ভয়ংকর উইকেটশিকারির হাতে তামিমরা

আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরেছেন তামিম ইকবাল।ছবি: প্রথম আলো

প্রতি ৪১.৭ বলে একটি করে টেস্ট উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যা সবচেয়ে কম স্ট্রাইকরেট। ৪৫ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে ২০২ উইকেটের মালিক রাবাদা এমনিতেই হননি। রাবাদার দেশেরই আরেক পেসার ডেল স্টেইনের স্ট্রাইকরেট ৪২.৩। তাঁর পরই ওয়াকার ইউনিসের স্থান, টেস্ট ক্রিকেটে ৪৩.৪ স্ট্রাইকরেটে উইকেট নিয়েছেন এই পাকিস্তানি কিংবদন্তি। টেস্ট ক্রিকেটের পরিসংখ্যান বলছে, এই তিন ফাস্ট বোলারই টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর উইকেটশিকারি।

কিন্তু এই তিনজনকেও ছাড়িয়ে গেছে ‘আক্রমণাত্মক শট’। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের আক্রমণাত্মক শট যে রাবাদার চেয়েও বেশি স্ট্রাইকরেটে উইকেট শিকার করে। আক্রমণাত্মক শটের উইকেট শিকারের স্ট্রাইকরেট ও রাবাদার স্ট্রাইকরেটে আকাশ–পাতাল পার্থক্য। প্রতি ৩৫ বলে আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে একজন করে টেস্ট ব্যাটসম্যান আউট হন!

আউট হয়ে ফিরছেন সৌম্য সরকার। নিজের পতন ডেকে এনেছেন আক্রমণাত্মক শট খেলে।
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে প্রথম চার উইকেটের কথাই ধরুন। সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন, মুমিনুল হক ও তামিম ইকবাল—প্রত্যেকেই আউট হয়েছেন রানের পেছনে দৌড়ে। প্রত্যেকেই আউট ‘আক্রমণাত্মক শট’ নামের উইকেটশিকারির হাতে!

ইনিংসের শুরুতেই সৌম্য সরকারের শর্ট মিড উইকেটে আলগা শট খেলার প্রয়োজন ছিল না। নাজমুল শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। দ্রুত রান তোলার মানসিকতা না থাকলে হয়তো আক্রমণাত্মক শট না খেলে সেই বলটি ছেড়ে খেলতেন নাজমুল। কিন্তু কোন ভাবনা থেকে সেই বলটি ড্রাইভ করতে গেলেন নাজমুল, সেটি বোঝা মুশকিল।

মাত্র ৪ রান করে আউট হয়ে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন।
ছবি: প্রথম আলো

দ্রুত উইকেট পতনের পরও থামেনি বাংলাদেশের আগ্রাসী ব্যাটিং। তামিম চালিয়ে গেলেন ব্যাট। পয়েন্টে কাট শট খেললেন চারের জন্য। একবার বল গেল স্লিপের মাথার ওপর দিয়ে। স্পিনারের বিপক্ষে ক্রিজ ছেড়ে ছক্কাও মেরেছেন। তবে আক্রমণাত্মক শটে যে আউট হওয়ার ভয় আছে, সেটি আঁচ করা যাচ্ছিল মিড উইকেটে ফ্লিক করে মারা শটে। তামিম এই অঞ্চলে দুটি চার মেরেছেন, এর একটিতে বল গেছে বাতাসে। কখনো বল গেছে ফিল্ডারের ডানে, কখনো বাঁয়ে। ফিল্ডারের নাগালে বলটি যাওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত তা–ই হলো। আলজারি জোসেফের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ঠিক শর্ট মিড উইকেটেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তামিম।

অধিনায়ক মুমিনুল হক ক্রিজে এসে আপার কাটে চার মারেন। এরপর একই জায়গা দিয়ে বল মাটিতে নামিয়ে চার মারেন। বোলার আলজারি তখন দুশ্চিন্তায়। এ কী হচ্ছে, ভালো বলও চার মারছে! একই অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেন গ্যাব্রিয়েলও। এক ওভার পরই গ্যাব্রিয়েলকে ফ্লিক করে আরেকটি চার মারেন মুমিনুল। আরেক ওভার পর আবার বাউন্ডারি, এবার শরীরঘেঁষা বলটিতে ব্যাট ছুঁইয়ে চার মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে ইনিংসটি আর লম্বা হয়নি মুমিনুলের। রাকিম কর্নওয়ালের অফ স্পিনে কাট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

অধিনায়ক মুমিনুল হকও আউট হয়েছেন রানের নেশায় আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে।
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের ইনিংসের বয়স তখন মাত্র ১৫ ওভার! দলের রান ৬৯। রানরেট প্রায় ৫ ছুঁই ছুঁই। তা রানরেট যতই হোক, এই রান তুলতেই বাংলাদেশের চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফেরত গেছেন। চার ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন রান তোলার নেশায় আক্রমণাত্মক শট খেলে। দেখে মনে হবে না বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দিনের খেলা খেলছে।

দিনের বাকি সময়টা আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম খেলেছেন টেস্ট যেভাবে খেলা উচিত সেভাবেই। ফলাফল, দিন শেষে দুজনই অপরাজিত ছিলেন। মুশফিক-মিঠুনে ৩৬ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ করেছে ১০৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের প্রথম ইনিংসে করেছে ৪০৯ রান।