মুশফিকের ‘আয়না’য় ভরসা রাখুক বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিমছবি: বিসিবি

আয়নাতত্ত্ব দিয়ে বেশ একটা হইচই ফেলে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। দুবাইয়ের বাংলাদেশি সমাজ থেকে শুরু করে ফেসবুকে ভেসে বেড়ানো দেশ–বিদেশের পোস্টে শুধু আয়না আর আয়না। মুশফিক আয়নায় কাদের মুখ দেখতে বলেছেন, সেই কৌতূহলের পাশাপাশি অনেকে তাঁর নামের পাশেও জুড়ে দিচ্ছেন ‘আয়না’ শব্দটি। কারও কাছে মুশফিক ‘আয়নাবাজ’, কারও কাছে ‘আয়নাপুরুষ’।

পরশু শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর মুশফিক বলেছেন, ক্রিকেটারদের সমালোচনা যাঁরা করেন, তাঁদের উচিত আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখে নেওয়া। অর্থাৎ আপনি আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখবেন। সেটা ঠিক থাকলে পরে অন্যের চেহারা নিয়ে কথা বলবেন। এরপর থেকেই ‘আয়না’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য ‘টক অব দ্য ক্রিকেট’।

বাংলাদেশ দল
ছবি: আইসিসি টুইটার

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আবহে অবশ্য আয়নার আলোচনা তেমন কোনো গুরুত্ব বহন করছে না। বিশ্বকাপ আপাতত ব্যস্ত পাকিস্তানের কাছে ভারতের ১০ উইকেটে হারের ঘটনা হজম করতে। দুবাইয়ের আকাশ–বাতাসে শুধু একটাই গুঞ্জরন— বিশ্বকাপে ভারতের এ কেমন শুরু! আনন্দের আতিশয্যে অনেক পাকিস্তানি তো বিরাট কোহলির দলকে নিয়ে রসিকতা করতেও ছাড়ছেন না। ট্যাক্সিচালক পেশোয়ারের আবদুর রহমান কাল হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘ধুর, টি–টোয়েন্টি ম্যাচ এ রকম একপেশে হলে হয় নাকি! একটু উত্থান–পতন থাকবে না!’

আবদুর রহমানের কথায় যেটি রসিকতা হয়ে এসেছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর বিশ্বকাপে নিজেদের বাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ দল চাইছে সেটাকেই বাস্তব করে তুলতে। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া...একটার পর একটা বড় প্রতিপক্ষ সামনে আসবে আর বাংলাদেশ তাদের চমকে দিতে থাকবে। ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপে পাকিস্তান যে ঝাঁকুনিটা দিয়েছে, সেটিই অব্যাহত রাখতে চায় মাহমুদউল্লাহর দল।

গত ম্যাচে ৩২ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক
ছবি: বিসিবি

কাল বিকেলে আবুধাবিতে সে লক্ষ্য নিয়েই ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড যদিও গত শনিবার এ মাঠেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ৫৬ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে, তবু বাংলাদেশ কম্পিত হচ্ছে না। ইংল্যান্ড কীভাবে জিতল সেটিতে নয়, ৫৬ রান তাড়া করতে গিয়েও যে তারা ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলল, বাংলাদেশের দৃষ্টি মূলত সেদিকে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করছে আসলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেনের বোলিং। সেদিন ইংল্যান্ডের ৪ উইকেটের দুটিই নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

বাঁহাতি স্পিন বাংলাদেশের বোলিংয়েরও মূল শক্তি। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কালও জুটি বাঁধতে দেখা যেতে পারে নাসুম আহমেদকে। তা ছাড়া দুবাইয়ে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচেও বোঝা গেছে, আইপিএল থেকে শুরু করে টানা খেলার মধ্যে থাকায় আমিরাতের উইকেটগুলো এখন ক্লান্ত। ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে খুব বেশি আদুরে ভাব জমাবে না এসব উইকেট। আর কম রানের ম্যাচ মানেই যেহেতু ফলাফলটা যেকোনো দিকে হেলে পড়ার সুযোগ, বাংলাদেশের সম্ভাবনা তাতে বাড়ছে বই কমছে না।

নাঈম
ছবি: বিসিবি

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুটি ফিফটি করে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। সঙ্গে লিটন দাসের ব্যর্থতায় সমালোচনার কালো মেঘ কিছুটা হলেও সরে গেছে তাঁর ওপর থেকে। সেই নাঈমেরও মনে হচ্ছে, উইকেটের এমন আচরণ হয়তো পক্ষে আসবে বাংলাদেশ দলের। কাল বিশ্রামের দিনে দল থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এই ওপেনার বলছিলেন, ‘দুবাই আর ওমানের কন্ডিশন প্রায় একই রকম। অনেক দিন ধরে এখানে থাকায় এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে আমরা অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন তিন বিভাগেই ভালো করতে পারি।’

নাঈমের বলা শেষ কথাটা সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেটেই সবচেয়ে বেশিবার বলা কথা। যেকোনো ম্যাচের আগেই ক্রিকেটার–কোচদের কথায় ঘুরেফিরে আসে তিন বিভাগেই ভালো করার প্রসঙ্গ। তিন বিভাগ মানে বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং। টি–টোয়েন্টি ম্যাচে যে এই তিন বিভাগই আরও বেশি করে নির্ভুল রাখতে হয়, সেটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেই বাংলাদেশ দল আরও একবার শিখেছে। নাঈম–মুশফিকের ফিফটিতে ব্যাটিংটা হয়েছিল ভালো, বোলিংও একেবারে খারাপ হয়নি। তবু ১৭১ রান করেও বাংলাদেশের হারের সবচেয়ে বড় কারণ তো লিটনের দুটি সহজ ক্যাচ ছাড়াই। সেদিন ম্যাচ শেষে মুশফিক বলেছেন, কাল নাইমও বললেন—কিছু ভুলের কারণেই ম্যাচটা হারতে হয়েছে।

ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন
ছবি: এএফপি

সেই ভুল যে লিটনের ক্যাচ ফেলাই, তা ভেঙে না বললেও চলে। তারপরও যদি তাতে কারও সন্দেহ থাকে, তাহলে মুশফিকের আয়নাতত্ত্ব তো আছেই। লিটন চাইলে আয়নাতে একবার দেখে নিতে পারেন সেই দুটি মুহূর্ত।

শুধু লিটন কেন? ভুলত্রুটি শোধরাতে চাইলে সমালোচনায় কান না দিয়ে গোটা বাংলাদেশ দলই পারে আয়নায় ভরসা রাখতে। মুশফিকের আয়নাতত্ত্ব তখন শুধু সমালোচকদের সমালোচনাকেই বিশুদ্ধ করেব না, ক্রিকেটারদের খেলাটাকেও করতে পারে নির্ভুল।