ভয় না পাওয়ার মন্ত্র নিয়ে নামবে বাংলাদেশ

আবুধাবিতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশছবি: বিসিবি

টি-টোয়েন্টির ইংল্যান্ড দল আর আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশ দলের জন্য বলতে গেলে একই অর্থ বহন করে— দুটোই অচেনা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে আজই প্রথম। শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামেও এর আগে কখনো টি-টোয়েন্টি খেলেনি বাংলাদেশ।

অবশ্য ক্রিকেটের অন্য সংস্করণের কথা যদি বলেন, এর কোনোটিই আবার বাংলাদেশের অচেনা নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট, ওয়ানডে অনেক খেলেছে। তেমনি শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামেও আফগানিস্তান, পাকিস্তান মিলিয়ে ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তিনটি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট, ওয়ানডে অনেক খেললেও টি-টোয়েন্টি খেলেনি
ফাইল ছবি

২০১৮ সালের এশিয়া কাপে তো এ মাঠে এই দুই দলকে একটি করে ম্যাচও হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও আবুধাবিতে বাংলাদেশ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে, কিন্তু সেগুলো হয়নি মূল মাঠে। কাজেই টি-টোয়েন্টির ইংল্যান্ড দল এবং আবু জায়েদ স্টেডিয়ামের টি-টোয়েন্টি, দুটোর সঙ্গেই আজ প্রথম সাক্ষাৎ ঘটবে বাংলাদেশের।

এমন ম্যাচের আগে টি-টোয়েন্টির ‘অচেনা’ প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের দুটো জিনিসকেই বেশি ভয় বাংলাদেশের—ব্যাটিং ও বোলিং। পড়ে নিশ্চয়ই হাসছেন, ক্রিকেটে এর বাইরে আর আছে কী! আসলে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের জন্য এতটাই নিশ্ছিদ্র যে কোনো চোরা ফাঁকফোকর দিয়ে তাদের বিপদে ফেলার সুযোগ পাওয়াটা কঠিনই।

প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড
ছবি : রয়টার্স

দলটার ব্যাটিংয়ের কথাই ধরুন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচটি ধরলে সর্বশেষ সাত টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের হার মাত্র একটি। গত জুলাইয়ে ঘরের মাঠের সিরিজে হারা নটিংহামের সে ম্যাচেও পাকিস্তানের ২৩২ রান তাড়া করতে গিয়ে লিয়াম লিভিংস্টোনের সেঞ্চুরিতে ২০১ রান করে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। পরের ম্যাচেও ২০০ রান করে তারা ম্যাচ জিতেছে ৪৫ রানে। আর ইংল্যান্ডের বোলিংটা কেমন, তা তো আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫৬ রানে অলআউট করেই দেখিয়ে দিয়েছে দলটা।

আবুধাবির মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের ভাবনায় তাই ব্যাটিং-বোলিং দুটো চিন্তাই টিক টিক করছে। দুবাইয়ের আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে অনুশীলনের আগে কাল পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন অবশ্য একটা ‘ফর্মুলা’ দিলেন ইংল্যান্ডকে সামলানোর, ‘আমি আমাদের বোলার, ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইংল্যান্ডের বোলাররা সব সময়ই উইকেট নিতে চায়। ওদের ব্যাটসম্যানেরাও চায় সব সময় রান করতে। প্রতিপক্ষের বোলারদের চাপে ফেলাই তাদের লক্ষ্য থাকে।’

মাঠে নামার আগে পেসারদের টিপস দিচ্ছেন বাংলাদেশের বোলিং কোচ ওটিস গিবসন
ছবি: শামসুল হক

তবু দলের প্রতি গিবসনের বার্তাটা পরিষ্কার—আতঙ্কিত হওয়া চলবে না। হয়তো বাজে বলেও মার খেতে হবে, তবু আতঙ্ক নয়। ইংল্যান্ড বেশি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলে অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদেরও উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। গিবসন সেই সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকতে বললেন বোলারদের, ‘তারা উইকেট নেওয়ারও সুযোগ দেবে। আমাদের ঠান্ডা মাথায় সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে।’

ইংল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ঠেকিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনটা বাংলাদেশ দল করে ফেলেছে পরশু রাতেই। টিম মিটিংয়ে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হওয়ার পর কাল দুবাই স্পোর্টস সিটির আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠের অনুশীলনটাও হয়েছে সেই পরিকল্পনা মেনে। স্বাভাবিকভাবেই ক্যারিবিয়ান কোচ গিবসন তার বিস্তারিত জানালেন না। শুধু বললেন, ‘আমরা যা-ই করি না কেন, সেটা যেন সঠিক হয় এবং সেটা যেন আমাদের পক্ষে যায়।’

একটাই দুশ্চিন্তা, অনুশীলনে ব্যথা পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান। তবে খোঁজখবর নিয়ে যত দূর জানা গেছে, আজ নুরুলের খেলা নিয়ে তেমন কোনো সংশয় নেই, যদি না রাতের মধ্যে ব্যথা বা সমস্যা আর বাড়ে।

আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫৫ রান তাড়া করতে গিয়েই ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলাটাও বাংলাদেশ দলের কাছে ‘বিশেষ দ্রষ্টব্যে’র মর্যাদা পাচ্ছে। গিবসনের ভাষায়, ‘এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক।’

বাংলাদেশ দলের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

কাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ডের প্রতিনিধি হয়ে আসা জস বাটলার অবশ্য এত হিসাব-নিকাশে যাচ্ছেন না। তাঁর মনে হচ্ছে আগের ম্যাচে পাওয়া জয়টাই এ ম্যাচে এগিয়ে রাখবে ইংল্যান্ডকে, ‘জয়ের মধ্যে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্টটা যেভাবে এগোচ্ছে, এখানে ভুল করার সুযোগ নেই। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সৌন্দর্যই হলো এখানে যেকোনো দল যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারে। এমনকি কোনো একজন ক্রিকেটারও পারে দলে জিতিয়ে দিতে।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার আগে যেকোনো প্রতিপক্ষেরই চিন্তা থাকে বাঁহাতি স্পিনারদের নিয়ে। ইংল্যান্ডও ব্যতিক্রম নয় এবং সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদদের জন্য বিশেষ প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছে তারা। বাটলারের কথায় সেটিরই ইঙ্গিত, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট প্রতিপক্ষ এবং কন্ডিশন বিবেচনা করেই প্রস্তুতি নিই। এই টুর্নামেন্টে স্পিনাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং হ্যাঁ, বাংলাদেশ দলেও বেশ কয়েকজন ভালো বাঁহাতি স্পিনার আছে। নেটে আমরা তাই স্পিনারদের বিপক্ষে অনেক খেলেছি এবং তাদের নিয়ে কিছু পরিকল্পনাও সাজিয়েছি।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন মঈন আলী
ছবি: ক্রিকেট ইংল্যান্ড

বাংলাদেশ দলে যেমন সাকিব-নাসুম-মেহেদীরা আছেন, ইংল্যান্ডও স্পিন বোলিংয়ে কম স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল সেটা বেশ ভালোই বুঝেছে। নতুন বলে শুরুটা করেছিলেন অফ স্পিনার মঈন আলী, শেষটা লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। পরের জন্য তো ২.২ ওভার বল করে মাত্র ২ রানেই নিয়েছেন ৪ উইকেট!

আবুধাবির উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও আজ নিশ্চিতভাবেই চোখ রাঙাবেন তাঁরা। তাতে কি! সেই রাঙা চোখের দিকে না তাকালেই হলো। ওটিস গিবসনের ভয় না পাওয়ার মন্ত্রটাও কাজে লাগতে পারে তখনই।