তা না জেনে কীভাবে রান তাড়া শুরু করা সম্ভব? পাগলামি।’ নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার মজার এবং বুদ্ধিদীপ্ত সব টুইটের জন্য খ্যাতিমান। তবে তাঁর এ টুইটের পেছনে যে কারণ—অফিশিয়ালদের ভুল—বাংলাদেশের হারে পরোক্ষভাবে এর ভূমিকা রয়েছে। নেপিয়ারে আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হারের পর কথাটা বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

আগে ব্যাট করেছে নিউজিল্যান্ড। ১৭.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৩ রানে থাকতে বৃষ্টিতে থমকে যায় তাদের ইনিংস। অফিশিয়ালদের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল, সিরিজ হার আটকাতে ১৬ ওভারে ১৪৮ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম ওপেন করে ১.৩ ওভার (৯ বল) পর্যন্ত এ লক্ষ্যে ব্যাট করেছেন। তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১২। এরপর হঠাৎ করে খেলা থামান ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো। ড্রেসিংরুমে ফিরে যান দুই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ঢুঁ মারেন ম্যাচ রেফারির কামরায়। জানা যায়, ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে আগের লক্ষ্যটা ভুল ছিল। নতুন লক্ষ্য হলো, ১৬ ওভারে ১৭১ রান করতে হবে।

নতুন এই লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৪২ রানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ডি/এল নিয়মে ২৮ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিল নিউজিল্যান্ড। হারের পর সংবাদমাধ্যমকে মাহমুদউল্লাহ অফিশিয়ালদের ভুল নিয়ে বলেছেন, ‘একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, ডি/এল (লক্ষ্য) স্কোর কত আমরা সেটাই জানতাম না। স্কোরবোর্ডে এটা পাল্টে গেছে। তবে ম্যাচে এমন হতেই পারে।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক সরাসরি না বললেও বোঝা যায়, লক্ষ্য ২৩ রান বেড়ে যাওয়ায় ইনিংসের প্রথম ৯টি বল হয়ে ওঠে তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা ১৭১ রানের লক্ষ্য জেনে ব্যাট করতে নামলে ১.৩ ওভারের মধ্যে ব্যাটিংটা অন্য রকমও হতে পারত।

ভুল লক্ষ্যে ১.৩ ওভার ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ
ছবি: এএফপি

সে যাই হোক, মাহমুদউল্লাহ অবশ্য মুখে বলেছেন অন্য কথা, ‘প্রথম পাঁচ ওভারে আমরা ঠিক পথেই ছিলাম।’ ৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৩৭। ১৭১ রানের (ততক্ষণে জানা হয়ে গেছে) লক্ষ্যে নেমে পাওয়ার-প্লের মধ্যে ওভারপ্রতি ৭.৪০ রানরেট, কতটা সঠিক পথের ছাপ রাখে, সে প্রশ্ন থাকবে। কারণ, জিততে হলে ওভারপ্রতি ১০ রানের বেশি লাগবে, যেখানে দ্রুত রান তোলার সুযোগটা বেশি থাকে পাওয়ার-প্লেতে।

নাঈম ও সৌম্যর ইনিংসের প্রশংসা করেছেন মাহমুদউল্লাহ। দুই টপ অর্ডারের ইনিংস দুটো দুই রকম। দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ বলে ৮১ রানের জুটি গড়েন দুজন। এর মধ্যে সৌম্যর অবদান ২৭ বলে ৫১ এবং নাঈমের ২৩ বলে ২৭। জয়ের জন্য ১৭০ রানের লক্ষ্য মাথায় রাখলে সৌম্যর ইনিংসটা যদি হয় সময়োচিত, নাঈমের ইনিংসটা তাহলে অসময়োচিত। ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ২৭ বলে ৫১ করে আউট হন সৌম্য। ৩৫ বলে ৩৮ করে আউট হন নাঈম, ‘সৌম্য ও নাঈম ভালো ব্যাট করেছে। কিছু বলে আমরা রান করতে পারিনি।’

ইনিংসে একপর্যায়ে ৪ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের। ১৩.৩ ওভার থেকে ১৪.১ ওভারের মধ্যে (দলীয় ১২৩ রান থেকে ১২৬) ৩ রানের মধ্যে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন ও মোহাম্মদ মিঠুন। মাহমুদউল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিলেন, টি-টোয়েন্টিতে শুরুটা ভালো-মন্দ যাই হোক, ভালোভাবে শেষ করাটা গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশ দল যা পারেনি, ‘টি-টোয়েন্টিতে কখনো ভালো শুরু হয়, কখনো-বা খারাপ। কিন্তু ভালোভাবে শেষ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা এ ম্যাচ থেকে ইতিবাচক কিছু বিষয় নিয়ে পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’

বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। এই সফরে কিছু বিষয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে, নিউজিল্যান্ড একের পর এক ম্যাচ জিতছে, ওদিকে বাংলাদেশ দলও একের পর এক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জাবর কাটছে। প্রায় চিরায়ত হয়ে যাওয়া এই দৃশ্য থেকে শিখতে পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরাও—শেষ ম্যাচের ফলটাও তাহলে জানা?