মানকাডিং এখন থেকে ‘ফেয়ারপ্লে’, এমসিসির বড় সিদ্ধান্ত

মানকাডিং এখন থেকে বিতর্কিত কিছু নয়ফাইল ছবি

তাহলে ভিনু মানকড় ভুল কিছু করেননি। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় ক্রিকেটারের ‘অখেলোয়াড়সুলভ’ আচরণের কড়া সমালোচনা করেছিল অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম। মানকড় কিছুই করেননি। অস্ট্রেলিয়া-ভারত টেস্টে বোলিংয়ের সময় ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান বিল ব্রাউনকে আউট করেছিলেন। তিনি সফরের একটি প্রস্তুতি ম্যাচেও এমনভাবে আউট করেছিলেন আরেক ব্যাটসম্যানকে। সেই ‘অখেলোয়াড়সুলভ’ আচরণেরই যে স্বীকৃতি দিল এমসিসি।

মানকড় সেদিন আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই করেননি। কিন্তু ক্রিকেটে যে ওই ভাবে কাউকে আউট করাকে ‘চেতনার পরিপন্থী’ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। ব্যস! সেদিন থেকে এভাবে কাউকে আউট করাকে বলা হয় ‘মানকাডিং’। ইংরেজিতে মানকড়ের নামের বানান Mankad. সেখান থেকেই ‘মানকাডিং’।

১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ওয়ানডেতে পিটার কারস্টেনকে ‘মানকাডিং’ করেছিলেন কপিল দেব
ইউটিউব

সেই মানকড়েরই শাপমুক্তি ঘটতে চলেছে ৭৫ বছর পর। ‘ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী’ এ আউটকে সাধারণ রানআউটের স্বীকৃতিই দিতে চলেছে ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। ক্রিকেটের আইনের ৪২.১৫ ধারা অনুযায়ী ‘মানকাডিং’ সব সময়ই বৈধ আউট। নয়তো বোলার বোলিং করার সময় নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের ব্যাটসম্যান যে উইকেটের মধ্যভাগে গিয়ে বসে থাকত। এমসিসির স্বীকৃতির পর এটি নিয়ে এখন হয়তো ‘চেতনা’র কচকচানি বন্ধ হবে। ভিনু মানকড়ের আত্মা শান্তি পাবে।

গত সপ্তাহে আয়োজিত এমসিসির এক সভায় প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে মানকাডিংকে সাধারণ রানআউটের পর্যায়ভুক্ত করার। এ ছাড়া আরও কিছু বদল আনা হয়েছে ক্রিকেটের আইনে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এটি চালু করা হবে বলে জানা গেছে।

এমসিসির এই মানকাডিং নিয়ে নিয়ম বদলের অর্থ হলো, নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটসম্যান বোলিংয়ের আগে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এলে তাঁকে রানআউট করা যাবে সহজেই। তখন এটিকে আর কেউই ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী বলবেন না। এত দিন মানকাডিংকে ‘আনফেয়ার প্লে’ (আইন-৪১) হিসেবে ধরা হতো। এখন থেকে এটি বিবেচিত হবে ‘ফেয়ার প্লে’ হিসেবে। এটিকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে রানআউট হিসেবে (আইন ৩৮)।

ভিনু মানকড়, ক্রিকেটের অদ্ভুতুড়ে এই রান আউটের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তাঁর নাম। ফাইল ছবি
ছবি: সংগৃহীত

ক্রিকেটের অনেক সাবেক তারকা ও বোদ্ধারা দীর্ঘদিন ধরে মানকাডিংকে ‘ফেয়ার প্লে’ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানও। ১৯৪৭ সালে ভিনু মানকড়ের সেই টেস্টে তিনি অস্ট্রেলীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। মানকড়ের খেলোয়াড়ি মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সমালোচনাও করেছিলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মানকাডিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। কপিল দেব, গ্রেগ চ্যাপেলরা মানকাডিংয়ের জন্য হয়েছেন সমালোচিত। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার সচিত্র সেনানায়েক দুবার মানকাডিং করেন ইংল্যান্ডের জস বাটলারকে। সেটি নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। এর আগে ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার লাহিরু থিরিমান্নেকে মানকাডিং করেছিলেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এই অশ্বিনই আইপিএলে মানকাডিং করে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন।