মরগানদের বৈষম্যমূলক পোস্ট ‘দেখছে’ কলকাতা নাইট রাইডার্স

এউইন মরগান।ছবি: আইপিএল

অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওলি রবিনসনকে। আট বছর আগে জাতিবিদ্বেষী টুইট করার অপরাধে এক টেস্ট খেলার পরই এই পেসারকে বাদ দিয়েছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। রবিনসনের মতোই পুরোনো জাতিবিদ্বেষী টুইট বিপদে ফেলতে যাচ্ছে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও এউইন মরগানকে।

রবিনসনের কাণ্ডের পরই ইংলিশ ক্রিকেটারদের পুরোনো টুইট নিয়ে খোঁজ লেগেছে নেটিজেনদের। আর সে সুবাদেই ম্যাককালাম, মরগান ও জস বাটলারদের কিছু পুরোনো টুইট নজরে এসেছে। সেখানে ভারতীয়দের ইংরেজি ভাষার দক্ষতাকে নিয়ে তিনজনের রসিকতা দেখে ক্ষিপ্ত হয়েছেন অনেকেই। আর সে সুবাদে ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সও (কেকেআর) নড়েচড়ে বসেছে। দলটির খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে থাকা দুজনের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষী অভিযোগ ওঠা তো হেলাফেলা করার মতো বিষয় নয়!

নাইট রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী ভেঙ্কি মাইসোর বলেছেন, যেকোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধী তাঁরা।

বাটলার–মরগানরা বিপদে পড়তে পারেন।
ছবি: টুইটার

রবিনসন কাণ্ডের পর ইসিবি ভবিষ্যতে কোনো খেলোয়াড়কে দল ডাকার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অতীতে করা পোস্ট দেখবে বলে জানিয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা নারীবিদ্বেষী কোনো কিছুর ইঙ্গিত থাকলেই তাঁদের জন্য জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে বর্তমান আরেক খেলোয়াড়ের জাতিবিদ্বেষী পোস্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। এশিয়ানদের নিয়ে করা পোস্টের সময় ওই খেলোয়াড়ের বয়স ১৬ বছর ছিল, এ কারণে এখনো তাঁর নাম জানানো হয়নি। তবে তদন্ত শেষে খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ পর্যন্ত ব্যাপারটা শুধু ইসিবির মাথাব্যথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে কলকাতা নাইট রাইডার্স জড়িয়ে গেছে অন্যভাবে। দলটির কোচের দায়িত্বে আছেন নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। আর গত মৌসুম থেকে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এউইন মরগান।

ম্যাককালাম।
ছবি: আইপিএল

ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কোচের ভূমিকায় থাকা ম্যাককালাম ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ জস বাটলারের ব্যাটিং নিয়ে একটা টুইট করেছিলেন। টুইটে ভারতীয়দের কথা বলার ধরনকে নকল করেছিলেন ম্যাককালাম, ‘জস বাটলার স্যার, আপনি খুব ভালো ওপেনিং ব্যাটিং করেন (ইউ প্লে ভেরি গুড ওপেনিং ব্যাট)।’

ম্যাককালামের সে মজায় যোগ দিয়েছিলেন বর্তমান কেকেআর অধিনায়ক মরগান। সে টুইটে মরগানের মন্তব্য ছিল, ‘স্যার, আপনি আমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যাটসম্যান।’ ভারতীয়রা ইংরেজিতে কথা বলার সময় ‘স্যার’ যোগ করেন, এমন একটা ইঙ্গিত দিয়ে জাতিবিদ্বেষী আচরণ করেছেন দুজনই।

কলকাতার প্রধান নির্বাহীভেঙ্কি মাইসোর।
ছবি: টুইটার

বাটলারও কম যান না! ভারতীয় সমর্থকের ভাষা নিয়ে মজা করেছিলেন বাটলার, ‘স্যার, দারুণ ডাবল ১০০। দারুণ সুন্দর ব্যাটিং। আপনি আগুনে ফর্মে আছেন (ওয়েল ডান অন ডাবল ১০০ ম্যাচ। বিউটি ব্যাটিং। ইউ আর অন ফায়ার স্যার)।’ সে টুইটের নিচেই এ অঞ্চলের মানুষের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইকপ্রীতি নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন, ‘আমি সব সময় উত্তর দিই, স্যার। আমার মতো কেউ আপনাকে পছন্দ করে না (আই অলওয়েজ রিপ্লাই, স্যার। নো ওয়ান এলস লাইক মি লাইক ইউ)।’

পুরোনো সেই টুইটের ছবি আবার ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সবাই। তবে নিজের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় সংযত মন্তব্য করেছেন কলকাতার প্রধান নির্বাহী। ক্রিকবাজকে ভেঙ্কি মাইসোর বলেছেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি, তাতে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবগুলো প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। আপাতত জানাচ্ছি, নাইট রাইডার্স যেকোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ সহ্য করে না।’

মরগানদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আবার কার্তিককে অধিনায়ক করা হতে পারে।
ছবি: টুইটার

২০১৯ আইপিএলের মাঝপথে কলকাতার অধিনায়কের পদ থেকে সরে গেছেন দিনেশ কার্তিক। এরপর থেকেই মরগান দলটির অধিনায়কত্ব করছেন।

এদিকে ইসিবি মরগান ও বাটলারের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে বোর্ডের মুখপাত্র বলেছেন, ‘গত সপ্তাহে (রবিনসনের) আপত্তিকর টুইটের ব্যাপারে জানার পর অন্য আরও অনেকের পুরোনো কিছু পোস্ট নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন। এ খেলায় বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। এবং দরকারি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এখন যেহেতু বোঝা যাচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট ঘটনার চেয়ে অনেক বড় বিষয়টি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পুরোনো পোস্ট কীভাবে সামলাবে, এ নিয়ে আলোচনা করবে বোর্ড। সব তথ্য নিয়ে অপরাধগুলো আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে। বাড়তি বিবৃতি দেওয়ার আগে আমরা বোর্ডের সবকিছু বিবেচনা করে দেখব।’