মুশফিকের ফেরার দিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ১৭১

৫৭ রানের ইনিংস খেললেন মুশফিকছবি: বিসিবি

সাকিব আল হাসান আজ বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। কিন্তু তাতে কি! আজ জ্বলে উঠল বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যাট। নির্দিষ্ট করে বললে মোহাম্মদ নাঈম আর মুশফিকুর রহিম। নাঈমের আরও একটি ফিফটি, আর মুশফিকের ফর্মের ফেরা—দুইয়ে মিলে সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংটাও হলো দুর্দান্ত। শারজায় ২৬ বছর খেলতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭০ রান তুলে লঙ্কানদের বড় এক চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

শারজার উইকেট মিরপুরের মতো মনে হয়নি আজ। প্রথম থেকেই বল ব্যাটে এসেছে। কিন্তু টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে কি একটু ভুলই করে ফেলল শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য আগেই ব্যাটিং করতে চেয়েছিলেন। টস হারাটা তাই তাঁর জন্য বিশেষ কিছু হয়নি। বল ব্যাটে এল বলেই নাঈম আজ দুর্দান্ত খেললেন। খুব একটা দর্শনধারী ইনিংস নয়, কিন্তু খেললেন কার্যকর এক ইনিংস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তুলে নিলেন তাঁর দ্বিতীয় ফিফটি। একদিক ধরে রেখে বাংলাদেশের ইনিংসকে দিয়েছেন দারুণ এক নির্ভরতা।

বাংলাদেশের ইনিংসের মেরুদণ্ড নাঈম–মুশফিক জুটি
ছবি: বিসিবি

ব্যাটিংয়ে নেমে আজ ওপেনিং জুটিটা দারুণ হলো। ৪১ রান তুললেন দুই ওপেনার নাঈম আর লিটন। পাওয়ার প্লে’তে উঠল সবচেয়ে বেশি রান। লিটন অবশ্য নাঈমের মতো খেলতে পারেননি। যদিও প্রতিশ্রুতি ছিল ইনিংসটা কে বড় করার। কিন্তু পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারের পঞ্চম বলে কুমারার বলে ওয়াইডিশ মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন লিটন। আউট হওয়ার আগে তিনি করেছেন ১৬ বলে ১৬।

লিটন ডাগ আউটে ফেরার পর সাকিব এসেছিলেন বড় ভরসার নাম হয়ে। কিন্তু ৭ বলে ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। তবে দুটি চার মেরেছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই। কিন্তু করুনারত্নের বলে বোল্ড হয়েছেন বেশ অদ্ভুতভাবেই। তাঁর ফেরাটা যদি অশনিসংকেত হয়ে থাকে, তাহলে সেটিকে ভুল প্রমাণ করতে বেশি সময় নেননি নাঈম আর মুশফিকুর রহিমের চতুর্থ উইকেট-জুটি। এ জুটিতে দুজন তুললেন ৫১ বলে ৭৩। বড় সংগ্রহের দিকে অনেকটা পথই বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন তাঁরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরু থেকে একেবারেই ফর্মে ছিলেন না মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তিনি আজ প্রমাণ করেছেন কতটা বড় মঞ্চের ক্রিকেটার তিনি। একেবারে ঠিক সময়েই জ্বলে উঠল তাঁর ব্যাট।

নাঈম পেয়েছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি
ছবি: বিসিবি

নাঈম ৫২ বলে ৬২ রান করেছেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার। তবে তাঁর আক্ষেপ থাকবে, ইনিংসের একেবারে শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে। শেষ দিকে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। বিনুরা ফার্নান্দোর বলে তুলে মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বল তিরিশ গজ পার করতে পারেননি। আকাশে উঠে যাওয়া তাঁর শটটি সহজেই লুফে নিয়েছেন ফার্নান্দো।

মুশফিককে নিয়ে আলাদা করেই বলতে হবে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং সমালোচিত হয়েছিল। ওমানের বিপক্ষে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো আট নম্বরে। শেষবার মুশফিক কবে এত নিচে ব্যাটিং করেছেন, সেটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। পাপুয়া নিউগিনির মতো দুর্বল দলের বিপক্ষেও তাঁর ব্যাট হাসেনি। কিন্তু মুশফিক আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মনে করিয়ে দিলেন সেই চিরন্তন আপ্ত বাক্য, ‘ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট’। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য প্রথম ফিফটি পেয়েছেন আজ তিনি। ২৯ ম্যাচ পর তাঁর ফিফটি পাওয়াটাও বেশ বিস্ময়কর একটা ব্যাপার। তবে গুরুত্বপূর্ণ দিনেই তিনি পেয়ে গেলেন ২০ ওভারের বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম ফিফটিটি।

ওপেনিংয়ে এসেছে ৪১ রান
ছবি: বিসিবি

মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৭ বলে ৫৭। মেরেছেন ৫টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা। শারজা স্টেডিয়ামে উইকেটের দুই দিকের পরিধি কিছুটা ছোট। অভিজ্ঞ মুশফিক হোমওয়ার্কটা আজ ভালোই করে এসেছিলেন। ইনিংসের শুরুতে দুটি স্লগ সুইপে ছক্কা মেরেই বুঝিয়ে দেন ভালো কিছু করতেই মাঠে নেমেছেন তিনি। শেষ অবধি উইকেটে টিকে থেকে দলের সংগ্রহকে একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাঁর ইনিংসটিই।

নাঈমের বিদায়ের পর আফিফ হোসেন নেমেছিলেন। কিন্তু তিনি চাহিদা মেটাতে পারেননি। তবে মাহমুদউল্লাহ শেষ দিকে মুশফিকুর রহিমকে ভালোই সঙ্গ দিয়েছেন। ৫ বলে ১০ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। যে স্কুপ মারা নিয়ে মুশফিকের এত সমালোচনা, সেই স্কুপটি মেরেই দলের সংগ্রহ ১৭০ পার করে দেন তিনি। আজ নিশ্চয়ই এই স্কুপ নিয়ে মুশফিকের সমালোচনা কেউ করবেন না।