মেদ ঝরানোর পুরস্কার তুলে নিলেন মায়াঙ্ক

ডাবল সেঞ্চুরির পর মায়াঙ্ক আগারওয়াল। করতালি দিচ্ছেন পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। ছবি: এএফপি
ডাবল সেঞ্চুরির পর মায়াঙ্ক আগারওয়াল। করতালি দিচ্ছেন পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। ছবি: এএফপি
>বিশাখাপট্টনাম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ভারতের ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল। দ্বিতীয় দিনে ৭ উইকেটে ৫০২ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে ডাবলে রূপ দিলেন মায়াঙ্ক

ভিনু মানকড়-পঙ্কজ রায় (৪১৩ রান), বীরেন্দর শেবাগ-রাহুল দ্রাবিড় (৪১০ রান) ও রোহিত শর্মা-মায়াঙ্ক আগারওয়াল (৩১৭ রান)। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের তিন ওপেনিং জুটি। এর মধ্যে শেষ জুটিটি দেখা গেল আজ বিশাখাপট্টনাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে। রোহিত শর্মা ডাবল সেঞ্চুরির সুবাস পাওয়ায় দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে তাঁকে নিয়েই ছিল সবার আলোচনা। রোহিত পারবেন তো? শেষ পর্যন্ত রোহিত না পারলেও (১৭৬) মায়াঙ্ক পেরেছেন। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে রূপান্তরিত করেছেন ডাবল-এ!

টেস্টে তাঁর অভিষেক গত বছর। বিশাখাপট্টনাম টেস্টের আগে খেলেছেন মাত্র ৪ ম্যাচ। এই ৪ ম্যাচে তাঁর স্কোরগুলো দেখুন—৭৬, ৪২, ৭৭, ৫, ১৬, ৫৫, ৪। সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েছেন তিনবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। আজ প্রথম সেশনে সেঞ্চুরি পাওয়ার পর অনেকেই বুঝে নিয়েছেন, মায়াঙ্ক শুধু সেঞ্চুরিতে সন্তুষ্ট হওয়ার পাত্র নন। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ইনিংস গড়ায় খ্যাতি কামানো এ ব্যাটসম্যান টেস্টেও দেখালেন সেঞ্চুরিকে কীভাবে ‘ডাবল’ বানাতে হয়। একাগ্রতা ও মনঃসংযোগে ২০৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়িয়েছেন মায়াঙ্ক। পরের ১০০ রান তুলেছেন ১৫৪ বলে। শেষ পর্যন্ত ৩৭১ বলে ২১৫ রান তুলে আউট হন ২৮ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান।

টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় ওপেনারদের এমন দিন খুব কমই এসেছে। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো কোনো ম্যাচে ন্যূনতম ১৫০ প্লাস করে রান করল ভারতের ওপেনিং জুটি। মুরালি বিজয়-শিখর ধাওয়ান জুটি তা করেছে দুবার, ভিনু মানকড়-পঙ্কজ রায় একবার। ভারতের খুব কম ব্যাটসম্যানই ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে রূপ দিতে পেরেছেন ন্যূনতম ডাবল-এ । মায়াঙ্কের আগে তিনজন প্রথমেই ডাবলের দেখা পেয়েছেন—দিলীপ সারদেশাই (২০০*, নিউজিল্যান্ড, ১৯৬৫), বিনোদ কাম্বলি (২২৪, ইংল্যান্ড, ১৯৯৩) ও করুণ নায়ার (৩০৩*, ইংল্যান্ড, ২০১৬)। টেস্টে এক দশকের মধ্যে প্রথম ভারতীয় ওপেনার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মায়াঙ্ক। সবশেষ ২০০৯ সালে শেবাগ ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। 

মায়াঙ্কের ডাবল সেঞ্চুরি খেলাটির প্রতি নিবেদন থেকে সফলতা তুলে নেওয়ার প্রমাণও। শরীরে মেদ জমায় তিন বছর আগে পেয়েছিলেন সতর্কবার্তা—অতিরিক্ত মেদ ঝরাও নতুবা ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ পাবে না। মায়াঙ্ক ঠিক এ নির্দেশ মেনেই জাতীয় দলে ঢোকার পর নিজের জায়গাটা নিশ্চিত করলেন ওপেনিং জুটিতে? এখনই তা নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি। তবে রোহিত-মায়াঙ্কের ৩১৭ রানের ওপেনিং জুটি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত করবে।

প্রোটিয়া বোলারদের আজ অবশ্য কালকের মতো ভুগতে হয়নি। দ্বিতীয় দিনে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চা–বিরতিতে গেছে দুই দল। তার আগে ভারতের প্রথম ইনিংসে যে ৭ উইকেট পড়েছে, সবগুলোই আজ তুলে নিয়েছেন প্রোটিয়া বোলাররা। ৭ উইকেটে ৫০২ রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার এ দলটি বোলিংয়ে কতটা অনভিজ্ঞ তা বুঝিয়ে দেবে পরিসংখ্যান। ভারতের মাটিতে প্রোটিয়াদের এ দলটির মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া বোলার তাদের ওপেনার ডিন এলগার (৬ উইকেট)! নিয়মিত বোলারদের দিয়ে কাজ না হওয়ায় ভারতের ইনিংসে ১১৯তম ওভার শেষে তাঁর হাতে বল তুলে দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। আস্থার প্রতিদান দিয়ে নিজের প্রথম ওভারেই এলগার তুলে নেন আগারওয়ালকে!

এদিকে, দিনের শেষে ধুঁকছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ ওভার ব্যাটিং করেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজাদের বলে হাঁসফাস করছে তারা। স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান তুলতেই ৩ উইকেট নেই। ফিরেছেন এইডেন মার্করাম থিউনিস ডি ব্রুইন ও ডিন পিয়েড। দুই উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন, একটি জাদেজা।