বর্ণবাদের বুদ্বুদ উঠছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে। সাবেক ক্রিকেটার আজিম রফিকের পর দুই অশ্বেতাঙ্গ আম্পায়ার দাবি করেছেন তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের শিকার। যুক্তরাজ্যের সরকারও ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কাছে এ নিয়ে ব্যাখ্যা দাবি করেছে। আর এমন সময় ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মঈন ‘কসম কেটে’ দাবি করলেন তিনি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কখনোই ইংল্যান্ডে বর্ণবাদের শিকার হননি।
গত মঙ্গলবার সাবেক আন্তর্জাতিক আম্পায়ার জন হোল্ডার ও উঠতি আম্পায়ার ইসমাইল দাউদ দাবি করেন গায়ের রঙের কারণে খুব বেশি ম্যাচে তাঁরা আম্পায়ারিং করতে পারছেন না। হোল্ডার বলেন, অনেক অশ্বেতাঙ্গ আম্পায়ার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের আম্পায়ার প্যানেলে ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনে আগ্রহ দেখিয়েও খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। উস্টারশায়ারের সাবেক উইকেটকিপার দাউদ বলেন, ইসিবির বড় কিছু কর্মকর্তার সামনেই তাঁর সঙ্গে বর্ণবাদী শব্দ ব্যবহার করে কথা বলেছিলেন একজন। এর আগে আজিম রফিক অভিযোগ করেন ইয়র্কশায়ারে খেলার সময় বর্ণবাদী বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের হয়ে খেলছি ছয় বছর হয়ে গেল। সব সময়ই স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলাম, সব সময়ই মনে হয়েছে অন্য সবার মতো আমিও একজন।
মঈন আলী এর আগে একবার বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়ার কথা বলেছিলেন। ২০১৫ সালে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার দাবি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এক ক্রিকেটার তাঁর সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করেছেন। তবে ওই ক্রিকেটারের নাম বলেননি মঈন। এবার সেই মঈন দাবি করলেন পুরো ক্যারিয়ারে ইংলিশ ক্রিকেট অঙ্গনে তাঁকে কখনোই বর্ণবাদের শিকার হতে হয়নি।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। সিরিজের আগে গতকাল কেপটাউনে ইংলিশ ক্রিকেটের বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলেছেন ধর্মভীরু মঈন, ‘আমি বুকে হাত দিয়ে সত্যি সত্যিই বলতে পারি আমার কখনোই এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে রান করলে কিংবা উইকেট নিলে খেলা যাবেই। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলছি ছয় বছর হয়ে গেল। সব সময়ই স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলাম, সব সময়ই মনে হয়েছে অন্য সবার মতো আমিও একজন।’
তবে তাঁর মতো সবাই যে ভাগ্যবান নয় সেটিও বলতে ভোলেননি ৩৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার, ‘আমি নিশ্চিত এমন অভিজ্ঞতা (বর্ণবাদের শিকার) অনেকের আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি এগুলো শিগগিরই দূর হয়ে যাবে। সবকিছু পর্যালোচনা হচ্ছে, আর ইসিবি এসব বিষয় নিয়ে কাজও করছে। কেউ তো নিখুঁত নয়, তবে এ নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আমার বিশ্বাস অনেক কিছুই করা হবে সবকিছু ঠিক করার জন্য।’
ইংল্যান্ডের হয়ে ঠিক ২০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মঈন কথা বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও। একাদশে এখন আর জায়গা নিশ্চিত নয় তাঁর। গত বছর তো টেস্ট দল থেকেও বাদ পড়েছিলেন। মঈন চাচ্ছেন দলে নিয়মিত হতে, ‘আমি জানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অত বেশি দিন নেই। এটা অবশ্য ফিটনেস ও ফর্মের ওপর নির্ভর করে। তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব নিজেকে ওই পর্যায়ে রাখতে।’
টেস্ট ক্রিকেটে ফেরাটাকেই সবচেয়ে বড় কাজ ভাবছেন মঈন, ‘টেস্ট ক্রিকেট থেকে যথেষ্ট বিরতি পেয়েছি। আমার মনে হয় যখন তরুণ ছিলাম, টেস্ট খেলার ক্ষুধাটা অনেক বেশি ছিল। বছর দেড়েক আগে ওই খিদে অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবে গত ছয় মাসে মনে হয়েছে ক্ষুধাটা আবার ফিরে এসেছে। আমি টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চাই, চাই যত পারি খেলতে।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ খেলবে ইংল্যান্ড। দুটি সিরিজই তিন ম্যাচের।