ভুল সিদ্ধান্তের বিচার চাইল পাঞ্জাব

ভুল সিদ্ধান্তের বিচার চাইছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবছবি: টুইটার

টাই হওয়া ম্যাচে সুপার ওভারে হেরেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। তবে প্রাপ্য ১ রান যোগ হলে ম্যাচটা সুপার ওভার পর্যন্ত যেত না। পাঞ্জাবই জিতত। এখানে বঞ্চিত হয়ে চুপ করে থাকেনি লোকেশ রাহুলের দল। ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথের কাছে আপিল করেছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি। মাঠের আম্পায়ার নিতিন মেননের দেওয়া ‘শর্ট রান’-এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই আপিল।


ঘটনাটি কাল পাঞ্জাব-দিল্লি ম্যাচের ১৯তম ওভারের।একটি শট খেলে দৌড়ে ২ রান নেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। মাঠের আম্পায়ার নিতিন মেনন এর মনে হয়েছে ক্রিস জর্ডান প্রান্ত বদলের সময় ক্রিজে ব্যাট রাখেননি এবং এর ফলে শর্ট রান ধরে নিয়ে এক রান কমিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৭ রান তুলে ম্যাচ টাই করে পাঞ্জাব। এরপর হারতে হয় সুপার ওভারে। কিন্তু ওই ১ রান যোগ হলে ম্যাচটা নির্ধারিত ওভারের মধ্যেই শেষ হয়ে যেত। অর্থাৎ নিতিন মেননের ভুল সিদ্ধান্ত ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে।

সিদ্ধান্তটা যে ভুল তা টের পাওয়া গেছে সুপার ওভার শুরুর আগে টিভি ফুটেজ দেখে। বৈধভাবেই ক্রিজে ব্যাট ছুঁইয়ে দৌড় দেন জর্ডান। পাঞ্জাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সতীশ মেনন আপিল করার কথা নিশ্চিত করেছেন সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে, ‘আমরা ম্যাচ রেফারির কাছে আপিল করেছি। মানুষ তো ভুল করতেই পারে এবং আমরা যেটা বুঝি আইপিএলের মতো বিশ্বমানের টুর্নামেন্টে মানুষের ভুলের জায়গা নেই। এই ১ রানের জন্য আমরা প্লে অফে নাও উঠতে পারি। এটা অন্যায়। আশা করি নিয়মটা পর্যালোচনা করা হবে তাতে মানুষের ভুলের সুযোগ থাকবে না।’ সাবেকদের দাবি, এসব সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রযুক্তির ভূমিকা থাকা উচিত।

পাঞ্জাবের হয়ে ৬০ বলে ৮৯ রান করেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
ছবি: টুইটার

টিভি ফুটেজে মেনন ভুল প্রমাণ হওয়ার পরও সিদ্ধান্তটা পাল্টানো হয়নি। তবে পাঞ্জাবের আপিলে কোনো ফল না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আইপিএল প্লেয়িং কন্ডিশনের নিয়মে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২.১২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আম্পায়ার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারবেন যদি তা দ্রুত করা হয়। এ ছাড়া আম্পায়ার একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে সেটাই চূড়ান্ত।’ পাঞ্জাবের সাবেক কোচ ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার টম মুডি ক্রিকইনফোকে বলেছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হলে আইপিএলের নিয়ম পাল্টাতে হবে, ‘ঘটনা ঘটার আগে তো এসব নিয়ে ভাবা হয় না। কোনো সন্দেহ নেই তৃতীয় আম্পায়ারের হস্তক্ষেপ দরকার ছিল। কিন্তু এ জন্য টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাদের ঘোষণা করতে হবে এটাও (তৃতীয় আম্পায়ারের হস্তক্ষেপ) নিয়মের অধীনে।’

মুডি ব্যাখ্যা করেন, ‘এটা নিয়মের অংশ নয়। নো বল নিয়ে সিদ্ধান্ত দেন তৃতীয় আম্পায়ার। রানআউট আর স্টাম্পিং নিয়েও। কিন্তু এর বাইরে অন্যান্য বিষয়ে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারবেন তৃতীয় আম্পায়ার—এটা তারা ঘোষণা করেনি। অর্থাৎ এমন কিছু না ঘটলে প্রযুক্তির যতটুকু সুবিধা আছে তা পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব নয়।’ মাঠের আম্পায়ার মেনন চাইলেও তখন তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নিতে পারতেন না। আউট, বাউন্ডারি নিয়ে সিদ্ধান্ত ও নো বল ছাড়া এসব বিষয় নিয়ে তৃতীয় আম্পায়ারকে ডাকার সুযোগ নেই মাঠের আম্পায়ারের। তৃতীয় আম্পায়ারও খেলোয়াড়েরা ডিআরএস নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে কিংবা মাঠের আম্পায়ার না ডাকলে খেলায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের যৌথ মালিক প্রীতি জিনতা ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে দল হারায়। চরম আধুনিক যুগে এসেও তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর টুইট, ‘একটা মহামারির মধ্যেও আগ্রহ নিয়ে সফর করেছি। ৬ দিন কোয়ারেন্টিনে থেকেছি। হাসিমুখেই পাঁচটা কোভিড টেস্ট দিয়েছি। কিন্তু এই একটা শর্ট রানই সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিল। তথ্যপ্রযুক্তি রেখে লাভ কী যদি সেটা ব্যবহারই না হয়? বিসিসিআইয়ের উচিত নতুন আইন চালু করা। প্রতি বছর এটা চলতে পারে না।’


প্রীতির দাবি, খেলার ভবিষ্যতের জন্য নতুন আইন ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে ভাবা উচিত ভারতীয় বোর্ডের। আরেকটি টুইটে লিখেছেন, ‘হারি বা জিতি, আমি সব সময় সেটা মেনে নেওয়াতে বিশ্বাসী। আমি খেলার চেতনায় বিশ্বাস করি। কিন্তু ভবিষ্যতে সবার ভালোর জন্যই নিয়ম বদলানোর কথা তোলা গুরুত্বপূর্ণ। অতীতেও এমন হয়েছে এবং এ থেকে সরে আসা দরকার। বরাবরের মতোই আশা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।’