ম্যাক্সওয়েল-ক্যারির ব্যাটে অস্ট্রেলিয়ার অবিশ্বাস্য জয়

অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক দুই সেঞ্চুরিয়ান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (বাঁয়ে) ও অ্যালেক্স ক্যারি।ছবি: রয়টার্স

ইংল্যান্ড ইনিংসের প্রথম দুই বলেই উইকেট নিয়ে ম্যাচটি শুরু করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। কাল ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় ওয়ানডেটি শেষও করলেন অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার।

ম্যাচ ও সিরিজ জেতার সমীকরণ মেলাতে শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১০ রান। লেগ স্পিনার আদিল রশিদের করা ওভারের প্রথম বলটাকে লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে দিলেন মাত্রই ব্যাটিংয়ে নামা স্টার্ক। পরের দুবলে ১ রান করে নিলেন স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। চতুর্থ বলটায় সুইপ করে চার মেরেই দলকে ম্যাচ ও সিরিজ জিতিয়ে দিলেন স্টার্ক। তিন ম্যাচের সিরিজটা অস্ট্রেলিয়া জিতে গেল ২-১ ব্যবধানে।

শুরু ও শেষটা স্টার্কের, তবে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যালেক্স ক্যারি। ৩০৩ রানের লক্ষ্য, অস্ট্রেলিয়া ৭৩ রানেই হারিয়ে ফেলে প্রথম ৫ উইকেট। সেখান থেকেই অস্ট্রেলীয়রা জিতে গেল গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যালেক্স ক্যারির ২১২ রানের রেকর্ড ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ভর করে। ব্যাটে আগুন ঝরিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। তুলনায় ক্যারির ইনিংসটা এগিয়ে মন্থর গতিতেই।

সেঞ্চুরির পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
ছবি: রয়টার্স

৯০ বলে ১০৮ রান করেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ওয়ানডেতে এটি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ইনিংসও। ৪টি চারে ও ৭টি ছক্কা মারা ম্যাক্সওয়েল ফিরেছেন দলকে জয় থেকে ১৮ রান দূরে রেখে ৪৮ তম ওভারে। আদিল রশিদের বলে শর্ট থার্ড ম্যানে টম কারেনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ‘বিগ শো’ ম্যাক্সওয়েল।

পরের ওভারের শেষ বলে নেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া ক্যারি। জফরা আর্চারের বলে থার্ড ম্যানে মার্ক উডের দারুণ এক ক্যাচের শিকার এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ১১৪ বলে ১০৬ রান করেছেন ক্যারি। তাঁর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা সাজানো ৭ চার ও ২ ছক্কায়।

পাঁচ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডকে ঘরের মাটিতে ওয়ানডেতে প্রথম সিরিজ হার উপহার দিতে ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর্চার ওভারস্টেপিং না করলে ক্যারি তো ফিরতে পারতেন ৯ রানেই জুটিটাও ভাঙত ১৪ রানে। থার্ডম্যানে ক্যাচ উঠিয়েছিলেন ক্যারি, রশিদ নিয়েছিলেও ক্যাচ। কিন্তু দেখা গেল বিশাল এক নো বল দিয়ে ফেলেছেন আর্চার।

ম্যাক্সওয়েল-ক্যারিরা ভেঙেছেন ব্র্যাড হাডিন ও মাইক হাসির গড়া অস্ট্রেলীয় রেকর্ড। ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬৫ রান করেছিলেন দুজন।

‘আমার মনে হয়েছিল আমাদের হারানোর তো আর কিছু নেই। ৭০ রানে ৫ উইকেট হারালে মার নয় মর ছাড়া আর কী উপায় থাকে। নিজের টেকনিক ও সঙ্গীর ওপরে আস্থা রেখেই চালিয়ে গেছি।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল

দলকে ৭৩ রানে রেখে রানআউট হয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে যখন ফিরছিলেন মারনাস লাবুশেন, তখন কে চিন্তা করেছে এই ম্যাচ জিতবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল ভেবেছিলেন। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনার পথে ফিফটি পেয়েছেন ৪৮ বলে। ছক্কা মেরে ফিফটি ছোঁয়া ম্যাক্সওয়েল সেঞ্চুরিও ছুঁয়েছেন ছক্কা মেরে।

ম্যাচশেষে ম্যাক্সওয়েল বললেন পরিস্থিতিই তাঁকে বেশি আক্রমণাত্মক করেছে কাল, ‘আমার মনে হয়েছিল আমাদের হারানোর তো আর কিছু নেই। ৭০ রানে ৫ উইকেট হারালে মার নয় মর ছাড়া আর কী উপায় থাকে। নিজের টেকনিক ও সঙ্গীর ওপরে আস্থা রেখেই চালিয়ে গেছি।’

অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ম্যাক্সওয়েলকে, ‘মাঠের সব দিকেই খেলতে পারাটাই তাঁকে বেশি বিপজ্জনক বানিয়েছে। তাঁর দিনে কোনো বোলার তাঁকে সমস্যায় ফেলতে পারার মতো বোলার খুব বেশি নেই।’

ম্যাচ জেতার পর অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক।
ছবি: রয়টার্স
আর্চারের সেই নো বল।
সংগৃহীত ছবি

এর আগে ইংল্যান্ডের ইনিংসে সেঞ্চুরি পেয়েছেন জনি বেয়ারস্টো। শূন্য রানে প্রথম ২ উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক এউইন মরগানকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৬৭ রান যোগ করেন বেয়ারস্টো। এরপর পঞ্চম উইকেটে স্যাম বিলিংসকে নিয়ে আরও ১১৪ রানে জুটি। ১২৬ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১১২ রান করেছেন বেয়ারস্টো।

ইংল্যান্ডের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৭ রান বিলিংসের। ইংলিশদের রানটা ৩০০ পেরিয়েছে অবশ্য ক্রিস ওকসের ৩৯ বলে করা ৫৩ রানের সৌজন্যে।

করোনার সময়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট গ্রীষ্ম শেষ হলো এই ম্যাচ দিয়ে। গত জুলাই থেকে পাঁচটি সিরিজ খেলা ইংলিশরা হেরেছে মাত্র একটিতে।