মাশরাফির শেষ দেখছেন তাঁরাও

ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দলে তাই জায়গা হয়নি মাশরাফির। নির্বাচকদের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলছেন সাবেকরাও।

ফারুক আহমেদ, সরওয়ার ইমরান, খালেদ মাহমুদ

বোলিংয়ের সময় শরীর এখনো সোজা থাকে, ভারসাম্যটাও দারুণ। সিম পজিশন নিঃসন্দেহে দেশসেরা। পাঁচ ওভারের স্পেল করে ফেলেন, তবু সাদা বলের পেটে তেমন আঘাতের দাগ পড়ে না। সব বল সিমে গিয়েই আঘাত করে। সব মিলিয়ে হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বলটা এখনো তাঁর কথা শোনে। কিন্তু ক্রিকেটীয় বাস্তবতা বলেও তো একটা কথা আছে। ৩৭ বছর বয়সী মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সেই বাস্তবতা চিন্তা করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দলে রাখা হলো না।

ওয়ানডের সফল বোলার মাশরাফিকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে দেখছেন পেসারদের প্রিয় কোচ সরওয়ার ইমরান। কয়েক দিন আগে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে দেখেছেন প্রতিপক্ষ দলের কোচ হিসেবেও। এখনো বোলার মাশরাফির দক্ষতায় কোনো খুঁত দেখেন না তিনি। তবে প্রসঙ্গটা যখন বয়স আর ফিটনেসের, ক্রিকেটীয় বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পক্ষে সরওয়ার ইমরানও। নির্বাচকদের সিদ্ধান্তকে সঠিকই মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ, ‘মাশরাফির ম্যাচ ফিটনেসে ঘাটতি আছে, সেটা তো বোঝাই যায়। চোটের সমস্যা তো আছেই ওর। তারপরও বোলিং ভালো করে। তবে এভাবে চলতে থাকলে নতুনরা সুযোগ পাবে কীভাবে! সে জন্য নির্বাচকদের সিদ্ধান্তকে আমি সঠিকই বলব।’ তাঁর শেষ কথা, ‘হয়তো দুই বছর পর মাশরাফি আর ক্রিকেট খেলবে না। সে জন্য এখন থেকেই নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত।’

নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তায় এখন শুধু ২০২৩ বিশ্বকাপ। আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে মাত্র ৩৩টি ওয়ানডে ম্যাচ পাবে বাংলাদেশ দল। ভারত বিশ্বকাপের জন্য নতুনদের গড়ে নিতে টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে তাই খুব বেশি ম্যাচ আসলেই নেই।

সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদের কাছেও তাই মাশরাফিকে নিয়ে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনাটা সঠিক মনে হয়েছে। তাঁর মতে, সামনে তাকানোর এখনই সঠিক সময়। ‘বোর্ড চেয়েছে বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবতে। আর মাশরাফিরও একসময় যেতেই হবে। ও যদি খেলে যেতে চায়, তাহলে তো নতুন কেউ তৈরি হচ্ছে না। নতুন কেউ এসে যদি শুরুতে খারাপও করে, তাহলেও সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।’

তবে মাশরাফির ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছায় তিনি কোনো সমস্যা দেখেন না। বরং ঘরোয়া ক্রিকেটে মাশরাফি থাকার ভালো দিকই দেখেন তিনি, ‘অনেক ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে গেছেন। কারণ, খেলাটার প্রতি ভালোবাসা। মাশরাফি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেললে যে দলে খেলবে, সেই দল উপকৃত হবে। তার অভিজ্ঞতার কারণে তরুণেরাও উপকৃত হবে।’

কয়েক দিন আগেই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে খেলায় ফিরে এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে নিজের সামর্থ্যটাকে যেন নতুন করে জানাতে চেয়েছেন মাশরাফি। অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে মাশরাফি বরাবরই বিশেষ কিছু। পারফরম্যান্স তো বটেই, তাঁর উপস্থিতিই উজ্জীবিত করে দলকে।

আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদের প্রত্যাশা, ঘরোয়া ক্রিকেটে আগের মতোই উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকবে মাশরাফির, ‘এতগুলো বছর ও সম্মানের সঙ্গেই খেলেছে। চ্যালেঞ্জটা তো মাশরাফি নেবেই। মাঠে পারফর্ম করেই টিকে থাকবে আশা করি। টি-টোয়েন্টিতে তো খুব ভালো করল। সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ হবে। আশা করি, ৫০ ওভারের খেলাটাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেকে সে আরও মেলে ধরবে।’

সব লড়াইয়েরই শেষ আছে। আজ হোক, কাল হোক; মাশরাফিকেও একদিন স্পাইক জোড়া তুলে রাখতে হবে। মাহমুদের বিশ্বাস, পেশাদার ক্রিকেটের সেই কঠিন সিদ্ধান্তটাও তিনি সঠিক সময়েই নেবেন। তাঁর কথায়, ‘একটা না একটা সময় তো খেলা ছাড়তেই হবে। শুধু মাশরাফি নয়; সাকিব, তামিম, মুশফিকদেরও একদিন খেলা ছাড়তে হবে। এটাই নিয়ম। কেউ চলে যায়, নতুনরা আসে।’

নেতৃত্বে, পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক কিছুই দিয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু একসময় না একসময় তো থামতেই হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এবার বুঝি সত্যিই বেজে উঠল মাশরাফির বিদায়ের বিউগল।