মোস্তাফিজুর রহমান

নাম

 মোস্তাফিজুর রহমান

জন্ম

 সেপ্টেম্বর ০৬, ১৯৯৫, সাতক্ষীরা

ধরন

 বাঁহাতি ফাস্ট বোলার

অভিষেক

 বনাম ভারত, জুন ১৮, ২০১৫

২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছিলেন একটি ফাস্ট বোলিং ক্যাম্পে অংশ নিতে। সেখানেই বেশ কয়েকজন কোচের নজরে পড়ে যান এবং ভর্তি হয়ে যান বিসিবির পেস ফাউন্ডেশনে। ২০১৩-১৪ মৌসুমেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুলনার হয়ে অভিষেক হয়ে যায় তাঁর। খুব দ্রুতই সুযোগ পেয়ে গেলেন ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্যও। সেখানে ৫ ম্যাচে ওভারপ্রতি পাঁচেরও কম রান দিয়ে ৯ উইকেট পাওয়ার পর হঠাৎ করেই ডাক আসে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলার জন্য।

সেই ছোট্ট সফরটা থেকে ফিরেই তিনি মন দিলেন তূণে আরও কিছু তীর যোগ করতে। এই সময়টাতেই আয়ত্ত করলেন নিজের মোক্ষমতম অস্ত্র, অফ কাটার। ফলাফলটাও পেলেন হাতেনাতে, মৌসুম শেষ করলেন ২৬ উইকেট সংগ্রহ করে; গড়টাও ঈর্ষণীয়, ১৯.০৮! হঠাৎই মিরপুর নেটে বোলিং করতে করতেই একদিন চোখে পড়ে গেলেন সদ্যই অধিনায়কত্ব পাওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজার। এরপর বেশি দিন আর অপেক্ষায় থাকতে হয়নি, পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘আনকোরা’ মোস্তাফিজুর রহমান ডাক পেয়ে যান টি-টোয়েন্টি সিরিজে। অভিষেকেই ২০ রানে ২ উইকেট নিয়ে প্রমাণ করেন নিজেকে, পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদিকে রীতিমতো নাচিয়েই ছেড়েছিলেন সেদিন।

কিন্তু সেরাটা দেখানো বাকি ছিল তখনো। কিছুদিন পরই বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত। ফাটকা খেললেন মাশরাফি, মিরপুরের মাঠে একাদশে নামালেন চার ফাস্ট বোলার। ফলাফলস্বরূপ, ওয়ানডে অভিষেকও হয়ে গেল মহাসমারোহে। কিন্তু অধিনায়কের আস্থার প্রমাণ দিতে হলে করতে হতো দারুণ কিছু। রেকর্ড গড়েই সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন মোস্তাফিজ। অভিষেক ম্যাচেই ৫০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দিলেন একাই। পরের ম্যাচে ছাড়িয়ে গেলেন প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্সকেও, এবার পেলেন ৪৩ রানে ৬ উইকেট! সবচেয়ে লক্ষণীয় ছিল তাঁর অ্যাকুরেসি, লাইন লেংথ এবং ভ্যারিয়েশন; ভারতের নামজাদা সব ব্যাটসম্যানরা তাঁর বল পড়তে পারলেন না! সিরিজ জিতল বাংলাদেশ, ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার। পরের সিরিজটাতেও দারুণ শুরু করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩ ওয়ানডেতে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট, পরে টেস্ট অভিষেকে প্রথম দিনেই ৩৭ রানেই তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ম্যাচ আর মাঠে গড়ায়নি বৃষ্টির কারণে। ওই বছরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর। ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে অংশগ্রহণ করেন মোস্তাফিজ, দেশে ফেরেন ৩ ম্যাচে নয় উইকেট নিয়ে। সঙ্গী হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২২ রানেই তুলে নেওয়া ৫ উইকেটের বিস্ময়কর পারফরম্যান্স। তিন ফরম্যাটে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের সৌজন্যে সুযোগ পেলেন আইপিএলে, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই ছিলেন ভরসার অন্য নাম।

কিছুটা ইনজুরি সমস্যা ছিল বটে, তবে তাতে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়েনি বিন্দুমাত্র। ১৭ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন, ডেথ ওভারে ব্যাটসম্যানদের দারুণ হুমকিতে ফেলেছিলেন বারবার। টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মাণ খেলোয়াড় হয়ে গেলেন। ডাক এল ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি লিগে, সেখানেও আলোড়ন! কিন্তু চড়া মূল্যও দিতে হলো। টানা খেলার ধকলেই কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে গেলেন মোস্তাফিজ। ছয় মাস তাকে বাইরে থাকতে হলো। ফেরার পর খেললেন নিউজিল্যান্ড সিরিজের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি, তবে সেই পরিচিত মোস্তাফিজকে খুঁজে পাওয়া গেল না। টেস্ট দলেও ছিলেন বটে, কিন্তু পুরোপুরি ফিট না থাকায় তাকে খেলানো হলো না।

পরে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে আবারও চলে গেলেন দলের বাইরে। ইনজুরি থেকে ফেরার পর শ্রীলঙ্কায় সব ফরম্যাটে আবারও আলো ছড়ালেন, দলের সাফল্যমণ্ডিত সেই সফরটাতে অবদান রাখলেন বেশ। এরপর মাত্র এক ম্যাচের জন্য আইপিএল খেলতে গেলেন, সেখানে থাকলেন উইকেটশূন্য। এরপর আয়ারল্যান্ড সফর, সেখানেও পারফর্ম করলেন ‘দ্য ফিজ’, এক ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ও হলেন। তবে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা নিতান্তই বাজে কাটল মোস্তাফিজের।

এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও ঠিক নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ছিলেন না, যদিও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট পেয়েছিলেন একবার। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটাও হয়তো ভুলেই যেতে চাইবেন তিনি, হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর দেশে ফিরেছিলেন গোড়ালির ইনজুরি নিয়ে। তবে সম্প্রতি আবারও ছন্দে ফিরেছেন মোস্তাফিজ। নিজের পুরোনো ঝলক দেখিয়েছেন গত এশিয়া কাপে। ত্রিদেশীয় সিরিজেও। বিশ্বকাপের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে নিয়মিত ১৪০ ছুঁই ছুঁই গতি তুলেছেন, স্বচ্ছন্দে নিজের স্টক ডেলিভারি করেছেন, লাইন লেংথ রেখে দারুণভাবে আটকে রেখেছেন ব্যাটসম্যানদের। মাশরাফি নিজেও তাই আশাবাদী, ২০১৯ বিশ্বকাপে পরিপূর্ণ মোস্তাফিজুর রহমানকেই পাওয়া যাবে। আর সেটা যদি সত্যি হয়, বাংলাদেশের জন্য সেটা যে অসাধারণ একটা ব্যাপার হবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত]